নিজস্ব প্রতিবেদক »
নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র জাতিসংঘ পার্ক। কিন্তু এ পার্কের ভিতরের বিভিন্ন অংশে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে মাটির স্তূপ ও আবর্জনা। কয়েকটি স্থানে অস্থিত্বহীন পার্কের সীমানাপ্রাচীর। দীর্ঘদিন প্রশাসনের অবহেলায় এ পার্ক পরিণত হয়েছে মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের নিরাপদ স্থান।
গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পার্কটির ভিতরে হাঁটার পথের বড় অংশ জুড়ে জমে আছে দীর্ঘদিনের নালার ময়লার ভাগাড়। কিছু দূর গেলেই দেখা যায় মাদকের বোতল ও প্যাকেট। অবস্থাদৃষ্টে অনেকটা পরিত্যক্ত একটি জায়গার মতোই। জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ নগরের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার পার্কটি একসময় নগরের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। সন্ধ্যা নামলেই দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর থাকত এটি। কিন্তু গত দশ বছর ধরে চরম অবহেলা-অযতেœ পড়ে আছে বিনোদন কেন্দ্রটি। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের বিনামূল্যের এ কেন্দ্রটি এখন একটি পরিত্যক্ত জায়গা, জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থা। গণপূর্ত বিভাগের জায়গায় গড়ে ওঠা পার্কটি দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করে আসছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।
জাতিসংঘ পার্ক এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সৌরভ কুমার দে নামক এক ব্যক্তির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ডাক্তারের নির্দেশে আমি প্রতিদিন বিকালে এই পার্কের রাস্তায় হাঁটি। এখানে সন্ধ্যার পর থেকে এলাকা অনিরাপদ হয়ে উঠে। মাদকসেবীরা বিভিন্ন স্থান থেকে মাদক নিয়ে এসে পার্কের ভিতরে সেবন করে। বেশ কয়েকবার এখানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া সন্ধ্যার পর জাতিসংঘ পার্কটি এলাকাটি মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।’
স্থানীয় রউফ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এই পার্কে সন্ধ্যার পর আর মানুষ ভয়ে হাঁটে না। প্রতিদিন কোনো না কোনো অপরাধের ঘটনা ঘটে। মাদক সেবনের নিরাপদ স্থান হিসেবে বিভিন্ন মাদকসেবীরা স্থানটি ব্যবহার করছে।’
জাতিসংর্ঘ পার্কের ইনচার্জ হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমি চসিকের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছি। পার্কটি দেখাশোনা করছি ১৬ বছর ধরে। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন এলাকা মাদকসেবীরা জমায়েত হয়ে এই পার্কে মাদক সেবন করে। পার্কটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত পড়ে থাকাতেই অপরাধীরা নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে। কিছুদিন আগেও এই এলাকা থেকে এক ব্যক্তির ৭ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকবার মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। জনশূন্য পরিবেশ হওয়াতেই দিনেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।’
চসিকের ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনু বলেন, ‘জাতিসংঘ পার্কে মাদকসেবীরা থাকতে পারে না। আমি ওই স্থানটি নিয়মিত তদারকি করি। আমার ওয়ার্ডের একজন পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা দিনে দু’বার পার্কটি পর্যবেক্ষণ করে। এখনো পর্যন্ত আমার কাছে অপরাধের তথ্য আসেনি।’
চসিকের সহকারী স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ আবদুল্লাহ আল ওমর বলেন, ‘জাতিসংঘ পার্কটি চসিকের অধীনে নেই। এসব বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। এসব দেখাশোনা করে গণপূর্ত বিভাগ।’
পার্কটি এখনো চসিকের অধীনে নিরাপত্তা কর্মীরা দেখাশোনা করছে তাহলে চসিক কেনো জানে না- এমন মন্তব্যে তিনি বলেন, ‘গণর্পূত পূর্ণাঙ্গ কাজে নামলে আমাদের কর্মীরা চলে আসবে।’
এদিকে চসিকের মালামাল থাকার কারণে কাজে একটু ধীরগতি হচ্ছে বলে জানান গণপূর্ত বিভাগ।
গণপূর্ত বিভাগ চট্টগ্রাম-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গূহ বলেন, ‘জাতিসংঘ পার্কের উন্নয়নের জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এখনো চসিকের অনেক যন্ত্রপাতি এখানে থাকার কারণে আমাদের কাজে একটু ধীরগতি হচ্ছে। চসিক তাদের মালামালগুলোর জন্য ইতিমধ্যে নিলাম ঘোষণা করেছে। তারা তাদের মালামাল নিয়ে গেলে আমরা সরাসরি পার্কটির উন্নয়নের কাজে নেমে পড়বো।’
চসিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৪ সালে গণপূর্ত বিভাগ পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় এক একর জায়গায় পার্কটি গড়ে তোলে। ২০০২ সালে এটি জাতিসংঘ পার্ক নামকরণ করা হয়। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্কের একাংশে ১২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫০ ফুট প্রস্থের দুটি সুইমিং পুল এবং সাত হাজার বর্গফুটের একটি জিমনেশিয়াম নির্মাণকাজ শুরু করে চসিক। যা ২০১৫ সালের জুন মাসে শেষ হয়। কিন্তু বর্তমানে এটি অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।