বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ
‘আমরা শুধু ঠিকাদার নই, প্রজেক্ট পার্টনার হিসেবেও কাজ করি’
ভূঁইয়া নজরুল >>
বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর। বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে সাগরের চরে গড়ে উঠছে দেশের আগামীর অর্থনীতির ভিত্তি। বিভিন্ন প্লটে চলছে কারখানা নির্মাণের কাজ।
প্লটে গিয়ে দেখা গেছে, শিল্প কারখানায় এপিক প্রপার্টিজের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে কাজ চলছে। শিল্প কারখানার জন্য নির্ধারিত এই স্থানে আবাসন প্রতিষ্ঠান এপিক প্রপার্টিজ থাকার কথা নয়। তাহলে এপিক কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় এপিক প্রপার্টিজের পরিচালক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, ‘মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে মডার্ন সিনটেক্স লিমিটেডের একটি কারখানা নির্মাণ করার কাজ পেয়েছি। তা করছি বলে সেখানে এপিক প্রপার্টিজের সাইনবোর্ড।’
কিন্তু আপনারা তো ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান, ঠিকাদারের মতো বিভিন্ন কোম্পানির স্থাপনা কেন নির্মাণ করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে আসার আগে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ছিলাম। এছাড়া চট্টগ্রামে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কারখানা ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করেছি। আমাদের কাছ থেকে শিল্পগ্রুপগুলো ভাল সার্ভিস পায় বলেই তারা আমাদের দিয়ে নির্মাণ কার্যক্রম করাচ্ছে।
রিয়েল এস্টেট কোম্পানি কর্তৃক এধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুধু এপিক প্রপার্টিজ করছে না। সানম্যার, সিপিডিএল, ফিনলে, পিটুপিসহ বিভিন্ন ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক ও আবাসিক স্থাপনা নির্মাণ করে দিচ্ছে। প্রবর্তক এলাকায় বেলভিও হাসপাতালের ভবন নির্মাণ করেছে সিপিডিএল, বর্তমানে মা ও শিশু হাসপাতালের আওতাধীন ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণের কাজ করছে সিপিডিএল। আগ্রাবাদে পিএইচপি ফ্যামিলির ৩০ তলার আজিজ কোর্ট ভবন নির্মাণ করেছে সানম্যার প্রপার্টিজ। ইপিজেডে প্যাসিফিক জিন্সের কারখানা বিল্ডিং নির্মাণ করেছে পিটুপি, কক্সবাজারে নৌ বাহিনীর একটি হোটেল নির্মাণ করছে পিটুপি এবং ফৌজদারহাটে প্যাসিফিক জিন্সের ১৩ লাখ ৫০ হাজার বর্গফুট আয়তনের একটি কারখানা ভবনও নির্মাণ করছে পিটুপি।
ডেভেলপার দিয়ে কেন বাণিজ্যিক ও কারখানা ভবন নির্মাণের কাজ করছেন তা জানতে চাওয়া হয় মডার্ন সিনটেক্স লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার সফল বড়ুয়ার কাছে। তিনি বলেন, ‘ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ জনবল, আধুনিক ইকুইপমেন্ট সমৃদ্ধ। সঠিক সময়ে কাজটি শেষ করতে ডেভেলপার কোম্পানির প্রতি আগ্রহী হয়েছি। এতে কাজের গুণগত মান যেমন বজায় থাকবে তেমনিভাবে নিরাপদ কর্মপরিবেশও থাকবে।’
দক্ষ জনবল ও ইকুইপমেন্ট ব্যবহারে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে থাকার কথা জানিয়ে সিপিডিএল প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চিটাগাং চেম্বারের পরিচালক প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘আমাদেরকে নির্মাণের কাজ দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হয়। এতে আমাদের কোম্পানির নাম যেমন তারা ব্র্যান্ডিং করতে পারে, তেমনিভাবে আমাদের কাছে পরিপূর্ণ একটি সেবা পায়। শুধু ঠিকাদার নই, প্রজেক্ট পার্টনার হিসেবেও কাজ করি। প্রকৌশলী, স্থপতি থেকে শুরু করে সব সেক্টরের জনবল রয়েছে। সবকিছু দিয়ে সাপোর্ট দেই এবং যথাসময়ে কাজ শেষ করতে পারি।’
যথাসময়ে কাজ শেষ করতে পারার উদাহরণ প্রসঙ্গে পিটুপি ফ্যামিলি অ্যান্ড উইকন প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা আশরাফুল ইসলাম আলভি বলেন, ‘আমরা ইপিজেডে প্যাসিফিক জিন্সের কারখানা নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় বছর আগে শেষ করেছি। আর এরই পুরস্কারস্বরূপ আমাদের একই কোম্পানির আরেকটি বড় কারখানা (ফৌজদারহাটে) নির্মাণের কাজ দেয়া হয়েছে। আমরা মাত্র ১৬ মাসে কক্সবাজারে নৌ বাহিনীর একটি হোটেল হোটেল নির্মাণ করে দিচ্ছি। বছরের পর বছর ধরে নির্মাণকাজ চালানোর দিন শেষ। এখন যত দ্রুত কাজ শেষ করা যায় ততোই দেশ এগিয়ে যাবে। আর এজন্যই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে আসছে।’
ডেভেলপার কর্তৃক বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণে দেশের নির্মাণ শিল্প আরো এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে সানম্যার প্রপার্টিজের পরিচালক এ কে এম আহসানুল বারী বলেন, ‘ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলো স্কিলড। তাই এসব প্রতিষ্ঠান নির্মাণ শিল্পে যুক্ত হলে কাজের গুণগত মান যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনিভাবে পেশাদারিত্বও বজায় থাকে।’
তবে আবাসন ভবন নির্মাণের বাইরে গিয়ে এমন বাণিজ্যিক ও কারখানা নির্মাণের কাজকে নিজেদের কাজ বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন রিহ্যাব (রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর সংগঠন) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল কৈয়ুম। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে গণপূর্ত মন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে প্রস্তাবনা দিয়েছি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাজে যাতে রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো বিট করতে পারে। তা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কাজ করলে কাজের গুণগত মান অনেক বাড়বে।’
উল্লেখ্য, করোনাকালে প্লট ফ্ল্যাট বিক্রি কমে গেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ শিল্পে কর্মরত ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলোর আধুনিক ইকুইপমেন্টসহ পর্যাপ্ত জনবল রয়েছে। এসব জনবল দিয়ে নিজেদের প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ভবনও নির্মাণ করছে ডেভেলপার কোম্পানিগুলো।