নিজস্ব প্রতিবেদক »
কেউ এসেছে বোয়ালখালী থেকে, কেউবা চান্দগাঁও থেকে। কালুরঘাট সেতু এলাকায় এসে তারা জানতে পারে সেতুর ওপর ভারি যান চলাচল রোধে উচ্চতা প্রতিবন্ধক বসানোর কাজ চলছে। কাজ চলার কারণে গাড়ি থেকে নেমে তপ্ত রোদে হেঁটে পার হচ্ছে শত শত মানুষ।
গতকাল বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কালুরঘাট সেতু এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই হেঁটে পার হচ্ছে সেতুর পূর্ব-পশ্চিম প্রান্তে। কেউ মাথায় বস্তা নিয়ে যাচ্ছে, কারো কোলে রয়েছে শিশু। রোদে মাথা ঝিম ধরছে অনেকের। তাই ব্রিজের মাঝে একটু ছায়া খুঁজে মিনিট কয়েক দাঁড়িয়ে বিরতি নিচ্ছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে সেতুর নিচে হাতে গোনা কিছু নৌকা চলছে। কিন্তু সেতুর পূর্ব পাশে ঘাট কিছুটা দূরে হওয়ায় সেখানে যাত্রীদের চাপ ছিলোনা।
সেতুর পশ্চিম পাশ থেকে পূর্বের দিকে যাওয়া হাশেম নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘সকালে একটা কাজে এসে দেখি গাড়ি যাচ্ছে না। আমার জন্যতো কাজ বসে থাকবে না। তাই হেঁটে পার হয়ে কাজে গেছি। এখন আবার হেঁটে পার হয়ে বাড়ি যাবো। এসব দেখার কেউ নেই। অনেকে বলছে, সেতুতে গাড়ি না চলার কথা পত্রিকায় এসেছে। কিন্তু আমরা কতজন পত্রিকা পড়ি! মাইকিং করলে আমরা এ দুর্ভোগে পড়তাম না।’
একই কথা বললেন স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘এ কাজগুলো রেল কর্তৃপক্ষ চাইলে রাতে করতে পারতো। কিন্তু তারা দিনে করে মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়েছে। এ সেতু দিয়ে লাখের উপর মানুষ যাতায়াত করে। এতোগুলো মানুষের কথা ভেবে ফেলে রাখা তিনটা ফেরি চালু করতে পারতো। একদিনের জন্য ফেরি চালালে কোনো সমস্যা হতো না। কিন্তু দায়িত্বরতরা মানুষের সুখ-অসুখ নিয়ে ভাবে না।’
সেতুর দুই পাশে উচ্চতা প্রতিবন্ধক বসানোর কাজ চলা অবস্থায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী মো. আবরার হোসেন। সকালের শুরুতে পূর্ব পাশে উচ্চতা প্রতিবন্ধক বসিয়ে দুপুরের মধ্যে পশ্চিম পাশেরটি বসানোর কাজ শেষ করা হয়। তিনি ৩টার আগে কাজ শেষ করে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক করেন।
সেতুর ওপর যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ প্রসঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এটা তো আমরা আগে থেকে জানিয়েছি। সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। সকলে যার যার কাজ করেছে। যারা খবর পায়নি, তারা কেন খবর পায়নি তা বলতে পারছি না। তবে এ উচ্চতা প্রতিবন্ধক বসানোর মাধ্যমে ৩ টনের বেশি ওজনের গাড়ি আর চলাচল করতে পারবে না।
কালুরঘাট সেতুর ওপর যান চলাচলে ওজনের সীমাবদ্ধতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্রিজটি দিয়ে যান চলাচলে আগে ১০ টন পর্যন্ত লিমিট ছিলো। ২০০১ সালে এ ব্রিজটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পর এ লিমিট নির্ধারণ করা হয়। এরপরও অনেক ভারি যান নিয়ম না মেনে চলাচল করেছে। এখন আমরা উচ্চতা প্রতিবন্ধক বসিয়েছি। ৩ টনের বেশি ওজনের কোনো গাড়ি এখন আর চলাচল করা সম্ভব হবে না।’
এ কাজ দিনে না করে রাতে করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখেন, আমরা তো মন চাইলে কোনো কিছু করতে পারি না। অফিস অর্ডার মেনটেইন করি। অফিস থেকে যেরকম আদেশ এসেছে, আমরা সেটাই করেছি। অনেকে আমাদেরকে ফেরি চালু করার কথা বলছে। কিন্তু সেই কাজটি সড়ক ও জনপদের। তারাও কোনো আদেশ না পাওয়ায় ফেরি চালু করতে পারেনি। আর এসব বিষয়ে মন্তব্য করারও এখতিয়ার আমাদের নেই। তবু সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দেখে বললাম।’