সুপ্রভাত ডেস্ক রিপোর্ট »
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বা ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নিতে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ।
অর্থমন্ত্রী আ. হ. ম. মুস্তফা কামাল বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে আমরা যেভাবে চেয়েছি, সেভাবেই সাড়ে চার বিলিয়ন (সাড়ে চারশ’ কোটি) ডলার ঋণ পাচ্ছি। আগামী ফেব্রুয়ারিতেই আমরা প্রথম কিস্তি পাবো। মোট সাত কিস্তিতে ২০২৬ সালের মধ্যে এই ঋণের পুরো টাকা পেয়ে যাবো।
আইএমএফের প্রতিনিধি দল আজ বুধবার (৯ নভেম্বর) শেষ মিটিং করলো অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে। মিটিং শেষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব তথ্য জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তিতে পাবো ৪৪৭ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাস পরপর ৫৫৯ দশমিক ১৮ মিলিয়ন করে সাত কিস্তিতে পুরো ঋণটা পাবো।
তিনি বলেন, পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ড দিয়ে পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের পক্ষ থেকে কোনও শর্ত দেওয়া হয়নি। আমরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেসব বিষয় সংস্কারের কথা ভাবছি, তারাও একই কথা বলেছে। এই ঋণের গড় সুদহার হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে রিজার্ভ গ্রস ৩৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। এর থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে যা থাকে সেটিই হচ্ছে নেট রিজার্ভের পরিমাণ। অপর এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর জানান, আইএমএফ বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ গ্রসে নয়, নেটে দেখাতে বলেছে। এতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনও উপস্থিত ছিলেন।
বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ে বাংলাদেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি ক্রমাগত বাড়ছে। তাতে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়নে (রিজার্ভ) চাপ সৃষ্টি হয়েছে, ডলারের বিপরীতে মান হারিয়ে চলছে টাকা।
রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানিতে লাগাম টানায় অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে; জ্বালানি সংকটের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন।
এমন প্রেক্ষাপটে ডলার সাশ্রয়ে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি বিদেশি উৎস থেকেও অর্থায়ন পাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। এর অংশ হিসেবে আইএ্মএফ এর কাছে ঋণ পেয়ে গত জুলাই মাসে আবেদন করে বাংলাদেশ।
অগাস্টে যুক্তারষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফ এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণের জন্য বাংলাদেশের আবেদনে সাড়া দিয়ে আইএমএফ।
গত দুই সপ্তাহে ঢাকায় বিভিন্ন পর্যায়ে ধারাবাহিক বৈঠক করেন আইএমএফ প্রতিনিধিরা |
এরপর ঋণের শর্ত নিয়ে আলোচনার জন্য আইএমএফ এর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশে আসে।
গত দুই সপ্তাহে সরকারের মন্ত্রীদের পাশাপাশি র্অথ মন্ত্রণালয়, বাংলাদশে ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব র্বোড (এনবআির), জাতীয় সঞ্চয় অধদিপ্তর, বাংলাদশে পরসিংখ্যান ব্যুরো (ববিএিস), বাংলাদশে ফাইন্যান্সয়িাল ইন্টলেজিন্সে ইউনটি, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের পাশাপাশি অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
এসব আলোচনায় খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, আর্থিক খাতের তথ্যর প্রবাহ বৃদ্ধি, আর্থিক খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, ঋণ ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি হ্রাস, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাঠামোগত সংস্কারের মত বিষয়গুলো আসে।