কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সাথে মহেশখালী সংযোগ সেতু ও পেকুয়ার উজানটিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ করিয়ারদিয়া সেতু দুটির কাজ ১৪ বছরেও শেষ হয়নি। নদীর বুকে কয়েকটি পিলার বসানো ছাড়া অন্য কোন কাজ দৃশ্যমান নয়। আমাদের চকরিয়া সংবাদদাতার পাঠানো এক সচিত্র প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০০৬ সালে হাতে নেওয়া হয় উজানটিয়ার নদীর মোহনায় পেকুয়া-মহেশখালী সংযোগ সেতুর নির্মাণকাজ যেটির দৈর্ঘ্য ২শ ৪০ মিটার। একই সময়ে উজানটিয়ার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ করিয়ারদিয়া জনপদের সাথে সংযোগ রক্ষায় সৈকত বাজার এলাকায় ১৮০ মিটার দৈর্ঘ্যরে আর একটি সেতুর নির্মাণকাজ ও হাতে নেওয়া হয়। এই দুটি সেতু নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। ২০০৬ সালে দুটি সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় যথাক্রমে ৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং ছয় কোটি ৯৪ লাখ টাকা। কিন্তু ১৪ বছরেও সেতু দুটির কাজ আগায়নি। নদীর তলদেশ থেকে নির্মাণ করা কেবল কয়টি পিলার দেখা যাচ্ছে। পিলারের অর্ধেক অংশের রড কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ২০১৩ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর থেকে একটি টিম এসে সেতু নির্মাণের স্থান দেখে গেছে মর্মে জানান উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কিন্তু এরপর ৭ বছর গড়িয়ে গেছে। কোনোরূপ অগ্রগতি নেই।
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী জানান, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় দুই সেতুর নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। ফলে সেতু দুটির নির্মাণকাজ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
গ্রামীণ অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গ্রামÑউপজেলায় প্রবাহিত নদীগুলির ওপর পাকা সেতু নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারÑএর উপযোগিতা উপলব্ধিও করে কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জট এবং নানা অদৃশ্য জটিলতায় সময়ের দরকারি কাজ সময়ে শেষ করা হয় না। এর ফলে বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হয়। তখন আবার বরাদ্দের সংস্থান করা কঠিন হয়ে পড়ে। বাজেট পরিকল্পনায় প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত না থাকলে বরাদ্দ পেতে জটিলতা হয়। স্থানীয় অধিবাসীরা বলছেন, সেতু দুটি নির্মিত হলে চিংড়ি ও লবণ পরিবহনের খরচ কম পড়বে। পেকুয়া ও মহেশখালী দুটি উপজেলা চিংড়ি ও লবণ চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। তদুপরি মহেশখালিতে এখন বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বড় বিদ্যুৎ কারখানা, এলপিজি টার্মিনাল কেন্দ্র হচ্ছে। এখানে নির্মিত হবে গভীর সমুদ্র বন্দর। এসব কারণে বন্দর এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্রের জন্য সমৃদ্ধ ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্বলিত হিন্টারল্যান্ড প্রয়োজন হয়। আগামী দিনে চকরিয়ার সাথে মহেশখালীর রেল যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে। সুতরাং গ্রামীণ অর্থনীতি ও এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও ভবিষ্যৎ বড়ো চাহিদার কথা মনে রেখে উল্লিখিত এলাকায় ২টি দৃঢ় ও টেকসই এবং ভারি যানবাহন চলাচল উপযোগী করে সেতু নির্মাণ প্রয়োজন। সেই সাথে এলাকার সড়ক যোগাযোগও স্থায়ী এবং টেকসই হওয়া চাই।
উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের ডিপিটি সংশোধন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের গুরুত্ব ও বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কথা মনে রেখে প্রকল্প মূল্যায়ন করা হবে সেই সাথে এলজিইডি না সওজ কোন কর্তৃপক্ষ সেতু নির্মাণ করবে তাও নির্ধারণ করা প্রয়োজন। অধিক বিলম্ব অধিক ব্যয় ডেকে আনবে। সুতরাং অবিলম্বে সেতু নির্মাণকাজ শুরু করা হোক।
মতামত সম্পাদকীয়