নিজস্ব প্রতিবেদক :
মেয়র পেলাম কিন্তু প্যানেল মেয়র কারা হচ্ছেন? তা নিয়ে কাউন্সিলরসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা চলছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৫৫ জন ( কাউন্সিলর ৪১ জন ও সংরক্ষিত ১৪ জন) নির্বাচিত কাউন্সিলর তাদের ভোটের মাধ্যমে নিজেদের মধ্য থেকে তিন জন প্যানেল মেয়র নির্বাচিত করেন। মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম সাধারণ সভা বা সভার ৩০ দিনের মধ্যে প্যানেল মেয়র নির্বাচনের কথা রয়েছে।
আলোচনায় কারা রয়েছেন তা জানতে একাধিক সাধারণ কাউন্সিলরগণের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্যানেল মেয়রের আলোচনায় রয়েছেন ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। কাউন্সিলরদের মধ্যে একমাত্র ডক্টরেট ডিগ্রিধারী এই কাউন্সিলর বিগত সময়েও প্যানেল মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন। ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড থেকে টানা তিনবারের নির্বাচিত ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু এবারো প্যানেল মেয়রের দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন। এবারো প্যানেল মেয়র হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে জানিয়ে ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, ‘প্যানেল মেয়র মানে কিন্তু শুধু একটি পদ নয়। এটি একটি সম্মানের জায়গা। মেয়রের অনুপস্থিতিতে এখানে যিনি দায়িত্ব পালন করবেন তাকে বিদেশি ডেলিগেটদের কাছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে রিপ্রেজেন্ট করতে হবে। একইসাথে সিটি কর্পোরেশন পরিচালনার জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ হতে হবে। তাই ভোট দেওয়ার সময় এসব বিবেচনায় আনার জন্য সম্মানিত কাউন্সিলরদের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
নিছার উদ্দিন মঞ্জুর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আলোচনায় রয়েছেন টানা পাঁচবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন। বাগমনিরাম ওয়ার্ডের এই আওয়ামী লীগ নেতা সিটি কর্পোরেশন বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ। তিনি বলেন,‘ কাউন্সিলর হিসেবে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্য থেকে ভোটের মাধ্যমে তিনজন প্যানেল মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হবে। আমি নিজেও আগ্রহী এই পদের জন্য। এখন ভোটাররা যাতে দক্ষতা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে ভোট প্রদান করেন।’
অন্যান্য কাউন্সিলরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই দুজন ছাড়া প্যানেল মেয়রের দৌড়ে রয়েছেন সাবেক প্যানেল মেয়র হাসান মাহমুদ হাসনী। দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড থেকে টানা নির্বাচিত এই কাউন্সিলর এবারো প্যানেল মেয়র হতে আগ্রহী। এছাড়া আলোচনায় রয়েছেন ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হারুনুর রশিদ। ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত জহরলাল হাজারীও রয়েছেন। অপরদিকে তরুণদের মধ্যে রয়েছেন জামালখানের শৈবাল দাশ সুমন ও ২৫ নম্বর রামপুরা ওয়ার্ডের আব্দুস সবুর লিটন। আলোচনায় রয়েছেন সাতবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু। চকবাজার ওয়ার্ডের মিন্টু কাউন্সিলর নির্বাচনে কখনো পরাজয়ের স্বাদ পাননি।
বিধি অনুযায়ী তিনজন প্যানেলের মধ্যে দুজন পুরুষ এবং একজন নারী হতে হবে। সেহিসেবে সাধারণ কাউন্সিলর থেকে দুজন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর থেকে একজন নির্বাচিত হবেন। নারীদের মধ্য থেকে জোবাইরা নার্গিস খান গতবারও প্যানেল মেয়র ছিলেন এবং এবারো তার নাম আলোচনায় আসছে। এছাড়া নতুন করে আলোচনায় এসেছেন আফরোজা কালামের নাম। শিক্ষিত এবং টানা ছয়বারের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়া আফরোজা কালামও প্যানেল মেয়রের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।
তবে প্যানেল মেয়র প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলের একটি ভূমিকা রয়েছে বলে জানান পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা দল থেকে নির্বাচিত হয়ে এসেছি, তাই প্যানেল মেয়র হিসেবে দল কাকে চায় সেটাও বিবেচ্য বিষয়। এখন অনেকেই নিজের মতো করে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করছেন। তবে প্রথম সভায় তা চূড়ান্ত হতে পারে।’
প্যানেল মেয়র নির্বাচন প্রক্রিয়া
সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত পরিষদ যেদিন প্রথম সাধারণ সভায় বসবেন সেদিন ই মূলত মেয়র এই নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। তবে সেই সভার পর থেকে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে প্যানেল মেয়র নির্বাচনের আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া করোনা শনাক্ত হওয়ায় সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর জোবাইরা নার্গিস খান এখনো শপথ নেননি। এরমধ্যে প্যানেল মেয়র কিভাবে নির্বাচন করা হবে জানতে চাইলে একাধিক কাউন্সিলর জানান, প্যানেল মেয়র নির্বাচন নিয়ে যতো বিলম্ব হবে ততোই আলোচনা বাড়বে। তাই প্রথম সভার দিন এই নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। প্রথম সভায় মেয়র সভাপতি হিসেবে কারা কারা প্যানেল মেয়র হিসেবে নির্বাচন করতে চান নাম আহ্বান করবেন। তখন যারা নির্বাচন করতে চান তাদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ ভোটের মাধ্যমে তিনজনকে নির্বাচিত করা হবে। যিনি সর্বোচ্চ ভোট পাবেন তিনি প্যানেল মেয়র এক, দ্বিতীয় জন প্যানেল মেয়র দুই এবং তৃতীয় জন প্যানেল মেয়র তিন মনোনীত হবেন। মেয়রের অনুপস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে এই প্যানেল মেয়রগণ মেয়রের দায়িত্ব পালন করবেন।