২ বিলিয়ন বছর পুরনো উল্কাপিণ্ডে মানুষের ডিএনএ আবিষ্কার

মুহাম্মদ আস্রাফুল আলম সোহেল »

মহাবিশ্বে প্রাণ বা জীবন সম্পর্কে আমরা যতটুকু জানতাম তার সবকিছুকে চ্যালেঞ্জ করে বিজ্ঞানীরা এমন এক আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ২ বিলিয়ন বছরেরও বেশি পুরনো একটি উল্কাপিণ্ডে মানুষের ডিএনএ-এর চিহ্ন সনাক্ত করেছেন । উল্লেখ্য যে, ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড) হচ্ছে এক ধরনের জৈব অণু যা প্রতিটি জীবের জিনগত তথ্য বহন করে । এটি কোষের গঠন, কার্যকারিতা এবং প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করে। ডিএনএ দীর্ঘ সময়ের জন্য জিনগত তথ্য সংরক্ষণ করে, প্রোটিন সংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী ধারণ করে এবং পিতামাতা থেকে সন্তানের মধ্যে জিনগত উপাদান স্থানান্তরিত করে (বংশগতি সঞ্চারিত করে ) । সাম্প্রতিক গবেষণা বা উন্নত জিনোমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে ডিএনএ সদৃশ আণবিক কাঠামোটি মানুষের ডিএনএ এর সাথে আশ্চর্যজনকভাবে মিল রয়েছে, যেটি নির্দেশ করে যে জটিল জৈব অণু এমনকি জীবন-সম্পর্কিত উপাদান যা পূর্বে বিশ্বাস করা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল । তাহলে, পৃথিবীর প্রাণ কি মহাবিশ্বের অন্য কোথাও উৎপত্তি হয়েছিল? এক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উদ্ধার করা উল্কাপিণ্ডটির দূষণের সম্ভাবনাকে বাদ দেওয়ার জন্য সংশয়বাদীরা আরো কঠোর পরীক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই আশ্চর্যজনক আবিষ্কার পৃথিবীতে প্রাণ বা জীবনের আবির্ভাব এবং জীবনের ভিত্তিগুলো মহাবিশ্ব জুড়ে ভ্রমণ করার সম্ভাবনা সম্পর্কে গভীর প্রশ্ন উত্থাপন করে । আমাদের ডিএনএ-এর সাথে মহাজাগতিক সংযোগ থাকার সম্ভাবনা জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং মানব ইতিহাসে একটি নতুন সীমানা খুলে দিয়েছে । সম্ভবত এই অর্থে, আমরা পৃথিবীর প্রথম বাসিন্দা নই বরং মহাবিশ্বের ভ্রমণকারী। যদিও বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিচ্ছেন- এর অর্থ এই নয় যে, মানুষের অস্তিত্ব ২ বিলিয়ন বছর আগে বিদ্যমান ছিল । কিন্তু এটি ইঙ্গিত দিতে পারে যে ডিএনএ-এর উপাদান বা পূর্বসূরী মহাকাশে উপস্থিত ছিল, যা পৃথিবীর মত গ্রহগুলোতে জীবনের উপাদান তৈরি করেছিল । ঐতিহ্যগতভাবে, গবেষকরা বিশ্বাস করতেন যে জীবনের জটিলতা কোটি কোটি বছর ধরে কেবল পৃথিবীতেই বিকশিত হয়েছে । আবিষ্কারটি এই সম্ভাবনার পরিচয় দেয় যে বহির্জাগতিক উপাদান জীবনের বিকাশে অবদান রেখেছিল, যা প্যানস্পার্মিয়ার তত্ত্বকে (থিওরিস অফ প্যানস্পার্মিয়া) সমর্থন করে, যেখানে জীবনের প্রয়োজনীয় অণুগুলো গ্রহাণু, ধূমকেতু এবং উল্কাপিণ্ডের মাধ্যমে গ্রহগুলোতে বিতরণ হয়েছে । যদি নিশ্চিত করা হয়, তাহলে এই আবিষ্কার জীববিজ্ঞান, বিবর্তন এবং মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে । এটি ইঙ্গিত দিতে পারে যে, জীবনের উপাদানগুলো পূর্বে কল্পনা করার চেয়ে অনেক বেশি সাধারণ এবং পৃথিবীতে জটিল জীবনের উত্থান একটি বৃহত্তর মহাজাগতিক প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে । আবিষ্কারটি মহাবিশ্বের অন্যান্য গোপন রহস্য সম্পর্কে আরো বিস্ময় এবং কৌতূহল জাগিয়ে তোলে। জীবন বা এর মূল উপাদান, অন্য কোথাও কি থাকতে পারে? আমরা কি নক্ষত্রদের সাথে এমনভাবে সংযুক্ত যা আমরা এখনো বুঝতে পারিনি? এই আবিষ্কার আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মহাবিশ্ব এমন রহস্যে পরিপূর্ণ যা অন্বেষণের অপেক্ষায় রয়েছে । তথ্যসূত্র ও ছবি: ডিসকভার দি ইউনিভার্স, গুগল।