কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ থেকে দেশ ও জাতিকে পূর্ণ নিরাপত্তা বা সুরক্ষা দেবার জন্যে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ৫ মে পর্যন্ত। সমতালে রাশিয়া ও চীন থেকে করোনা ভ্যাকসিন আমদানি বা প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশেই ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রচেষ্টাও চালাচ্ছে সরকার। চলমান বৈশ্বিক মহামারির অস্বস্তিকর এইসব তাড়নার মধ্যে বিশ্ববাসী প্রায় ভুলতেই বসেছিল যে, কোভিডের মতোই আরেকটি জীবন ও প্রকৃতিধ্বংসী ব্যাধি আমাদের খুব নীরবেই ঘিরে রেখেছে। আর তা হলো, শিল্পোন্নত দেশগুলো থেকে কার্বন নির্গমনের মাধ্যমে দেশে-দেশে জীববৈচিত্র্য বিলয়ের মারণযজ্ঞ। গত মঙ্গলবার দুইদিনের ‘ফরেন পলিসি ভার্চুুয়াল ক্লাইমেট সামিট’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রচারিত আগে ধারণকৃত বিবৃতিতে ঠিক এই বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে পাদপ্রদীপের আলোতে এনেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে জি-২০ (গ্রুপ অব টোয়েনি) দেশগুলোর প্রধান ভূমিকা কামনার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে প্যারিস চুক্তির কঠোর বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। শেখ হাসিনা এখানে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানায় আবদ্ধ নয়। যদি একটি দেশ থেকেও কার্বন নির্গমন হয়, তাতেও প্রতিটি দেশ প্রভাবিত হতে বাধ্য। সুতরাং প্রতিটি দেশকে তার যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে ধনী দেশগুলো, বিশেষ করে জি-২০ দেশগুলোকে বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন বন্ধে প্রধান ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে অভিমত ব্যক্ত করেন, প্যারিস চুক্তির কঠোর বাস্তবায়নই বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন এবং এর ফলে বিশ্বউষ্ণায়ন রোধ করা সম্ভব।
শেখ হাসিনা ওই ভার্চুয়াল বিবৃতিতে প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তনের প্রশংসা করে বলেন, এটি অত্যন্ত ভালো সংবাদ যে, যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তিতে ফিরে এসেছে। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে জলবায়ু বিষয়ক নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগে। এতে নেতারা তাঁদের দেশে ক্রমান্বয়ে কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে উল্লেখ করেন, কোভিড-১৯ এর পর, সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় এখন। তিনি বলেন, বিষয়টি এখন বাংলাদেশের মতো জলবায়ু দুর্বল দেশগুলোর জন্য একটি বিশাল হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রকৃতই আমাদের দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব খুবই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে চলেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে অনেক জনপদ পানির নিচে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে। জোয়ার-ভাটার নিত্য ভোগান্তির মধ্যে এখানকার মানুষের জীবন এখন দুর্বিষহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঋতুচক্রের স্বভাবে পরিবর্তনের ফলে খরা ও অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, স্বাভাবিক উষ্ণতার পরিবর্তে অতি উষ্ণতায় জীবনযাপনে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এখন নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনকে একেবারে ওষ্ঠাগত করে ফেলার কারণে বিশ্বনেতৃবৃন্দ জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে এক রকম এড়িয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে এতদিন।
সম্ভবত এই নির্লিপ্ত থাকার দিনও অতি শীঘ্রই ফুরিয়ে আসছে।
মতামত সম্পাদকীয়