নিজস্ব প্রতিবেদক »
নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে চারটি মামলা দায়ের করেছেন। এসব মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম) মাহবুবের রহমান শামীম, মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করসহ পাঁচ থেকে ছয়শ নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। ২৪ জনকে গ্রেফতার করার পর গতকাল মঙ্গলবার হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সোমবার মধ্যরাতে কোতোয়ালী থানায় মামলাগুলো করেন পুলিশ। এর মধ্যে বিস্ফোরক ও পুলিশের ওপর হামলা অভিযোগে কোতোয়ালী থানা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় ট্রাফিক পুলিশ, রেডিসনের সামনে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জেলা পুলিশ এবং সংঘর্ষের ঘটনার জন্য কোতোয়ালী থানা পুলিশ সন্ত্রাস দমন আইনে আরও একটি মামলা দায়ের করেন।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, ‘যে কোন রাজনৈতিক দলের অনুমতিক্রমে সভা-সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সমাবেশের নামে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা, অগ্নিসংযোগ ও দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি তো আইন মেনে নেবে না। সোমবারের কাজীর দেউড়ির ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করা হয়েছে। যার মধ্যে কোতোয়ালী থানার পুলিশ বাদি হয়ে তিনটি এবং জেলা পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। এসব মামলায় ৯০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অভিযান চালিয়ে ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর তাদেরকে হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে। নগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাগুলোর ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঘটনার দিন রাতেই নগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বাসায় অভিযান ও তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। ঘটনার দিন থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪জন বিএনপি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নিজ বাসা ছেড়ে অন্য জায়গায় অবস্থান করছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম) মাহবুবের রহমান শামীম, মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পাওয়া যায়।
বিএনপির সাবেক সহ দপ্তর সম্পাদক ইদ্দিস আলী বলেন, আমাদের নেতা কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে আইনগত প্রক্রিয়ায় হাজত থেকে মুক্ত করতে আইনজীবীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সোমবার রাত থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশ অভিযান চালায়।
তবে পুলিশের অভিযানে বিএনপির নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কোন ধরনের অনৈতিক আচরণ করেননি বলে তিনি জানান।
বিএনপির নগর আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের যোগাযোগ বন্ধের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হয়তো গ্রেফতার এড়াতে সাময়িক যোগাযোগ বন্ধ রেখেছেন। শীঘ্রই খুলবে। আমাদের নেতা শাহাদাতের বর্তমান ৮৮টি মামলা, বক্করের ৭৬টি মামলা প্রক্রিয়াধীন। প্রতিমাসের ৩০ দিনই কোর্টে হাজিরা দিতে হয়। তারা সাময়িকভাবে গ্রেফতার এড়াতে সরে আছেন।’
ঘটনায় কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত বা প্রতিবাদ এসেছে কি’না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো কোন ধরনের সিদ্ধান্ত আসেনি। পুলিশ যখন মামলা দিয়েছে, আপাতত আমরা আইনি প্রক্রিয়ার কাজে ব্যস্ত। আসলে আপনাদের জানানো হবে।’