সুপ্রভাত ডেস্ক »
ঢাকার কয়েকটি সড়কে গণমিছিল থেকে বিভাগীয় শহরে একযোগে চার ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি হিসেবে আগামী ১১ জানুয়ারি ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অবস্থান করবে বিএনপির নেতাকর্মীরা। শুক্রবার এ কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সেই গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
একই সঙ্গে ১০ ডিসেম্বর ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায়ে পর্যায়ক্রমে আরও কর্মসূচি দেওয়ার কথাও বলেন তিনি, যেগুলো শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হবে। বিএনপির পাশাপাশি গণমিছিলের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশকারী দল ও জোটও ‘যুগপৎভাবে’ ১১ জানুয়ারি গণ অবস্থানের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিন কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে বিকাল সোয় তিনটায় নয়া পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু হয়। মিছিলটি কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, মৌচাক হয়ে মগবাজার চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৪টায়। খবর বিডিনিউজ।
দুপুরে জুম্মার নামাজের আগেই নয়া পল্টনে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। লাল, নীল, সবুজ টুপি মাথায় জাতীয় পতাকা ও বিএনপির পতাকা হাতে নিয়ে তারা এতে অংশ নেন।সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসহ নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবির কথা গণমিছিলের ব্যানার এবং কর্মীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল।
ঢাকার গোলাপবাগে বিভাগীয় সমাবেশ থেকে গত ১০ ডিসেম্বর ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায় যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ গণমিছিল বের করে বিএনপি। এর আগে ২৪ ডিসেম্বর দেশজুড়ে এ কর্মসূচি পালন করলেও সেদিন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের কারণে ঢাকায় তা পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়।
গণমিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে দলটি। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ বলেন, পাড়ায়-মহল্লায় পাহারা বসিয়ে সরকার জনগণের রাজপথে আসা রুখতে পারবে না।
সরকার বলে জনগণ আমাদের সাথে নাই। জনগণ আছে কি নাই আমি সরকারকে তাদের যারা গোয়েন্দা সংস্থা, তাদের যারা বিভিন্ন ব্যক্তি … আজকের গণমিছিল দেখে যান। আপনারা যে বলেছেন, পাড়ায় পাড়ায় আপনারা পাহারা দেবেন।
‘আজকে আপনারা পাহারা দিয়েছেন কিন্তু এদেশের জনগণকে আপনারা ঘরে রাখতে পারেন নাই। অতএব আমরা বলি, আগামী দিনে এদেশের জনগণ রাস্তায় নেমে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে আপনাদেরকে বিদায় করবে-তার নমুনা আজকের এই গণমিছিল দেখে যান।
চার ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘আজকের যেসকল দল ও জোট আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে এই গণমিছিল করছে আমাদের বিশ্বাস ওই সকল দলগুলোও যুগপৎভাবে আগামী ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থানের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘শুধু এই গণমিছিল নয়, আমরা এই ১০ দফা কর্মসূচি আদায় করার জন্য আরও কর্মসূচি একের পর এক পর্যায়ক্রমে দেব। “আমরা আশা করি, আমরা গণতান্ত্রিক দল, আমরা মধ্যপন্থি শান্তিপূর্ণ দল, আমরা এ পর্যন্ত যত সমাবেশ, যত কর্মসূচি নিয়েছি শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে এবং আজকের গণমিছিলও শান্তিপূর্ণভাবে আমরা শেষ করব।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজকে ঘোষণা করতে চাই, যত গ্রেপ্তার, যত নির্যাতন হোক না কেন- রাস্তায় আমাদের নেতাকর্মী শুধু নয় জনগণও নেমে গিয়েছে। আর তাদেরকে দমানো যাবে না।’
জনগণ ভোট দিতে পারলে ‘সরকারের কোনো পাত্তা থাকবে না’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা দেখেছেন ওদের জামানত বাতিল হয়ে যায়, বাজেয়াপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এগুলো কিন্তু সরকারকে আসলে সিগন্যাল দেওয়া হচ্ছে।“
মগবাজারের চৌরাস্তায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে গণমিছিলের সমাপ্তি টানেন। মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন ও মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বক্তব্য রাখেন।
এর আগে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছোট ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও শাহজাহান ওমর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আফরোজা খানম রীতা, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেনজীর আহমেদ টিটো নেতা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ে আফরোজা আব্বাস ও হেলেনা জেরিন খানের নেতৃত্বে মহিলা দল গণমিছিলের প্রথমে ছিল। সবশেষে ছিল ফকিরেরপুলের বাজারের কাছে মহানগর দক্ষিণ বিএনপি।
মিছিলে মুক্তিযোদ্ধা দল, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, উলামা দল, জাসাস, ও ছাত্রদলসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।