ইউক্রেন-রাশিয়া তুমুল যুদ্ধ
সুপ্রভাত ডেস্ক »
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলে রুশ সামরিক বাহিনী পুরোমাত্রার আক্রমণ শুরু করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ধারণা জোরালো হয়েছে, কিয়েভের আশপাশের এলাকায় শনিবার রুশ সৈন্যদের সঙ্গে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর লড়াইয়ের তীব্রতা ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায়।
রাশিয়ার সৈন্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই এখন রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে রয়েছে বলে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা ধারণা করছেন। গত ১৭ দিন ধরে কিয়েভের কাছের যুদ্ধ পরিমাপ করা হচ্ছে মাইলের হিসাবে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্য এখন কিয়েভের কেন্দ্র থেকে ১৫ মাইল দূরে রয়েছেন।
তবে রুশ সৈন্যরা কিয়েভের উত্তর-পূর্ব, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে অগ্রসর হওয়ার সময় ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ছে। ইউক্রেনের পদাতিক বাহিনী ড্রোনের মাধ্যমে পশ্চিমাদের সরবরাহ করা ট্যাঙ্ক-বিরোধী অস্ত্র ব্যবহার করছে। দেশপ্রেমিক স্থানীয় জনগণের কাছে থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ইউক্রেনের সৈন্যরা।
কিয়েভ অভিমুখে অগ্রসর হতে গিয়ে রাশিয়ার সৈন্যরা ট্যাংকের জ্বালানি এবং অন্যান্য সরঞ্জামের ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারপরও রুশ সৈন্যরা কিয়েভের কেন্দ্র থেকে মাত্র ১৫ মাইল দূরে রয়েছে, কিছু কিছু এলাকায় আরও অগ্রসর হয়েছে তারা।
কিয়েভ থেকে মাত্র ৮ মাইল দূরের শহর ব্রোভারিতে ইউক্রেনের সৈন্যদের সঙ্গে তীব্র লড়াই চলছে রুশ সৈন্যদের। রাশিয়ার সাঁজোয়া যানের বহর শহরে ঢুকে পড়া ঠেকাতে সেখানে ভারী গোলাবারুদ ব্যবহার করছে ইউক্রেনের সৈন্যরা। রাজধানীর চারপাশে, বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্বের একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে। কিয়েভের আশপাশের ছোট ছোট শহর এবং রাজধানীর প্রবেশদ্বারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দু’পক্ষের তীব্র লড়াই চলছে।
কিয়েভে পূর্ণমাত্রার হামলা?
বিবিসি বলছে, কিয়েভের একপাশে ড্রিল মেশিন ব্যবহার করে রাস্তার উপরিভাগ মেরামত করছেন কিছু কর্মী। অন্যদিকে, রাজধানীর উত্তর প্রান্তে বিস্ফোরণের ক্রমাগত শব্দ পাওয়া গেছে; যেখানে রাশিয়ান বাহিনী সবচেয়ে বেশিসংখ্যায় জমায়েত হয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ধারণা, ইউক্রেনে ঢুকে পড়া রুশ সামরিক বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্য এখন রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে অবস্থান নিয়েছে। রাজধানীতে রুশ সৈন্যরা পুরোমাত্রার আক্রমণ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইউক্রেনের অন্যান্য শহর যেভাবে দখলে নিয়েছে ঠিক সেভাবে কিয়েভকে চারদিক থেকে ঘিরে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।
তবে ইউক্রেনের রাজধানী দখলে নেওয়ার মতো পর্যাপ্তসংখ্যক রুশ সৈন্য আছে কি না সেটি এখনও পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছে বিবিসি। তবে শহরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে রুশ সৈন্যরা। আর এ সময় প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে তারা।
পুতিন কিয়েভ ধ্বংসের প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
পুতিন স্পষ্টতই ধৈর্যহীন হয়ে পড়েছেন। রাশিয়া এই সংঘাতের নতুন একটি পর্যায়ে অগ্রসর হওয়ায় সেটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। রাজধানী কিয়েভসহ এর আশপাশের শহরগুলোতে কামান, রকেট লঞ্চার, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য অস্ত্র সরঞ্জাম জড়ো করছে রাশিয়ান সৈন্যরা।
রাশিয়া কীভাবে শহরটি দখলে নেওয়ার জন্য চূড়ান্ত যুদ্ধ করতে যাচ্ছে তার সবচেয়ে ভালো ইঙ্গিত পাওয়া যাবে, যদি সিরিয়ার আলেপ্পো এবং চেচনিয়ার গ্রোজনিতে রুশ সৈন্যরা কীভাবে লড়াই করেছিল সেদিকে নজর দেওয়া যায়। রাশিয়ান সৈন্যরা এসব শহরে সড়ক থেকে সড়কে লড়াই করেছে, শহরগুলো একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে।
তবে কিয়েভ দখলের ক্ষেত্রে পুতিন এটি করবেন কি না সেটি বলা কঠিন। বিবিসি বলছে, কিয়েভ ঐতিহাসিক এক শহর। মস্কোরও অনেক আগে কিয়েভান রুশ সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল এটি। যদি পুতিন কিয়েভকে ধ্বংস করে দেন এবং সেই খবর রাশিয়ায় ফিরে আসে, তাহলে সেটি অনেক রাশিয়ান অপছন্দ করতে পারেন।
বিবিসির সিকিউরিটি প্রতিনিধি ফ্রাঙ্ক গার্ডনার বলেছেন, তবে আমি মনে করি, পুতিন ইউক্রেনকে বশে না আনা পর্যন্ত কোনো কিছুতেই থামবেন না। তিনি ইউক্রেনকে ইইউ এবং ন্যাটোতে যোগদানের মাধ্যমে পশ্চিম ও ইউরোপের সঙ্গে থাকার চেয়ে ধোঁয়াটে ধ্বংসস্তূপ তার পাশে রাখতে চান। খবর ঢাকাপোস্ট ও বিডিনিউজ।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনকে নাৎসিমুক্ত এবং অসামরিকায়ন করার লক্ষ্যে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্যবস্তু বানোনোর অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু রাশিয়া বরাবরের মতো ইউক্রেনের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। যদিও একদিন আগেও ইউক্রেনের রাস্তায় শত শত মানুষের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।
বিজয়ের পথে ইউক্রেইন
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেন বিজয়ের পথে রয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, শুক্রবার টিভিতে দেওয়া ভাষণে তিনি এমন দাবি করেন। তবে কতদিন পর্যন্ত এ লড়াই চলবে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা তার এখনও নেই।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ‘কৌশলগত একটি মোড়ে’ পৌঁছানোর দাবি করে জেলেনস্কি বলেন,
‘ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডকে মুক্ত করতে আমাদের এখনও কত সময় লাগতে পারে সেটা বলা অসম্ভব।’
‘কিন্তু আমরা বলতে পারি এটা আমরা করবই। ইতোমধ্যে আমরা একটি কৌশলগত মোড়ে উপনীত হয়েছি।’
রাশিয়ার ওপর অবরোধের চাপ আরও বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিরি পুতিন দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিদেশি স্বেচ্ছাসেবকদের আহ্বান জানিয়েছেন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শইগু বলেছেন,রাশিয়া সমর্থিত বাহিনীর পাশাপাশি লড়তে মধ্যপ্রাচ্যে ১৬,০০০ স্বেচ্ছাসেবী আছে। এই স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে দক্ষ সিরীয় যোদ্ধারা থাকতে পারে, বলছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইউক্রেনের পক্ষেও এখন কিছু ভাড়াটে যোদ্ধা আসতে শুরু করেছে। কিছু মার্কিন ও ব্রিটিশ সাবেক সেনা ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে আসছে বলে শোনা যাচ্ছে।
এর আগে বিবিসির একটি প্রতিবেদনে জানানো হয় শুক্রবার ইউক্রেনে ‘সর্বাত্মক হামলার’ তৃতীয় সপ্তাহে এসে আক্রমণের তালিকায় কয়েকটি নতুন শহরকে যুক্ত করেছে রাশিয়া।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লুটস্কের একটি বিমানক্ষেত্র ও একটি জেট ইঞ্জিন কারাখানায় হামলা চালায় তারা। ইউক্রেনের মধ্যপূর্বাঞ্চলীয় শক্তিকেন্দ্র নিপ্রোতে বিমান হামলায় একজন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইভানো-ফাঙ্কিভস্ক শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এর পাশাপাশি অবরুদ্ধ বন্দরনগরী মারিওপোলের উত্তরে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর ভলনোবাখার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া।
এদিকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের সেনাদের হাতে রাশিয়ার একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।