চবি প্রতিনিধি »
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা এবং চবি আইন ১৯৭৩ লঙ্ঘন করে বাংলা ও আইন বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের প্রতিবাদে উপাচার্য ও উপ উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে চবি শিক্ষক সমিতি।
গতকাল সোমবার বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধু চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হকের নেতৃত্বে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
কর্মসূচিতে চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, চবি উপাচার্য অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে রাতের আঁধারে অবৈধ নিয়োগ বোর্ড পরিচালনা করে উপাচার্য পদে থাকার জন্য নৈতিক সমর্থন হারিয়েছে। তিনি এই পদকে কলঙ্কিত করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রধান অন্তরায় উপাচার্য, উপ উপাচার্য এবং প্রশাসন। তাদের পদত্যাগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে বলে শিক্ষক সমাজ বিশ্বাস করে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের একদফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ না হওয়া অবধি আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
অবস্থান কর্মসূচিতে চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত একজন ব্যক্তি যখন তার কিছু প্রশাসনিক সহযোগীসহ তাদের বাছাইকৃত আবেদনকারীকে সঙ্গে নিয়ে গোপন স্থানে নিয়োগ বোর্ড বসাতে পারেন। তখন এই ধরনের একজন ব্যক্তি এতো বড় প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে থাকার সমস্ত নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। এটা আমরা বলতেও সঙ্কোচবোধ করছি। তাই শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষক সমাজ তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন; শুধু তিনি নন, তার অন্যতম সহযোগী হিসেবে উপউপাচার্যকেও বিদায় নিতে হবে। তাহলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিউল আযম বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যের একটা অন্ধকার যুগ আছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্ধকার যুগে বাস করছি। আমাদের বিভাগের একজন শিক্ষক যখন একজন উপাচার্য হলেন, আমরা অনেক খুশি হয়েছিলাম। আমাদের বিভাগ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন হঠাৎ আমি চিঠি পেলাম বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য। যদি বিভাগের শিক্ষকের প্রয়োজন হয় বিভাগ প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাবে। বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে যেখানে অর্থ সাশ্রয় করার কথা, রাষ্ট্রের টাকা যাতে অপচয় না হয়, সেটা দেখার কথা ছিল। বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে বাংলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের অপচেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন।
অবস্থান কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন আইন বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম আবু নোমান। তিনি বলেন, আমাদের আইন বিভাগে ২৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। তার মধ্যে তিনজন শিক্ষাছুটিতে আছেন। আমাদের বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন। আমাদের বিভাগে ক্লাস নেওয়ার পরও আমাদের অতিরিক্ত ক্লাসও নেওয়া সম্ভব। আমরা এ নিয়ে রেজিস্ট্রার অফিসে চিঠিও দিয়েছি যে আমাদের আর শিক্ষক প্রয়োজন নেই। তারপরেও অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া কেন হচ্ছে? দেশের কোষাগারের অর্থের অবমূল্যায়ন আমরা মেনে নিতে পারি না। তাই এসব শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের প্রতিবাদে আমরা উপাচার্য ও উপ উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছি।
কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে আইন করেছেন। বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটি ও পরিকল্পনা কমিটি এই আইনের অংশ। আজ আমাদের ক্লাসে থাকার কথা। আমাদের দাবি বঙ্গবন্ধুর দেওয়া আইনের অধীনে চলবে এই বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়কে সুষ্ঠু পথে পরিচালনার জন্য আমাদের এই কর্মসূচি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণের লক্ষ্যেই এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসী বলেন, গতকাল উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকীর সঙ্গে অনেক অসৌজন্যমূলক আচরণ করে হুমকি দেন। আজ শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড নেতিবাচকভাবে সংবাদ পত্রিকার পাতায়। ক্ষমতা কখনো চিরস্থায়ী নয় বলে উপাচার্যের প্রতি ভর্ৎসনা করেন তিনি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে এভাবে দেখতে চাই না।
উপাচার্য ও উপ উপাচর্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রতিদিন অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।