মেহেরুন ইসলাম :
পুকুর পাড়ের কোলঘেঁষেই এক বিশাল আমগাছ। আমগাছের নিচেই ছোট্ট ছোট্ট ঘাসফুলের বিচরণ। আমগাছ বড় বলে তার অহংকারের শেষ নেই।আমগাছ প্রায় ঘাসফুলকে ছোট বলে অবজ্ঞা করে। আমগাছ খুব ঝগড়াটে। ঘাসফুলের সাথে বিনা কারণেই ঝগড়া করে। কিন্তু ছোট ঘাসফুল চুপচাপ সব শুনে যায়। কোনো প্রতিবাদ করে না।
একদিন সকালে বাচ্চারা আম কুড়াতে আসে। আমগাছ খুশিতে আত্মহারা। আজ সে জমিয়ে ঝগড়া করতে পারবে।
কি রে পিচ্চি ঘাসফুল, কি করিস তুই?
ঘাসফুল বলে, মমতাময়ী মাটির কোলে শুয়ে আছি বন্ধু।
দেখছিস, আজ কারা আসছিল আমার কাছে?
ঘাসফুল নরমস্বরে বলে, দেখছি বন্ধু।
ওরা আমার থেকে আম নিয়ে গেল।আম পেয়ে ওরা কত্ত খুশি! কেউ আম-দুধে ভাত খাবে। কেউ আচার বানাবে। কেউ জেলি বানাবে। কেউ আমসত্ত্ব বানাবে। কেউবা আমের জুস বানাবে। আম নিয়ে তাদের কত পরিকল্পনা। গর্বে আমার নাচতে ইচ্ছে করছে।
মৃদু বাতাসে ঘাসফুল নড়ে নড়ে বললো, নাচো বন্ধু, নাচো। আজ তো তোমার খুশির দিন।
আহারে ঘাসফুল, তোর জন্য আমার খুব কষ্ট হয়। তুই কত সুন্দর ফুল, অথচ রোজ তোকে সবাই পায়ের তলায় পিষে। তোর ঘাসগুলো গরু-ছাগল-ভেড়ায় খায়। আবার তোর গায়েই বিশ্রী দুর্গন্ধযুক্ত মলমূত্র ত্যাগ করে। তোকে নোংরা করে দেয়। কেউ তোর একটু যতœও নেয় না। কখনওবা রাখাল ছেলে তোকে ধারালো কাঁচিতে আহত করে। তুই তো বেঁচেও মৃত।
আমগাছের কথাগুলো ঘাসফুলকে খুব কষ্ট দেয়। তবুও সে প্রফুল্ল ¬মনে বলে, বন্ধু এতেই আমার সুখ। অপরের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েই আমি আনন্দ পাই। এতে আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট লাগে না।
হঠাৎ একদিন প্রচ- ঝড় এলো। ঝড়ের খুব গতি। সবকিছু ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছে ঝড়ে। মানুষের ঘরবাড়ি, দোকানপাট সব উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমগাছের ডালপালাও নড়ছে। বাতাসের তা-বে আমগাছের সব আম পড়ে যায়। বড় বড় ডালগুলোও ভেঙে পড়ে। অবশেষে আমগাছটাই কাত হয়ে পড়ে মাটির কোলে। অথচ ক্ষুদ্র ঘাসফুলের কিছুই হয়নি। ঘাসফুল আমগাছের কষ্টে সমবেদনা জানায়।
কষ্ট পেয়ো না বন্ধু। তুমি তো শিকড়সহ উপড়ে পড়োনি। তোমার শিকড় এখনো আছে। গাছের মালিক একটু যতœ নিলেই তুমি আবার উঠে দাঁড়াতে পারবে।
না রে ঘাসফুল, আমি আর বাঁচবো না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। তোমার সাথে অকারণে অনেক ঝগড়া করেছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।
ঘাসফুল দুঃখভারাক্রান্ত হয়ে বলে, আমগাছ তুমি তো আমার বন্ধু। তোমার প্রতি আমার কোনো রাগ নেই। তোমাকে আমি অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি।
ধন্যবাদ, ঘাসফুল। তুমি খুব ভালো। তোমার তুলনা হয় না।
আমি খুব অহংকারী ছিলাম। অহংকারই আমাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি আজ বুঝতে পেরেছি, অহংকার পতনের মূল।