অনলাইন কেনাকাটায় ঝুঁকছেন ক্রেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক »

আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ক্রেতারা ঝুঁকছেন অনলাইন উদ্যোক্তাদের তৈরি বিভিন্ন ই-কমার্স (ইলেকট্রনিক কমার্স) ও এফ কমার্স (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে। দেশীয় তৈরি ও বিদেশি বাহারি পণ্য নিয়ে এসব উদ্যোক্তারা হাজির হয়েছেন ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সময়ের স্বল্পতা ও গরমের তীব্রতার কারণে মুক্তি পেতে অন্যবারের তুলনায় এবার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে বেশি ঝুঁকছেন ক্রেতারা।

এবার অনলাইনে পণ্যের অর্ডার ও ডেলিভারি কয়েকগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। ২০২০ সালে এ খাতে ৩০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখলেও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার অভিযোগে দেশে কিছুটা আস্থার সংকটে পড়ে এ খাত। তবে অন্ধকার পেরিয়ে আলোর পথে হাঁটছে বলে মনে করে এ খাতের উদ্যোক্তারা।

অনলাইন কেনাকাটায় সুবিধাও অনেক। মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে পণ্য কেনাকাটায় ছাড়ের ছড়াছড়ি। ঘরে বসে বিভিন্ন পণ্য যাচাই-বাছাই করে অর্ডার করে পছন্দমত পণ্য কিনছেন তারা। তাছাড়া ৪০ থেকে ১০০ টাকার চার্জের বিনিময়ে একদিনের মধ্যে পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে ক্রেতাদের ঘরে।

নগরীর কাজীর দেউড়ির আরিফুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী জানান, গতবছর আমার পরিবার নগরীর বিভিন্ন মার্কেট থেকে পণ্য কিনেছিলাম। কিন্তু এবার মার্কেটে যাওয়া হয়নি। গত দুদিন আগে একটি অনলাইনে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে মোবাইল অর্ডার করছিলাম। আজকে (মঙ্গলবার) সকালে বাসায় দিয়ে গেল প্রতিষ্ঠানের লোকেরা। পাশাপাশি ঈদের একটি উপহারও পেলাম। বলা যায় এবার আমার পরিবারের সবাই যার যার পছন্দমত অনলাইন থেকে কেনাকাটা করেছে।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, আগে ঈদ আসলে নিজের ব্যবসা সামলানো, পরিবারের সবার পছন্দমত কেনাকাটা নিয়ে এক ধরনের চিন্তায় থাকতাম। কিন্তু এবার পরিবারের সবাই যে যার যার মতো করে অনলাইনে অর্ডার করে কিনেছে। বরং আমার জন্যও কিনে ফেলেছে। তাছাড়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পণ্য কিনলে ক্রেতারা পাচ্ছেন বিশেষ মূল্যছাড়। এর সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পরিশোধে রয়েছে ক্যাশব্যাক অফার।

বিভিন্ন সূত্র মতে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে কাজ শুরু করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ই-কমার্স খাতসংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে গ্রাহকদের অর্থ ফেরত প্রদান, ই-কমার্স ব্যবসার জন্য নিবন্ধনসহ বেশ কিছু উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে।

ই-কমার্স খাতে জড়িত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার চেয়েও বেশি বাজার রয়েছে এ খাতে। প্রতি মাসেই দুই থেকে আড়াই লাখ অর্ডার থাকছে। আগামী বছরের মধ্যে দেশের ই-কমার্স খাত ২৫ হাজার কোটি টাকার ওপর পৌঁছাবে।

ঈদের কেনাকাটা নিয়ে জানতে চাইলে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) এর অর্থ সম্পাদক ব্রেকবাইট ই-বিজনেসের প্রতিষ্ঠাতা আসিফ আহনাফ বলেন, গতবছর ঈদে ই-কমার্স খাতে লেনদেন হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এবার পহেলা বৈশাখ ও ঈদ কাছাকাছি সময়ে থাকার কারণে লেনদেন অনেক বেড়েছে। এ বছর ঈদ উপলক্ষে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য অর্ডারের আজকেই (গতকাল) শেষ দিন। এ পর্যন্ত এবার এ খাতে লেনদেন হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এখন প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করবে ঈদের আগেই যেন সকল গ্রাহকদের পণ্য নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার।

তিনি আরও বলেন, আগে ইকমার্সখাতে ব্যবসা করতো শুধুমাত্র ই-কর্মাস ওয়েবসাইটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু এবছর মার্কেটকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী ও তরুণরা অনলাইনমুখী হয়েছেন। যার ফলে এ খাতে ঝুঁকছেন ক্রেতারা।

আগামীর সম্ভাবনা নিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি আগামীতে এ খাত বিশাল অবদান রাখবে। বর্তমান এ খাতে ই কমার্স ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবসা করছে প্রায় সাড়ে চারহাজার প্রতিষ্ঠান এবং ফেসবুকভিত্তিক ই-কমার্স বা এফ-কমার্স আছে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠান মার্কেটে কাজ করছে।

এদিকে ই-কমার্স সাইটের পাশাপাশি বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক পেইজ আর্ট অ্যান্ড ইস্টিচড, রমনীর সাজ ও নীল আকাশ’র মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটার পেজগুলোতেও বসেছে ঈদের কালেকশন নিয়ে। পেজগুলোর বেশিরভাগই ভারতীয় পোশাকের কালেকশন।

এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটারসহ অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন পেইজের মালিকরা বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সেইসঙ্গে ই-কমার্স সাইটগুলোর সার্ভিসে গ্রাহকের মধ্যে একটা আস্থা তৈরি হয়েছে। তাই অন্যবারের তুলনায় এবার ক্রেতার চাপও বেশি।

অনলাইন শপের ক্রেতা তানিয়া রহমান বলেন, অনলাইন শপের মাধ্যমে আমরা সহজেই প্রিয় পণ্য পেয়ে যাচ্ছি; যা মার্কেটে কেনাকাটা করলে সম্ভব হতো না। যানজট পেরিয়ে শপিংমলে গিয়ে দরকষাকষিতে অনেকসময় ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু অনলাইনে পণ্য দেখে অর্ডারের সুযোগ আছে, পছন্দ না হলে ফেরতেরও সুযোগ থাকে। সবমিলে অনেক সময় টাকারও সাশ্রয় হয়।