মোহাম্মদ কাইয়ুম»
মহামারি করোনা আবারও ভয়ংঙ্কর রূপ ধারণ করছে। সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বেড়ে চলছে। এরই মধ্যে গতকাল সর্বোচ্চ ৫৫২ জন শনাক্তের রেকর্ডও দেখেছে চট্টগ্রামবাসী। পাশাপাশি করোনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০ জনের মৃত্যুও হয়েছে বুধবারে। ফলে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো চলতি মাসের শেষ ১০ দিনে আবারও আশংঙ্কাজনকহারে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা গেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন গেল এপ্রিল মাসে রেকর্ড পরিমাণ ৯ হাজার ৯১৮ জন শনাক্ত হওয়ার পাশাপাশি করোনায় মারা যায় ১৩১ জন। মে মাসে এসে সংক্রমণ কমে ৩ হাজার ৪৩৮ জন এবং মৃত্যু কমে দাঁড়ায় ৯৮ জনে। জুন মাসে এসে সংক্রমণ বেড়ে ৪ হাজার ৮৪৩ জন, তবে মৃত্যুর সংখ্যা মে মাসের তুলনায় কমে ৮৩ জন হয়। জুন মাসের প্রথম দিকে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই মে মাসের মতো কম থাকলেও শেষে এসে তা আবারও এপ্রিলের মতো বাড়তে থাকে। জুন মাসের প্রথম ২১ দিনে ২ হাজার ৮০২ জনের শনাক্তের বিপরীতে ১ জুলাইসহ গত ১১ দিনে শনাক্ত বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৪৫ জন। পাশাপাশি জুন মাসের একুশ দিনের ৪৪ জন মৃত্যুর বিপরীতে গত ১০ দিনে মৃত্যু হয়েছে আরো ৪৪ জন। সে হিসেবে জুন মাসের প্রথম ২১ দিনের বিপরীতে ১ জুলাইসহ গত ১০ দিনে মৃত্যু ও সংক্রমণ দুটোই দ্বিগুণ হারে বেড়েছে।
উপজেলাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত ১০ দিনে চট্টগ্রামে ৩ হাজার ১৪৫ জনের শনাক্তের মধ্যে উপজেলায় শনাক্ত হয় ১ হাজার ১১০ জন। যা মোট সংক্রমণের প্রায় ৩৬ শতাংশ। কিন্তু গত ১ এপ্রিল করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন সংক্রমণের হার ছিল মোট সংক্রমণের প্রায় ৭ শতাংশ। সে হিসেবে জুনে এসে নগরীর পাশাপাশি উপজেলাগুলোতেও নতুন করে সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। এছাড়া ১০ দিনে চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলায় ১ হাজার ১১০ সংক্রমণের মধ্যে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান, মীরসরাই এবং সীতাকুণ্ডসহ এ ৫টি উপজেলায় শনাক্ত হয়েছে ৮০৬ জন। যা গত ১০ দিনের সংক্রমণের প্রায় ৭২ দশমিক ৬১ শতাংশ। এরই মধ্যে সর্বোচ্চ ২০০ জন শনাক্ত হয়েছে সীতাকুণ্ড উপজেলায়। এছাড়া গত ১০ দিনে ফটিকছড়িতে ১৭১ জন, হাটহাজারীতে ১৫৯ জন, মিরসরাইয়ে ১৪৬ জন এবং রাউজানে ১৩০ জন শনাক্ত হয়েছে।
নগরীর চেয়ে উপজেলাগুলোতে সংক্রমণ বেশি জানিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব মাসুম বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের তুলনায় এবারে নগরীর চেয়ে উপজেলাগুলোতে শনাক্তের সংখ্যা বেশি। এ শনাক্ত বেশি হওয়ার পেছনে করোনার ভারতীয় ধরনের পাশাপাশি উপজেলাসমূহে শহর থেকে ঈদযাত্রা অন্যতম। সে সময় ঈদযাত্রায় সর্বোচ্চ সতর্ক করা হলেও তা অমান্য করায় একমাস যেতে না যেতেই উপজেলাগুলোতে দ্রুতই সংক্রমিত হচ্ছে।’
করোনার ভারতীয় ধরনে সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে জানিয়ে ডা. আবদুর বর জানান, ‘করোনার ভারতীয় ধরনের কারণে হাসপাতালে ক্রিটিকাল রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। এছাড়া অনেক পরিবারের সবাই শনাক্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে এক পরিবারের ৭ জন পজিটিভ রোগীও পেয়েছি। যাদের মধ্যে ৪ থেকে ১০ বছর বয়সী বাচ্চারাও আচ্ছে।’
লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষার কোন বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সে সাথে লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুতই পরীক্ষা করে পটিজিভ আসলে আইসোলেশনে রাখতে হবে।’
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর লকডাউনের বিকল্প নেই জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া সুপ্রভাতকে বলেন, ‘সংক্রমণের হার বাড়ুক বা মৃত্যুর হার বাড়ুক, আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে লকডাউন যেভাবে সার্বিকভাবে কার্যকর হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রেণে লকডাউন ৭ দিনের চেয়ে ১৪ দিন হলেই সবচেয়ে ভালো হতো। তবে ৭দিন বা ১৪দিন যা হোক না কেন সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।’
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘এখন সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও সংক্রমণের হার বেশি। এ সংক্রমণ প্রতিহত করতে হলে মানুষকে ঘরে আটকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষ যতই ঘরের মধ্যে থাকবে সংক্রমণ ততই কমবে। এটা যতই নিশ্চিত করতে পারবো ততই আমাদের সফলতা নির্ভর করে। সেজন্য লকডাউন যতদিন দীর্ঘ হবে ততই সংক্রমণ কমবে।’
বর্তমানে যুবকরা বেশি সংক্রমিত হচ্ছে জানিয়ে সিভিল সার্জন আরো বলেন, ‘এখন আমাদের ইয়ং জেনারেশন বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। তারা বাসায় গিয়ে বয়স্কদের সংক্রমিত করছে। ইয়ং জেনারেশনের মধ্যে করোনার লক্ষণ থাকে না বিধায় তারা সেটা বুঝতে পারে না। তাই সংক্রমণ যতটা কমানো যাবে সবদিকে পজিটিভ আসবে সেসাথে মৃত্যুও কমে যাবে।