ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই অংশের ২৮ কিলোমিটার
গতকাল বাস দুর্ঘটনায় আহত ১০
এক বছরে নিহত হয়েছে ২৭ জন, আহত ৯৩
রাজু কুমার দে, মিরসরাই :
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। বারবার ঘটছে দুর্ঘটনা। বেপরোয়া চালকদের শাস্তি না হওয়ায় দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সর্বশেষ গতকাল রোববার বেলা ১২টায় মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট-খাগড়াছড়ি সড়কের হিঙ্গুলী ব্রিজ এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে আহত হয় কমপক্ষে ১০ জন। এর আগে শনিবার (১২ মার্চ) ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনাপাহাড় এলাকায় একটি লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীতমুখী একটি মাইক্রোবাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে পার্থ গুহ ও হানিফ আহম্মদ নামে দুজন শিল্পী নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা এখনও আশংকাজনক।
মিরসরাই, জোরারগঞ্জ থানা, জোরারগঞ্জ চৌধুরীহাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ও ফায়ার সাভির্সের তথ্যমতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চের ১৪ তারিখ পর্যন্ত ১১৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছে ২৭ জন ও আহত হয়েছে কমপক্ষে ৯৩ জন।
জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে উপজেলার মুহুরী প্রজেক্ট সড়কে একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চায়ের দোকানে ঢুকে পড়লে দুজন নিহত ও ৪ জন আহত হয়।
জোরারগঞ্জ চৌধুরীহাট পুলিশ ফাঁড়ির তথ্য মতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ধুমঘাট ব্রিজ থেকে বড়তাকিয়া বাজার পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটারে গত ১৫ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক, ওভারটেকের প্রতিযোগিতা ও অদক্ষ চালকের কারণে বারবার ঘটছে দুর্ঘটনা। মিরসরাইয়ের ২৮ কিলোমিটারে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হলো জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের বিএসআরএম গেট, মিরসরাই সদর ইউনিয়নের মিঠাছড়া বাজারের প্রবেশ মুখ, সুফিয়া রোড, বড়তাকিয়া বাজার, মিরসরাই প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সামনে হাদিফকিরহাট।
রোববার দুর্ঘটনা কবলিত হিল কিং বাসের যাত্রী নূর নাহার জানান, চালকের নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালানোর কারণে বাসটি দুর্ঘটনায় পড়েছে। গাড়ি চালানোর সময় চালককে আরো বেশি সতর্ক হতে হবে।
জোরারগঞ্জ চৌধুরীহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফিরোজ হোসেন জানান, হাইওয়ে পুলিশ সব সময় মহাসড়কে টহল দিয়ে থাকে। এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন স্পটে অভিযান পরিচালনা করে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছে।
যাত্রীবাহী বাস খাদে, আহত ১০
মিরসরাইয়ে একটি যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম এলাকার মো. আবুল কাশেম (৩৮), নূর নাহার (৩৩), রাকিবুল ইসলাম (১৭), রবিবার ইসলাম (৫), সুমাইয়া আক্তার সুমি, কাশফিয়া আক্তার (১২), জেরিন (২৩) সহ ১০ জন। রোববার বেলা ১২টায় বারইয়ারহাট-খাগড়াছড়ি সড়কের হিঙ্গুলী ব্রিজ এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার বেলা ১২টায় খাগড়াছড়িগামী হিল কিং নামক একটি যাত্রীবাহী বাস হিঙ্গুলী ব্রিজ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। তবে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।
বাসের যাত্রী আবুল কাশেম ও নূর নাহার জানান, তারা মাটি রাঙা যাওয়ার উদ্দেশে ফেনী থেকে হিল কিং বাসে উঠেন। বাসটি বারইয়ারহাট-খাগড়াছড়ি সড়কের হিঙ্গুলী ব্রিজ এলাকায় এলে হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এসময় তারা সামান্য চোট পেয়েছেন। বাসে ২৫-৩০জন যাত্রী ছিল।
জোরারগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সুফল চন্দ্র জানান, হিঙ্গুলী ব্রিজ এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ। দুর্ঘটনায় কয়েকজন সামান্য চোট পেয়েছেন। দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।