রোটারি ক্লাব অব এরিস্টোক্রেট নগরীর রোটারি সেন্টারে গল্প-আড্ডার আয়োজন করে। এতে মুখ্য আলোচক ছিলেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাশ। ১৫ আগস্ট রাত ৮টায় এ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়। রোটারিয়ান সাদমান সাইকা ইসলাম শেফা ও সরোজ বড়ুয়ার সমন্বয়ে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্লাব প্রেসিডেন্ট ডা. জয়নাল আবেদীন।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ৩২৮২ জেলা গভর্নর রুহেলা খান চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে ২০২৩-’২৪ গভর্নর প্রকৌশলী মতিউর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট ফাস্ট জেন্টেলম্যান জিয়া উদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন গড়ে ওঠার নেপথ্যের গল্পে কিশোর বলেন, ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন গড়ে ওঠার নেপথ্যে আছে আমার একাকিত্ব।
একদিন আমার স্ত্রী আমাকে বললো, সে আমার সঙ্গে থাকবে না। আমি তাকে নিয়ে দূর-দূরান্তে ঘুরতে গিয়েছি। যেন সে আমার সঙ্গে থাকে। বাংলা সিনেমার মতো এ পলিসি কাজ করলো না। পরে তার সাথে দূরত্ব বাড়ালাম। ভেবেছিলাম, সে ফিরে আসবে। কিন্তু সে আসলো না।
এখন আমি ল্যাটিন আমেরিকার পেরুতে থাকি। ওখানে গুগলের একটি প্রোজেক্টে কান্ট্রি ডিরেক্টরের কাজ করতাম। দিনের বেলা অনেক মানুষের সঙ্গ পাই, অনেকে স্যার-স্যার করে। কিন্তু রাতের বেলায় আমি একা। অনেকবার সুইসাইডও করতে চেয়েছি। আপনারা অনেকে সুইসাইড নিয়ে বিভিন্ন দর্শনের কথা বলতে পারেন। কিন্তু যে বা যারা আত্মহত্যা করে তারা এসব বোঝে না, তা নয়। কিন্তু তারা চায় সবকিছু থেকে পালিয়ে যেতে। এই একাকিত্বই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন গড়ে ওঠার একটি কারণ হতে পারে।’
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের পরিচিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন বর্তমানে অনেক পরিচিতি অর্জন করেছে। এরজন্য সকল সাধারণ মানুষদের, আপনাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। আসলে আমি যখন যে জায়গায় প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছি, সেই জায়গাতেই কাজ করেছি। যেমন- আমি যেখানে থাকি, সেখানে একটি রাস্তার কুকুর আসতো। কুকুর একটু নোংরা থাকে বলে আমি খুব একটা পছন্দ করতাম না। কিন্তু পরে একদিন কুকুরটিকে না দেখে আমি কুকরটির খোঁজ করলাম। তখন জানলাম কুকুরটিকে মেরে একটি জায়গায় কবর দেওয়া হয়েছে। পরে আমি জায়গাটি কিনে সেখানে রাস্তার অবহেলিত কুকুরদের রাখার ব্যবস্থা করেছি। এখন সেখানে ৭০টি কুকুর থাকে।
বিদ্যানন্দের এক টাকায় আহার বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি কালুরঘাটের মন্দিরে যেতাম। যখন ওখানে খাবার দিতো, তখন আমি খাবারের জন্য বসে থাকতাম। খাবার নিতে গিয়ে আমি দাতার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। তাকিয়ে ভাবতাম, সে খাবার কি পরিমাণ দিবে। তাই আমি দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে তফাৎটুকু বুঝি। এজন্য আমি কখনো দাতা হতে চাইনি। কারণ দাতার দানের ওপর গ্রহীতার কোনো অধিকার থাকে না। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ১ টাকায় খাবার বিক্রি করে। এখানে মানুষের অধিকার থাকে। আপনারা জেনে অবাক হতে পারেন, বিদ্যানন্দে প্রতিমাসে ১০ লাখ ডিম লাগে।’
এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আশরাফুল ইসলাম আলভি, ডা. কামাল হোসেন জুয়েল, তানভীর শাহরিয়ার রিমন, অ্যাডভোকেট জোবায়ের হোসেন শিবলু, স্থপতি মিজানুর রহমান, এম মনোয়ার-উল হক (এফসিএ), নোমান বিন জহিরউদ্দিন, এস এম মহিবুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুল্লাহ খান, আরমানুল হাকিম চৌধুরী, তৌফিক ফরহাদ নূর, ড. উপল চৌধুরী, মিনহাজুল হক, ক্লাব সেক্রেটারি শাহেদুল আলমসহ বিভিন্ন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি ও সিনিয়র সদস্যরা। বিজ্ঞপ্তি