মিরসরাইয়ে মহামায়া ও খৈয়াছরা ও ঝর্না পর্যটন আধুনিকায়ন প্রকল্প
রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
মিরসরাইয়ের মহামায়া সেচ প্রকল্পকে আধুনিকায়ন ও খৈয়াছরা ঝর্না এলাকাকে পর্যটকমুখী করতে ২০১৭ সালে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত দুটি প্রকল্প হাতে নেয় চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ। কিন্তু প্রস্তাবিত প্রকল্প দুটি এখনো ঝুলে আছে। ফলে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পর্যটকরা।
জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষকে পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ বৃদ্ধি লক্ষ্যে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মহামায়া সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটির উদ্বোধন করেন। মহামায়া সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর এটি পর্যটন এলাকা গড়ে উঠে। চলতি বছর ভ্যাটসহ প্রায় ৯০ লাখ টাকায় পর্যটন এলাকাটি ইজারা নেন এ এইচ এন্টারপ্রাইজ। অন্যদিকে ২০১৪ সালে বারইয়াঢালা জাতীয় উদ্যানের অধীনে থাকা খৈয়াছরা ঝর্নাটির সন্ধান পান স্থানীয়রা। চলতি বছর প্রায় ১২ লাখ টাকায় খৈয়াছরা ঝর্ণাটি ইজারা নেয় মেসার্স রেড চিলি এন্টারপ্রাইজ। পর্যটকদের ওই দুটি পর্যটন এলাকায় প্রবেশ করতে জনপ্রতি ২০ টাকা প্রবেশমূল্য পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া পর্যটন এলাকার মধ্যে বিভিন্ন রাইড ব্যবহারে গুনতে হয় শত শত টাকা। কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আধুনিক সুযোগ সুবিধা না থাকায় পর্যটকদের বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয় নিয়মিত। তাছাড়া খৈয়াছরা ঝর্ণায় যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক।
এ সকল সমস্যার কথা চিন্তা করে ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ দুই পর্যটন এলাকাকে আধুনিকায়ন করতে দুটি প্রকল্প হাতে হয়। প্রকল্প দুটির মধ্যে খৈয়াছরা ঝর্নায় জীববৈচিত্র্য রক্ষা, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার ও পর্যটকদের কাছে টানতে ২৫ কোটি টাকা প্রকল্প ও মহামায়া সেচ প্রকল্প এলাকায় ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য নেয়া হয় ২৬ কোটি ৭০ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প।
২৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত খৈয়াছরা ঝর্না প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে গাড়ি পার্কিং নির্মাণ, ২০০ হেক্টর সাইকাস উদ্ভিদ বনায়ন, ৬০০ হেক্টর দুষ্প্রাপ্য বিপদাপন্ন দেশীয় প্রজাতির চারা রোপণ, ফলদ প্রজাতি ও স্থানীয় প্রজাতির চারা রোপণ, যাতায়াতের জন্য ৫টি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, সড়ক নির্মাণ, পাঁচটি শৌচাগার ও ওয়াশরুম নির্মাণ, দুই কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন, ১৫ ডেসিমল জমি অধিগ্রহণ, ৩টি গভীর নলকূপ স্থাপন, নিরাপত্তার জন্য আরসিসি বাউন্ডারি নির্মাণ ইত্যাদি।
২৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার প্রস্তাবিত মহামায়া সেচ প্রকল্পকে আধুনিক পর্যটন জোন প্রকল্পে রয়েছে এক পাহাড় থেকে অন্যপাহাড়ে যেতে ২৫০ মিটারের দুটি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ, তিনতলা বিশিষ্ট পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ, ৭০০ মিটার দীর্ঘ সীমানা প্রচীর নির্মাণ, ৪টি পিকনিট স্পট নির্মাণ, ২০০ মিটার অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি সড়ক নির্মাণ, কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন, লেকের পানিতে ঘুরতে পরিবেশবান্ধব নৌকা কেনা, ৪৫০ হেক্টর ফলদ, ওষুধি ও বিলুপ্তপ্রায় গাছের বনায়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ।
এ বিষয়ে চানতে চাইলে মিরসরাই রেঞ্জ কর্মকর্তা আবু তাহের জানান, তিনি এখন দাপ্তরিক কাজে অফিসের বাইরে রয়েছেন, তাই না জেনে কিছু বলতে পারছেন না।
বক্তব্য জানতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোজ্জামেল হক শাহ চৌধুরীকে একাধিক বার ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার হোয়াটঅ্যাপ নম্বরে ক্ষুদ্রে বার্তা পাঠিয়েও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।