আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কেইপিজেডে
সুমন শাহ্, আনোয়ারা
চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় বেসরকারি খাতে ইপিজেডগুলোর মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড)। ১৯৯৯ সালের ৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই হাজার ৪৯২ একর জমির ওপর অবস্থিত কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান ইয়ংওয়ান করপোরেশনের অর্থায়নে স্থাপিত কেইপিজেড প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালের ২৩ নভেম্বর পরিবেশ ছাড়পত্র পাবার পর শর্তানুযায়ী দ্রুত গতিতে মোট প্রকল্পের ৫২ শতাংশ জমি সবুজায়ন, লেক রেখে বাকি ৪৮ শতাংশ অর্থাৎ এক হাজার ১৯২ একর জমির মধ্যে ৯৯০ একর শিল্প স্থাপন ও অন্যান্য অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য প্রস্তুত করে। ২০১১ সালের ২ অক্টোবর কেইপিজেডে ইয়ংওয়ান করপোরেশনের প্রথম কারখানা কর্ণফুলী সু ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠিত হয়ে উৎপাদনে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রমেই অগ্রগতির পথে এগুচ্ছে রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এ অঞ্চলটি। বর্তমানে এখানে উৎপাদন ও উন্নয়নমূলক কাজ দুটোই সমানতালে এগিয়ে চলছে।
২০১৭ সালে ১৬৭ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে টেক্সটাইল জোন। এরই মধ্যে ১৭ একর জমিতে তৈরি হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির কর্ণফুলী পলিয়েস্টার প্রোডাক্টস লিমিটেড নামে একটি টেক্সটাইল কারখানা। এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির মেশিনগুলো। সুতা থেকে শুরু করে সবকিছু আসছে কোরিয়া ও তাইওয়ান থেকে। প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে খুব কমসংখ্যক লোকবল দিয়ে অনেকগুলো মেশিন অপারেট করা হয়। শুধু মনিটরে কমান্ড দিলেই চাহিদা অনুযায়ী তৈরি হচ্ছে ওয়ার্পনীট ও সার্কুলার নীটের বিভিন্ন প্রকারের পলিয়েস্টার ফেব্রিক্স। পরে এ ফেব্রিক্সগুলো ডাইং ও ফিনিশিং করে ফাইনাল প্রোডাক্ট হিসেবে রপ্তানি হচ্ছে দেশে ও বিদেশের অনেক নামীদামি ব্র্যান্ডের নমিনেটেড কারখানায়।
কর্ণফুলী পলিয়েস্টার প্রোডাক্টস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. আসলাম আজাদ জানান, আমরা শ্রমিকদের সকল সুযোগ সুবিধা, নিরাপত্তা নিশ্চিতপূর্বক উৎপাদন চালিয়ে আসছি। এছাড়া খুব শীঘ্রই কর্ণফুলী পলিয়েস্টারের আরো দুটি একই সাইজের কারখানা উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে।
সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কেইপিজেডে ইয়ংওয়ান করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত কর্ণফুলী সু ছাড়াও কর্ণফুলী গার্মেন্টস, কর্ণফুলী পলিয়েস্টার প্রোডাক্টস কোম্পানি লিমিটেড, এভারটপ প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, গায়া প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ও দেইগু প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে। কেইপিজেড কারখানার যাত্রাই মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। এ কারখানার প্রায় সত্তর শতাংশ চাকরিজীবী এলাকার নারী-পুরুষ। উৎপাদন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি এগিয়ে চলছে এ ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনের উন্নয়নমূলক কাজ। উন্নয়ন কাজের অগ্রগতির মাধ্যমে ক্রমশ পূর্ণাঙ্গ রূপ নিচ্ছে কেইপিজেড।
কোরিয়ান ইপিজেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, বর্তমানে সু ও টেক্সটাইল খাতের ২৫টি কারখানা উৎপাদনে আছে। নতুন করে নির্মাণ হচ্ছে অর্ধশতাধিক কারখানা। এগুলোর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার বর্গফুটের ৯টি কারখানা নির্মাণাধীন রয়েছে, যা এবছরেই উৎপাদনে যাবে। বাকিগুলোর কাজ ২০২০-২১ সালের মধ্যে শেষ হবে। এসব কারখানায় সরাসরি লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করছি।
তিনি আরো জানান, ইপিজেডে চারটি টেক্সটাইল জোন, একটি আইটি জোন ও মহিলা শ্রমিকদের জন্য ডরমটিরিসহ ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ চলছে। এখানে অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহ দেখালেও জমির নামজারি (মিউটেশন) জটিলতায় এখনো তাদের কারখানা স্থাপন করতে পারছে না।