১৪৪ ধারা প্রত্যাহার রাঙামাটিতে

রাঙামাটিতে স্বাভাবিক হয়নি যান চলাচল, খোলেনি দোকানপাট মার্কেট। ছবি: সুপ্রভাত

ফজলে এলাহী, রাঙামাটি »

প্রায় নিস্তব্ধ শহর রাঙামাটি,দৃশ্যত প্রাণহীন। শুক্রবারের সহিংসতার পর দুইদিন পেরিয়ে গেলেও শহরে স্বাভাবিক হয়নি যান চলাচল। খোলেনি দোকানপাট মার্কেট কিংবা খোলা স্কুল কলেজেও নেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।

পাহাড়ী শিক্ষার্থীদের ৭২ ঘন্টার ‘সিএইচটি ব্লকেড’, পরিবহন শ্রমিকদের ‘অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট’ অব্যাহত থাকলেও শুক্রবার দুপুর একটায় জারি হওয়া শহরের ১৪৪ ধারা ৪৬ ঘন্টা পর রবিবার দুপুর ১১ টায় প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

শুক্রবারের তান্ডবে তছনছ বনরূপার কাঁচাবাজারে একান্ত বাধ্য হয়ে আসা ক্রেতাদের উপস্থিতির কারণে কিছু মানুষের ভীড় চোখে পড়লেও সড়কে গণপরিবহন না থাকায়,স্তব্ধই বলা যায় পুরো শহরকে। শহরের একমাত্র গণপরিবহন অটোরিক্সা বন্ধ,বন্ধ ব্যক্তিগত যান চলাচলও। ফলে মোটরসাইকেলে করে বা পাঁয়ে হেঁটেই অফিসে যেতে দেখা গেছে সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের।

শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ঠিক সময়ে পায়ে হেঁটে পৌঁছালেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি না থাকায় অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে আড্ডায় গল্পে। অফিসগুলোর চিত্রও ছিলো প্রায় একইরকম।

রাঙামাটি পৌরসভার জন্মনিবন্ধন শাখার দায়িত্বে থাকা ফিরোজ আল মাহমুদ সোহেল বলছেন, ‘এমনিতেই প্রতিদিনই আমাদের ভীষণ ব্যস্ত থাকতে হয়। চলমান সংকটের কারণে এবং গাড়ী চলাচল না করায় মানুষজন একেবারেই নেই।’

এদিকে প্রশাসনের এখনো  কোন সাড়া না পাওয়ায় পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করেনি পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। অটোরিক্সা চালক সমিতির সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবু বলছেন, শুক্রবার ভাংচুর করা গাড়ী ও গাড়ী চালকদের ক্ষতিপূরণ না দিলে এবং এই বিষয়ে প্রশাসনের কোন আশ^াস না পেলে অবরোধ চলতে থাকবে। আমাদেরকে এখনো কেউ ডাকেনি কথা বলার জন্য।’

অন্যদিকে নিরাপত্তার ছাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে পুরো শহরকে। শহরের মোড়ে মোড়ে দেখা গেছে সেনাবাহিনী পুলিশ বিজিবি ও আনসারদের অবস্থান।

সকাল এগারোটার দিকে জেলা প্রশাসক মোশাররফ হোসেন খান ও পুলিশ সুপার ড. ফরহাদ হোসেন শুক্রবারের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছেন। বিকাল ৩ টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সম্প্রীতি সভার আয়োজন করা হয়েছে।

রাঙামাটি শহরবাসিকে কোনো গুজবে কান না দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শাকিল। তারা জানিয়েছেন, শহরে পর্যাপ্ত পরিমাণ সেনাবাহিনী,বিজিবি,পুলিশ,সহ ম্যাজিস্ট্রেটরা টহলে আছেন,কোথাও কিছু হওয়ার সুযোগ নেই। গুজবে আতংকিত না হয়ে, পরিস্থিতি উত্তরনে প্রশাসনকে সহযোগিতার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপির এই দুই নেতা।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান জানিয়েছেন,শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ বিকালে একটি সম্প্রীতি সভা আহ্বান করেছি আমরা।’

এদিকে অবরোধের কারণে মেঘের রাজ্য খ্যাত সাজেক ভ্যালিতে বেড়াতে গিয়ে আটকা পড়েছেন প্রায় দেড় হাজার পর্যটক। সাজেক জিপ সমিতির লাইনম্যান ইয়াসিন আরাফাত জানান, শুক্রবার সকাল এবং দুপুরের স্কর্ট মিলিয়ে ১১০-১১৫টি জিপ, ৫০টি মাহেন্দ্রা ও সিএনজি সাজেকে প্রবেশ করেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও অনেকে গিয়েছেন। হঠাৎ অবরোধের ঘোষণা আসাতে পর্যটকরা আর ফিরতে পারেননি। গতকাল থেকেই পর্যটকরা সাজেকেই কাটাচ্ছেন।

সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি চাই থোয়াই চৌধুরী জয় জানান, সাজেকে বর্তমানে প্রায় ১৪০০ এর মত পর্যটক অবস্থান করছেন। যেহেতু পর্যটকরা ফিরে যেতে পারেননি, তাই রিসোর্ট কটেজ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পর্যটকদের থাকার খরচ ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।

রাঙামাটির বাঘাইছড়ির উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরিন আক্তার জানান, অবরোধের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় পর্যটকদের কোনও গাড়ি গতকাল ছাড়া হয়নি। সাজেকে পর্যটকরা আটকা পড়েছে। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারা সকলে নিরাপদে ও সুস্থ আছেন।