নিজস্ব প্রতিবেদক »
চাল নিয়ে খাদ্য বিভাগের সাথে চালবাজির দায়ে লাইসেন্স বাতিলসহ জামানত হারালেন চট্টগ্রামের ২১ চাল মিলের প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে ১৬টি চাল মিলের লাইসেন্স বাতিল ও ৫টি চালমিলকে কারণ দর্শানোর পাশাপাশি তাদের অসরবরাহকৃত চালের আনুপাতিক হারে জামানত বাজেয়াপ্ত করেছেন খাদ্য বিভাগ।
২৪ অক্টোবর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল কাদের খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে তাদের লাইসেন্স বাতিল করে আদেশ জারি করেন।
চাল মিলগুলো হলো নগরের চান্দগাঁওয়ের ১টি, পাহাড়তলী এলাকার ৫টি, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী ও আনোয়ারার ২টি করে এবং মিরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, লোহাগাড়া ও কর্ণফুলীর ১টি করে রাইস মিল রয়েছে।
খাদ্য বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, বাতিল হওয়া চাল মিলগুলো হলো নগরের চান্দগাঁও এলাকার মো. সাইফুদ্দীনের মালিকানাধীন রহমানিয়া মডার্ন রাইস মিল ও পাহাড়তলীর হাজী আবদুল মালেকের মালিকানাধীন শাহজালাল অটো রাইস মিল, মোজাম্মেল হকের মালিকানাধীন শাহজালাল অটো রাইস মিল ও আল আমিন অটো রাইস মিল, হোসনেয়ারা বেগমের মালিকানাধীন আল মামুন অটো রাইস মিল এবং জাবেদ হোসেনের মালিকানাধীন হাফেজ আহমদ অটো রাইস মিল।
এছাড়া চট্টগ্রামের সাত উপজেলার মধ্যে মিরসরাইয়ের নুরুল আলমের মালিকানাধীন হাজী আলম রাইস মিল, ফটিকছড়ি উপজেলার সোহেল রানার মালিকানাধীন মদিনা মেজর রাইস মিল ও মদিনা অটোমটিক ড্রায়ার রাইস মিল, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার আহমদ সফুর মালিকানাধীন আল মদিনা অটো রাইস মিল, বোয়ালখালী উপজেলার মেহেদি হাসানের মালিকানাধীন দরবার অটো রাইস মিল ও মো. সৈয়দের তৈয়বিয়া অটো রাইস মিল।
লোহাগাড়া উপজেলার মমতাজ আহমদের পঠান ভান্ডার অটো রাইস মিল, আনায়ারা উপজেলার জাহেদুল হকের মালিকানাধীন জাহেদ অটো রাইস মিল ও আকতার হোসেনের এন হক অটো রাইস মিল এবং কর্ণফুলী উপজেলার আবু তাহেরের মালিকানাধীন শাহ আমির অটো রাইস মিল। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চাইলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘বোরো সিজনে মিলগুলো চুক্তির যোগ্য ছিল, কিন্তু মিলগুলোর মালিক চুক্তি করেনি। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ এসেছে যে যোগ্য থাকা স্বত্ত্বেও যেসব মিল চুক্তি করেনি তাদের লাইসেন্স বাতিল করে দিতে হবে। ওই নির্দেশনার আলোকে বাতিল করেছি। এবং মিলগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
বাকি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের জামানত বাতিল প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘চুক্তি করেছে কিন্তু কোনো চাল সরবরাহ করেনি এমন ১টি মিলকে জামানত বাজেয়াপ্তসহ লাইসেন্স বাতিল করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এবং চুক্তির পরিমাণের ৮০ শতাংশের কম সরবরাহকারী চারটি চালমিলকে আংশিক অপরাধ হিসেবে ধরে নিচ্ছি।
তাদের বিশেষ বিবেচনায় অসরবরাহ করা চালের অনুপাতিক হারে জামানত বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৩১ আগস্ট বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের সময়সীমা শেষ হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সরকারের বোরো সংগ্রহ কর্মসূচিতে সহযোগিতা না করায় চট্টগ্রামে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রায় প্রভাব পড়েছে। চলতি বছরের বোরো মৌসুমে চট্টগ্রাম থেকে ৮২ হাজার ৫৫৬ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২৭ হাজার ১০২ মেট্রিকটন ধান। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও রয়েছে বিশাল ব্যবধান। ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৪ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৭১ হাজার ৮১৭ মেট্রিকটন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে ২২ হাজার ৭০৮ মেট্রিকটন আতপ চাল সংগ্রহের বিপরীতে অর্জন হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার ৫৫৭ মেট্রিকটন। লাইসেন্স বাতিলকৃত এসব চালকল মালিকদের সহযোগিতা থাকলে ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতো বলে মনে করছে খাদ্য বিভাগ।