সরেজমিন: চাক্তাই থেকে কালুরঘাট চার লেনের সড়ক নির্মাণ
ভূঁইয়া নজরুল »
হামিদ চর শাহজী পাড়ার ৫৫ বছর বয়সী বাসিন্দা আবদুর রউফ। জীবনভর জোয়ার-ভাটার পানিতে অর্ধ নিমজ্জিত এলাকায় উঁচু রাস্তা দেখে আনন্দিত। এখন এই রাস্তা দিয়ে অসংখ্য গাড়ি চলাচল করবে এবং শহরে যেতেও দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। আবদু রউফের মতো নদী তীরের শতাধিক মানুষ প্রতিদিন রাস্তার নির্মাণ কাজ দেখছে। তাদের সবার একই কথা এতে পুরো এলাকা বদলে যাবে।
গত বৃহস্পতিবার চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত সরেজমিনে নদী তীরে চার লেনের সড়ক নির্মাণ কাজ দেখতে গিয়ে দেখা যায়, সাড়ে আট কিলোমিটার দীর্ঘ রোডের মাটি ভরাটের কাজ প্রায় শেষ। জোয়ারের পানি থেকে নদী তীরের এলাকাকে রক্ষা করতে ১২টি খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে ৯টির নির্মাণ কাজ শেষ এবং তিনটি এখনো নির্মাণাধীন। নদীর ঢেউ থেকে রাস্তাটিকে রক্ষা করতে প্রায় ২৩ লাখ সিমেন্টের ব্লক নির্মাণ করা হচ্ছে।
বগুরা সারিয়াকান্দি উপজেলার খোকন নামের এক শ্রমিক সিমেন্টের ব্লক নির্মাণ করছে। তার হাতে থাকু কোনি (রাজমিস্ত্রির কাজে ব্যবহৃত উপকরণ) দিয়ে সিমেন্ট, পাথর ও বালির মিশ্রণগুলো সমান করছে। জানতে চাইলে খোকন বলেন, ‘এখানে কর্মরত বেশিরভাগ শ্রমিকের বাড়ি উত্তরবঙ্গে। আমরা এখন ব্লক নির্মাণের কাজ করছি। এই ব্লকগুলো নদীর দিকের অংশে দেয়া হবে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, কল্পলোক আবাসিক এলাকা থেকে বলিরহাট পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ প্রায় শেষ হলেও বলিরহাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত অংশে একটু পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়া মাটিগুলো দেবে যাওয়ার সময় লাগবে।
এ সড়কের কালুরঘাট অংশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠবে। এছাড়া এখন এই সড়কের হামিদচর অংশে চট্টগ্রামের সকল সরকারি সংস্থার অফিস স্থানান্তরের একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন,‘ চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত প্রকল্পটি শুধু চার লেনের একটি সড়ক নয়। চার লেনের সড়ক সুবিধার পাশাপাশি জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থেকেও নগরবাসীকে রক্ষা করবে। এই প্রকল্পের আওতায় ১২টি স্লুইস গেট রয়েছে। জলাবদ্ধতার মেগা প্রকল্প, চাক্তাই থেকে কালুরঘাট প্রকল্প এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের আওতায় ৪০টি স্লুইসগেট নির্মাণ কাজ শেষ হলেই নগরবাসী জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।’
কিন্তু যথাসময়ে অর্থ ছাড়ের অভাবে প্রকল্পের কাজ ধীরে এগুচ্ছে উল্লেখ করে কাজী হাসান বিন শামস বলেন,‘ চাহিদা অনুযায়ী অর্থ আমরা পাচ্ছি না। গত দুই বছরে করোনা মহামারির কারণে সঠিকভাবে অর্থ দেয়া হয়নি। এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকলে প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রিতা বাড়বে।’
বাজেটের অর্ধেক অর্থও পাওয়া যায়নি
চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার এই সড়কটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৭ সালে। ডিপিপি অনুযায়ী ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নানা সীমাবদ্ধতায় প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। সেহিসেবে প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন,‘ যদি নিয়মিত অর্থ ছাড় নিশ্চিত করা হয় তাহলে ২০২৩ সালের মধ্যে আমরা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবো। ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।’
কি পরিমাণ অর্থ পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকার মধ্যে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৭৪ কোটি টাকা পাওয়া গেছে।’
উল্লেখ্য, নগরীর চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে সাড়ে আট কিলোমিটার দীর্ঘ রিং রোড কাম বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষে শাহ আমানত সেতু থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত নদীর তীর ঘেঁষে মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। পুরো নদী তীর নগরবাসীর বিনোদনের একটি স্পটে পরিণত হবে।