এন এ জাকির, বান্দরবান :<
পাহাড় কন্যা বান্দরবান বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত। পর্যটনকে ঘিরে সরকারি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় জেলায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য হোটেল মোটেল রিসোর্ট গেস্ট হাউস। পর্যটন স্পট রেস্টুরেন্ট পরিবহন হোটেল কর্মচারী মালিকসহ বিভিন্ন ভাবে জেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পর্যটন শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। কিন’ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউনের কারনে টানা ৪ মাস ধরে হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস রেস্টুরেন্ট পরিবহন সব বন্ধ থাকায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। গেল ৪ মাসে শুধু পর্যটন খাতে শত কোটি টাকা লোকসানের কথা জানালেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য জেলায় রয়েছে ৪ শতাধিক চাঁদের গাড়ি। কিন’ লকডাউনের কারণে গত ৪ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে পর্যটন স্পটসহ হোটেল মোটেল পরিবহনসহ সব কিছু। ফলে লোকসান গুনছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকলে। চাকরি হারিয়েছেন অনেক কর্মচারী। বেকার জীবন কাটাচ্ছে ৫ শতাধিক পরিবহন শ্রমিক।
জানা গেছে ,পর্যটন মৌসুমে আবাসিক হোটেল রেস্টুরেন্ট পরিবহন সেক্টরে গড়ে প্রতিদিন ৮০ লাখ টাকার লেনদেন হত বান্দরবানে। এছাড়া পর্যটন স্পটে আয় হত গড়ে প্রতিদিন ৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে মাসে ২৫ কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে এবং ৪ মাসে প্রায় শত কোটি টাকার লোকসানের স্বীকার হয়েছে পর্যটন সংশিস্নষ্ট ব্যবসায়ীরা।
বান্দরবান সাইরম্ন হিল রিসোর্টের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মোস্তফা কামাল বলেন, চার মাস ধরে আমাদের রিসোর্ট বন্ধ রয়েছে। ২৯টি রম্নম রয়েছে আমাদের ১০০ জন কর্মচারী রয়েছে। প্রতিমাসে শুধু কর্মচারীর বেতন দিতে হয় ২০ লাখ টাকা। বর্তমানে ৬৫ জন স্টাফ ছুটিতে রয়েছে ৩৫ জনকে রিসোর্ট মেনটেইনেজের জন্য রাখা হয়েছে। কোন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। লকডাউনে প্রতিমাসে গড়ে ৭০ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে আমাদের। মালিক এবং কর্মচারীদের সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনা না হলে এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠা সম্ভব নয়। হলি ডে ইন রিসোর্টের পরিচালক জাকির হোসাইন বলেন, চার মাস ধরে রিসোর্ট বন্ধ বেতন দিতে না পারায় অনেক স্টাফদের ছাঁটাই করে দিয়েছি। ৪ মাসে প্রায় কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। সরকার সহজ শর্তে লোন দিয়ে সহযোগিতা না করে তাহলে এ লোকসান কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। পরিবহন শ্রমিক নেতা বাহাদুর বলেন, পরিবহন জেলায় শুধু পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য ৪ শতাধিক চাঁদের গাড়ি রয়েছে। ৪৩০ জন চালক রয়েছে। গত চার মাস ধরে তারা সবাই বেকার হয়ে পড়েছে। পরিবহন খাতে গড়ে দৈনিক ৬ লাখ টাকা আয় হত। লকডাউনের কারণে শ্রমিকদের পাশাপাশি মালিক পক্ষও ক্ষতিগ্রসত্ম হয়েছে। এদিকে সবকিছু বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট হস্তশিল্প ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও। জেলা সদরে শুধুমাত্র টুরিস্ট নির্ভর এই ধরনের দোকানের সংখ্যা রয়েছে শতাধিক। যারা বিভিন্ন টুরিস্ট স্পটে নিজেদের তৈরি পণ্য বিক্রয় করে সংসার চালায়।
হসত্মশিল্প ব্যবসায়ী এসানু মারমা জানান, পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরাও। নীলাচলে আমারও একটি দোকান রয়েছে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের ঘরে বসে তৈরি করা তাঁতের কাপড়, ঐতিহ্যগত পোষাক এবং হস্তশিল্পের বিভিন্ন রকমের পণ্য বিক্রি করতাম। চারটি মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ। দোকান না খোলায় পাহাড়ি গ্রামের মানুষদের কাছ থেকেও বিভিন্ন ধরনের পণ্য সংগ্রহ বন্ধ রেখেছি। ফলে সামগ্রিক ভাবে সবাই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছি। বান্দরবান হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সারাবছরই পর্যটকের ভিড় থাকে বান্দরবান। কিন’ ঈদের ছুটি এবং লম্বা বন্ধের সময়টাতে চাপটা কয়েকগুণ বেড়ে যেত। তবে করোনা মহামারির লকডাউনে ধস নেমেছে পর্যটন শিল্পে। ক্ষতির হিসাবটা নির্ণয় করা কঠিন হবে। তবে শুধুমাত্র সদরে ৫৮টি আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউজ রয়েছে। তালিকার বাহিরেও আছে আরও কয়েকটি। সমিতির একটি পরিসংখ্যানে দেখাগেছে, পর্যটন মৌসুম, ভরা মৌসুমে বা পিক-সুপার পিকে গড়ে বর্তমানে প্রতিদিন কমপড়্গে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে শুধু হোটেল ব্যবসায়ীদের। মাসিক হিসাবে ক্ষতির পরিমাণটা গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ১৫ কোটি টাকা। চার মাসের লকডাউনে ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে শুধুমাত্র আবাসিক মালিকদের। জেলার বাকি ছয়টি উপজেলায় ৩টি করে আরও ১৮টি আবাসিক হোটেল ধরা হলেও ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেকখানি বেড়ে যাবে। অধিকাংশ ব্যবসায়ীর ব্যাংক ঋণ রয়েছে।
বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শামীম হোসেন বলেন, করোনার ছোবলে সবকিছুই যেন ল-ভ-। অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটন সংশিস্নষ্ট সবধরনের ব্যবসা বাণিজ্য। কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনেকে পর্যটন সংশ্লিষ্ট অনেকে। করোনায় জেলাপ্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মহীন ১২ শ শ্রমিকদের ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে।