খাল-নালার বাঁধ সরানো
‘কর আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমরা ব্যর্থ’
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। কয়েক দিন আগে এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বহদ্দারহাট, মুরাদপুরসহ অনেক এলাকায় জলজটের কারণে যে নাগরিক ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তা সত্যিকার অর্থে দুঃখজনক। জলাবদ্ধতা নিরসনে বিগত কয়েক বছর ধরে মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে অনেকগুলো খাল ও নালায় বাঁধ দিতে হয়েছে এবং খাল-নালা ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এই বাঁধগুলো সরিয়ে বৃষ্টির পানি চলাচলের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থা ও সিডিএকে বার বার তাগাদা দেয়ার পরও তারা বাঁধ অপসারণ করেন নাই। যে কারণে এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীতে জলজটের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আগামী ১০ দিনের মধ্যে সবগুলো খাল ও নালার বাঁধ অপসারণ করে পানি চলাচলের প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থাকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
আজ রোববার সকালে আনন্দরকিল্লাস্থ চসিক পুরাতন নগর ভবনের কে.বি আব্দুচ সাত্তার মিলনায়তনে চসিকের ৬ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ১৬তম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সচিব, বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ।
মেয়র আরো বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন স্থানীয় সরকার থেকে কোনো ধরনের থোক বরাদ্দ পায়না, নিজস্ব রাজস্ব খাত থেকে এতবড় প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ভার নির্বাহ করতে হয়। কর আদায়ের ক্ষেত্রে সঠিক ভূমিকা পালন করা হচ্ছে না বিধায় কর আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমরা ব্যর্থ। অন্যদিকে কর আদায়ের ২৬টি খাতের মধ্যে মাত্র কয়েকটি খাত থেকে কর আদায় করা হয়। অন্যান্য খাতগুলো চিহ্নিত করে রাজস্ব বৃদ্ধির বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুমোতিক্রমে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি আরো জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ইমারত নির্মাণের উপর কর আদায় করছে। চসিকেরও ইমারত খাতের উপর থেকে কর আদায়ের ব্যবস্থা ও নালার উপর স্ল্যাব বসিয়ে সুবিধা ভোগ করছেন তাদেরকেও করের আওতায় আনতে হবে।
মেয়র নগরীতে ব্যাটারি চালিত অবৈধ রিকশার কারণে যানজট ও নানা ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে বলেন, ব্যাটারি চালিত রিকশার বদলে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নিরাপদ যাত্রী পরিবহনে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী রিকশা তৈরি করে তা চলাচলের বৈধতা দেয়ার বিষয়টি বিআরটিএ ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় সভা করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান।
মেয়র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোন প্রকল্পটি অগ্রাধিকার দেয়া হবে তা ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মতামত নিতে প্রকৌশল বিভাগকে নির্দেশনা দেন। তিনি হাটহাজারী রোডের কাজ চসিক নিজস্ব এ্যাসফল্ট প্লান্টের মাধমে দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা ও বারইপাড়া খাল খননের কাজ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করারও নির্দেশনা দেন এবং প্রতিমাসে কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন আকারে জমা দেয়ার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামবাসীর প্রতি আন্তরিক হয়ে সম্পূর্ণ সরকারি ব্যয়ে ২৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পসহ ও ১৩০০ কোটি টাকার খাল খনন প্রকল্প চসিককে দিয়েছে তা দ্রুত ও স্বচ্ছতার সাথে বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রদান করেন।
এছাড়াও তিনি মেগা প্রকল্পের বাইরে নগরীতে ২১টি খাল রয়েছে তার উপর সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রকল্প গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষট প্রকৌশলীদের নিদের্শনা দেন।
মেয়র চসিক মেমন হাসপাতালের আধুনিকায়নের কাজ সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে নগরীর আরবান স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোকে কাউন্সিলরের ম্যাধমে ছোট ছোট প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কার করা হবে বলে জানান। তিনি আগামী ৫ জুন থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ভিটামিন ‘এ’ প্লাস কর্মসূচি সফল করার জন্য কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান। মেয়র পরিচ্ছন্ন বিভাগের কার্যক্রমের উপর অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, জোন ভাগ করে দেয়ার পরও সুপারভাইজারদের অবহেলার কারণে এখানো নগরীতে ময়লার স্তুূপ দৃশ্যমান যা কোনো অবস্থায় মেনে নেয়া যায় না। তিনি মশক নিধনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার প্রার্দুভাব বেড়ে যায় বিধায় এখন থেকে মশার ওষুধ ছিটানো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কাজের মাধ্যমে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করে হবে। বিজ্ঞপ্তি