করোনার দ্বিতীয় ঢেউ’র ভয়াল রূপ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে-এমনই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা সংক্রমণ গত ৩দিন প্রতিদিনের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে, মৃত্যুর রেকর্ডও অনুরূপ। আক্রান্ত ও মৃত্যুর এরূপ পরিসংখ্যান আরো কতদিন থাকবে বলা মুশকিল তবে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, মাস্ক পরিধান ছাড়া সুরক্ষিত থাকার অন্য কোনো পথ নেই। হাসপাতালগুলিতে ঠাঁই নেই, করোনার প্রথম ধাক্কায় মানুষ যে রকম অসহায় হয়ে পড়েছিলো, এবারও সেই পরিস্থিতি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে কিন্তু এ সকল প্রতিপালনে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা কিংবা সরকারি প্রশাসনের সকল সংস্থাকে সংযুক্ত করা প্রয়োজন তা হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলের সমাবেশে অধিকাংশ লোকের মুখে মাস্ক নেই, নেতারা কি তা দেখেননি? তা হলে সাধারণ মানুষদের দোষ দিয়ে লাভ কী? পরিবহনে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে যানবাহনগুলি স্যানিটাইজেশন করা হয়নি, মালিক কিংবা শ্রমিক নেতারা তা নিশ্চিত করেননি কেন? এখন পরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সরকার ভাড়া বেঁধে দিয়েছে ৬০ শতাংশ বেশি অথচ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ, স্যানিটাইজেশনের বালাই নেই। শপিংমল কিংবা মার্কেটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে বাজার কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছাসেবী দিয়ে সমাগম নিয়ন্ত্রণ কিংবা স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা করেনি। প্রশাসন থেকে এসব বিষয়ে যথাযথ নজরদারি করা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলিও এই জাতীয় বিপদ মোকাবেলায় সচেতনভাবে এগিয়ে আসছেনা তেমন, কেবল সরকারের একার পক্ষে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অসম্ভব। এই ভয়াবহ করোনা বিপদে সকল সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে জনগণের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে।
দেশের সর্বত্র পর্যটন কেন্দ্রে দর্শনাথীদের আগমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, রাজনৈতিক ধর্মীয় সামাজিক সমাবেশ একদম সীমিত রাখা চাই। হোটেল রেস্তোরাঁয় সমাগম কমাতে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূর্বের মতো মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে জনগণের সহযোগিতা চেয়েছেন। আগের মতোই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা বাড়ানো, আইসিইউ এবং অক্সিজেন সরবরাহ পর্যাপ্ত রাখতে হবে। দেশের হাসপাতালগুলো সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমে নিয়ে আসার কাজে ঢিলেমি দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে কমিউনিটি সেন্টার, নির্মিয়মাণ সরকারি ভবনে করোনা চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। সকল সময়ের জন্য চিকিৎসা সুবিধা বাড়াতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া চাই। করোনা কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে বলা যায় না। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রীর যেন ঘাটতি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসক সংগঠনগুলিকে এই জাতীয় বিপদে এগিয়ে আসতে হবে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে চিকিৎসাকেন্দ্র এবং হাসপাতালগুলিকে করোনা চিকিৎসার উপযোগী করে তুলতে হবে। জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মানছেনা কেবল এই বক্তব্য দিয়ে নিজেদের দায়-দায়িত্ব না সারিয়ে জনগণকে বাঁচাতে তাদের চিকিৎসা দিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে সরকারকে। জাতীয়ভাবে এই বিপদ মোকাবেলা করতে সকল উপায় সমাবেশ করতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই সকল প্রস্তুতি নিয়ে যুদ্ধকালীন অবস্থার মতো মোকাবেলা করতে হবে। সর্বত্র কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি জারি রাখতে হবে সরকারকে এর বিকল্প নেই। অর্থনীতি-ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখতে হবে জীবন-জীবিকার স্বার্থেই। তাই সকলকে সচেতনভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে উদ্যোগী হতে হবে। সকল পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখতে পারলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। এজন্য চিকিৎসাসেবা, জনগণকে পরামর্শ প্রদান, বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টাইনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সকলকে ভ্যাকসিন নিতে হবে। আর ভ্যাকসিন সংগ্রহে সকল প্রকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ভ্যাকসিন ছাড়া করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবেনা এটি সকলকে সুদৃঢ় বিবেচনায় নিতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়