নিজস্ব প্রতিবেদক »
টিসিবির ভারতীয় আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ার কারণে চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তে ক্রেতা মিলছে না। রাতের ব্যবধানের আড়তপর্যায়ে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম কমেছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।
বুধবার দুপুরে দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই আড়তে ঘুরে দেখা যায়, আড়তগুলোতে পর্যাপ্ত রয়েছে দেশীয় চাষের মুড়িকাটা, ফরিদপুরী ও মেহেরপুরের পেঁয়াজ। প্রায় গুদামে ভর্তি দেশীয় পেঁয়াজ। সকাল থেকে তেমন ক্রেতার চাপ দেখা যায়নি। ক্রেতারা টিসিবির পেঁয়াজমুখী হওয়ায় অনেক খুচরা ব্যবসায়ীরাও ঝুঁকি নিয়ে আড়ত থেকে তেমন পেঁয়াজ কিনতে দেখা যায়নি। বলা যায়, ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তগুলো। এদিকে পচনশীল পণ্য হওয়ায় কৃষক পর্যায় থেকে কেনা দরের চেয়েও কম দরে বিক্রি করতে চাইলেও ক্রেতা সংকট রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
কৃষক পর্যায় থেকে পেঁয়াজ সরবরাহ ও ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িতরা জানান, আড়তে ও অন্যান্য ব্যবসায়ীদের হাতে থাকা দেশী পেঁয়াজ দিয়ে আরও তিন মাস চাহিদা পূরণ হবে। এমন সময়ে সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার কারণে দেশীয় পেঁয়াজের বাজারে প্রভাব পড়তে পারে বলেও জানান আড়তদার ও কৃষকরা।
খাতুনগঞ্জের আড়তে পেঁয়াজ কিনতে এসে ফিরে যাওয়া খুচরা ব্যবসায়ী মো. শিমুল বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ টিসিবি ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করাতেই আমাদের থেকে ক্রেতারা তেমন পেঁয়াজ কিনছেন না। আর টিসিবিতে যে পেঁয়াজ ৪০ টাকায় বিক্রি করছে তা খাতুনগঞ্জে ৪৫ টাকা। আমরা যদি ৫০ টাকা বিক্রি করি কেউ কিনবে না। তাই আপাতত ঝুঁকি নিয়ে পেঁয়াজ কিনছি না। কিছুদিন খাতুনগঞ্জ আড়ত থেকে পেঁয়াজ কিনবো না।’
চাক্তাইয়ের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রবিউল আলম বলেন, ‘টিসিবি পেঁয়াজ বিক্রি করাই আমাদের বাজার ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে। সারাদিন একজন ক্রেতাও আসেনি। কিন্তু খাতুনগঞ্জের আড়তে এখনো ব্যবসায়ীরা ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৭ টাকার নিচে বিক্রি করছে না। টিসিবি যদি এভাবে বিক্রি করতে থাকে তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে দেশী পেঁয়াজের বাজারে। কারণ ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা বেশি।’
খাতুনগঞ্জের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, এতদিন যে মানের ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, তা গতকাল কেজিপ্রতি ২০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায়। আর যে মানের দেশী পেঁয়াজ ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল তা ২৫ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে কেজিতে ৩৫ টাকায়। আর খুচরা বাজারে কেজিতে বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়।
চাক্তাই আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফোরকান বলেন, ‘যখন আমাদের দেশে পেঁয়াজের সংকট ছিল, ভারত তখন পেঁয়াজ রপ্তানি করেনি। যখনই আড়তে পর্যাপ্ত দেশী পেঁয়াজ এসেছে, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি করলো। সরকারের পক্ষ থেকে টিসিবি বাজারে ৪০ টাকা দর নির্ধারণ করলে এতে খুচরা ক্রেতাদের জন্য সুবিধা হয়েছে কিন্তু খাতুনগঞ্জের আড়তেও তার প্রভাব পড়েছে। আড়তে এখন ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকায়।’
খাতুনগঞ্জের আড়তদার মো. মহসিন সওদাগর বলেন, ‘আড়তে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকলেও টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি হওয়াতেই সকাল পর্যন্ত একজন ক্রেতাও আসেনি। যে ভারতীয় পেঁয়াজ আমরা কিনেছি ৫২ টাকায় তা ৫ টাকা লোকসানে ৪৭ টাকায় বাজারে এসে ঠেকছে। টিসিবি পেঁয়াজ একচেটিয়া বাজার দখল করে নিয়েছে। যার ফলে ব্যবসায়ীদের একটা অংশ লাভবান হলেও দেশী পেঁয়াজের ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়বে।’
পাবনার পেঁয়াজ চাষি ও সরবরাহকারী মো. তমিজ উদ্দিন সরকার এর সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘মার্চ শুরুতে যে পেঁয়াজ সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে বাজারে বিক্রি করেছিলাম, মাঝামাঝি সময়ে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। তা এখন আড়তদারেরা ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকার বেশি দরে কিনছে না। আগে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মোকাম মালিকরা ২০০ মণ অর্ডার করতো এখন অর্ডার করে ২০ থেকে ৩০ মণ।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার থেকে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ খোলাবাজারে বিক্রি শুরু করেছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। আমদানি করা এসব পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪০ টাকা বিক্রি করছে সংস্থাটি।