নিজস্ব প্রতিবেদক »
খড়িমাটি প্রকাশনা সংস্থার আয়োজনে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে শিক্ষক ও লেখক দিলীপ রঞ্জন ভৌমিক রচিত ‘জীবনের ধ্রুবতারা’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব। গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় সাংবাদিক ফারুক তাহেরের সঞ্চালনায় এ প্রকাশনা উৎসবের সূচনা হয় লেখক দিলীপ রঞ্জন ভৌমিকের পুত্রবধূ ও কণ্ঠশিল্পী কান্তা দের কন্ঠে ‘আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে’ গানটি দিয়ে। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কবি দিলীপ রঞ্জন ভৌমিকের পুত্র রিংকু কুমার ভৌমিক, টিংকু কুমার ভৌমিক ও দেবদুলাল ভৌমিক। রবি ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি করেন কবির নাতনি সুস্মিতা দত্ত।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে খড়িমাটি প্রকাশক মনিরুল মনির বলেন, ‘বইটি প্রকাশের উদ্দেশ্য হলো এটি এক প্রকার আত্মউপলব্দি, অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ এ বইটি একটি স্মৃতিগ্রন্থ। এখানে প্রবন্ধ ও গদ্যকথা রয়েছে। রয়েছে সর্বমোট ১৩টি প্রবন্ধ। বইটিতে রয়েছে পারিবারিক জীবনের সুখ দুঃখ কষ্ট, শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বিষয়, মানবিক হওয়ার বোধ সম্পর্কিত আলোচনা। রয়েছে সামাজিক ইতিহাস, পারিবারিক ইতিহাস।
জীবনের ধ্রুবতারা গ্রন্থের লেখক দিলীপ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, ‘আমি একজন শিক্ষক। কোনো লেখক নই। প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব তো জুতা পালিশ থেকে চ-ী পাঠ সবকিছুই করতে হয়েছে। আমি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে ৩ বছরের মধ্যে আমার স্কুলকে কুমিল্লা বোর্ডে ফার্স্ট করেছি। ৮০’র দশকে আমার স্ক্লু থেকে স্ট্যার্ন্ড করেছে। তারা বিভিন্ন স্থানে ভালো অবস্থানে আছে। এটাই শিক্ষকদের কাছ থেকে বড়ো পাওনা। আমি ৪২ বছর শিক্ষকতা করেছি। অবসরের পরও আমি সুফিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৫ বছর শিক্ষকতা করেছি। এরপর আমি ভারতে চলে যাই। ওখানেও আমার ছেলেমেয়ে আছে। আমার বাবার সম্পর্কে বইটিতে লিখেছি। আমার স্ত্রী, সন্তান, নাতি নাতনিদের সম্পর্কে লিখেছি। নাতি নাতনিদের আমার অকাল প্রয়াত স্ত্রীর সম্পর্কে লেখেছি।’
সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন,‘দিলীপ রঞ্জন ভৌমিক আমার শ্রদ্ধেয় অগ্রজ শিক্ষক। তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা হয়তো আমার চেয়ে বেশি। জীবনের অনেক কঠিন কঠোর পথে তিনি চলেছেন। তিনি জীবনকে জয় করেছেন। সবাই জীবনকে জয় করতে পারেনা। আমাদের দেশে অনেকে আত্মজীবনী লিখেন এবং সেসব আত্মজীবনী সকলে আগ্রহের সাথে পড়েন। তবে সেই আত্মজীবনীতে অনেক কথা আমরা এড়িয়ে যাই।’
কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘আত্মজীবনীর চাহিদা বেড়েছে। অর্থনীতিবিদ আকবর আলী খানের বই বহুল জনপ্রিয় হয়েছে। আগ্রহের কারণ হলো ব্যক্তি জীবনের মাধ্যমে সময়টাকে জানা যায় এবং সেটা হয় পুরোপুরি বাস্তব। সেখানে গল্প উপন্যাসের মতো আড়ম্বরতা থাকেনা। কিন্তু হিলারি ক্লিনটন, প্রিন্স হ্যারি অকপটে নিজেদের চারপাশ সম্পর্কে লিখতে পারেন। আমাদের সমাজের মানুষ চাইলেও তা পারেনা। তিনি নিরাসক্ত বর্ণনা করছেন। অতিরিক্ত আবেগ কোথাও দেননি। ভারাক্রান্ত করার চেষ্টা তিনি করেননি। আমাদেরকে আবেগাক্রান্ত করেছেন। পংক্তিগুলোর মধ্যে যে রসের ধারা তা আমাদের বিমোহিত করেছে।’
অতিথি আলোচক কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, ‘দিলীপ রঞ্জন ভৌমিক তাঁর পিতার মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করেছিলেন ‘কালাজ্বর’। বাংলাদেশেসহ সারা পৃথিবীতে এক সময় কালাজ্বরে প্রচুর মানুষ মারা যেতো। মাত্র কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ পৃথিবীর প্রথম কালাজ্বর মুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। বইটির যে দিকটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে সেটি হলো, মানবসভ্যতার জন্য চরম শত্রু যে ৩ টি বিষয় সেগুলো হলো দারিদ্র, যুদ্ধ এবং সাম্প্রদায়িকতা। এই তিনটিকে লেখক প্রত্যক্ষ করেছেন এবং এই ৩টির বিরুদ্ধে লড়াই করে আজকের এই গৌরবান্বিত আসনে সিক্ত হয়েছেন’।
কবি ও সাংবাদিক রাশেদ রউফ বলেন, ‘আমরা কালকে পাই, সময়কে পাই, জীবনকে পাই। তিনি কবিতা লিখতে পারতেন, কিন্তু তা না করে লিখলেন আত্মজীবনীমূলক বই। নিজের জীবনকে তুলে ধরেছেন গদ্যকথায়; যেখানে আমরা সেই সময়ের চিত্র পাই।’
অনুুষ্ঠানে অতিথি আলোচকের বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম, সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদ, কবি ও নাট্যজন অভীক উসমান, এম এ কাইয়ুম, লেখক খন রঞ্জন রায় ও ড. বি গাঙ্গুলী প্রমুখ।