
অর্ধেক আসন খালি রেখে গণপরিবহন চলাচল শুরু
কাঁকন দেব <<<
বুধবার সকাল ৯ টা ৩০ মিনিট, হামজারবাগের বাসিন্দা মো. জাহেদ যাবেন কাজীর দেউড়ি। প্রায় আধঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে মুরাদপুর থেকে তিনি বাসে উঠতে পেরেছেন। আরেক যাত্রী মিজানুর রহমান খান অক্সিজেন মোড় থেকে যাবেন প্রবর্তক মোড়। তিনি সকাল নয়টায় রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ থাকার পর রাইডার পান।
গতকাল শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সরকারি নির্দেশ মেনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করেছে গণপরিহন। চালক ও হেলপাররা সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছেন। তবে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর কথা বলা হলেও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলছেন যাত্রীরা।
গাড়ির সংখ্যা কম হওয়ায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে অনেকেই অফিসে পৌঁছাতে পারেননি। বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। চালকরা অর্ধেকের বেশি যাত্রী তুলেননি।

নগরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীরা বিভিন্ন স্থানে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। জামালখান ডা. খাস্তগীর মোড়ে সকাল নয়টা থেকে ১০টা পর্যন্ত যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। টমটম, টেম্পুতে ও রাইডারে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশে বাস ছাড়ে। সেখানেও বাসগুলোতে অর্ধেক যাত্রী নেওয়া হয়।
মুরাদপরে সকালে অফিসগামী যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। অনেকেই গাড়িতে উঠতে না পেরে হেঁটে গন্তব্যে রওয়ানা দেয়।
চকবাজারের চট্টগ্রাম কলেজ ও কেয়ারি মার্কেটের সামনে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। একটা গাড়ি আসতে না আসতেই মানুষ হুড়োহুড়ো করে লাফ দিয়ে গাড়িতে উঠে পড়েছেন। কিন্ত এক গাড়িতে ছয়জনের বেশি যাত্রী নেওয়া হয়নি। অনেককে তাই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। অনেক যাত্রী গণপরিবহনে উঠতে না পেরে রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গন্তব্যে রওয়ানা দেন। আগ্রাবাদে দেখা যায় একই রকম চিত্র। আবার অনেক স্থানে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করলেও যাত্রী নেওয়া হয়েছে আগের মতোই। নিউমার্কেট থেকে নতুন ব্রিজ থ্রি হুইলারে গাদাগাদি করে যাত্রী নেওয়া হয়েছে।

জামালখানে রাজিব দেবনাথ নামে এক যাত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে যাত্রী পরিবহনে সরকারের সিদ্ধান্ত ভালো। কিন্তু যাত্রী অনুযায়ী গাড়ির সংখ্যা অপ্রতুল। মানুষের ভোগান্তি দুদিকে বাড়ল। একদিকে বাড়তি ভাড়া, অপরদিকে সময়মতো মিলবে না গাড়ি।’
যাত্রীরা বলছেন অর্ধেক যাত্রীর নিয়ম মানা হলে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। আশরাফুল আলম মামুন নামে এক সংবাদকর্মী লিখেছেন, ‘অফিস আদালত খোলা, গাড়িতে এক সিটে একজন। গাড়ির জন্য হাহাকার। উত্তর চট্টগ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে।’
মোস্তাক আহমেদ নামে একজন লিখেছেন, ‘পরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রথম দিনেই অনিয়ম, শান্তির হাট টু নতুন ব্রিজ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ডাবল করে। এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে না পারার ভোগান্তি তো আছেই।’
ঈশিতা বিশ্বাস নামে একজন লিখেছেন ভাড়া কি দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে, ‘নাকি ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তাহলে দ্বিগুণ বাড়ানো হলে প্রতিবাদ নয় কেন?’
যাত্রীরা বলছেন ভোগান্তি কমাতে হলে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে হবে। না হলে ভোগান্তি বাড়বে।
গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি বিষয়ে ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি নাজের হোসাইন সুপ্রভাতকে বলেন, ‘একদিকে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, আবার গণপরিবহনের ভাড়া বেড়েছে, মানুষ সবমিলে চাপে পড়ে গেছে। সরকার পরিবহন মালিকরা চাওয়ার সাথে সাথে ভাড়া বৃদ্ধি করেছে।’
দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব না। সরকারি নির্দেশনা মানতে প্রশাসনের মনিটরিং জোরদার করতে হবে।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দ্বিগুণ ভাড়া আদায় ও অন্যন্যা বিষয়ে নজরদারির জন্য বিএআরটিএ ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। তারা বলছে, গতকাল ছিল অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের প্রথমদিন। যাত্রীদের কাছ দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের বিষয়টি মনিটরিং করা হবে এবং সার্বিক বিষয়ে নিয়ে জেলা প্রশাসন কাজ করছে, সামনে এর অগ্রগতি মিলবে।
এদিকে গতকাল রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে মোটরসাইকেলের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আপাতত এই নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী দুই সপ্তাহের জন্য বা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকলে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের বরাত দিয়ে বুধবার সরকারের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এ কথা জানিয়েছে।
