সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তাওহিদ হৃদয়ের ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ের কারণেই বাংলাদেশ দুর্দান্ত জয় পেয়েছিল। গত সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেও বাংলাদেশকে দারুণ জয় এনে দেওয়ার লক্ষ্যে ব্যাট করছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। কিন্ত আম্পায়ারের একটি সিদ্ধান্তই সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছে বললেও ভুল হবে না। বেপরোয়া নাবিকের মতো বাংলাদেশের জাহাজকে জয়ের বন্দরের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন হৃদয়। ১৭ ওভারের খেলা শেষে বাংলাদেশের বোর্ডে তখন ৯৪ রান। ১৮তম ওভারে বল হাতে আসলেন কাগিসো রাবাদা। প্রোটিয়া পেসারের ছোড়া প্রথম বলটি গিয়ে লাগে হৃদয়ের সামনের পায়ের প্যাডে। আবেদনের সঙ্গে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। প্রথম দর্শনেই বলটিতে লেগসাইডে দেখা যায়। হৃদয় রিভিউ নিলে ডিআরএসে দেখা যায়, বলটি লেগস্টাম্প সামান্য স্পর্শ করেছে। তাও আবার ওপরের কোণায়। আম্পায়ার্স কল হওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত রিভিউ পক্ষে এলো না হৃদয়ের। হৃদয়ের এই আউট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার রমিজ রাজা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অন্যতম এই ধারাভাষ্যকার মনে করেন, আম্পায়ার এই আউটের সিদ্ধান্ত না নিলেও পারতেন।
রমিজ রাজা বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য আনন্দের এবং বাংলাদেশের জন্য হতাশার মুহূর্ত ছিল হৃদয়ের আউট হয়ে যাওয়া। সে দারুণ ব্যাট করছিল। সে সহজাত প্রতিভাও বটে। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে। কিন্তু রাবাদার বলে তাকে এমন একটি আউট দিয়েছে আম্পায়ার, যেটি না দিলেও পারতো। ওই আউট নাও হতে পারতো। সেটা ছিল আম্পায়ার্স কল এবং বল লেগেছে অনেক ওপরে। এরপর লেগ সাইড দিয়ে বল চলেও যাচ্ছিল।
‘মনে হচ্ছে, ভাগ্যও বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না। আম্পায়ার যদি হৃদয়ের আউট না দিতেন, কারণ, সেটা আউট না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি মনে হচ্ছিল। তবে এই ম্যাচ বাংলাদেশ জিততেও পারতো। এমন সময়ই রাবাদা একটি দারুণ ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছে। ফলে হৃদয় আউট হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা বাংলাদেশের হাত থেকে বেরিয়ে গেছে’-যোগ করেন রমিজ রাজা। রমিজ রাজা মনে করেন, হৃদয়ের আউট হওয়ার পরও ম্যাচটি বাংলাদেশের জেতা উচিত ছিল। তারা দক্ষিণ আফ্রিকার ভুলের সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেনি। ম্যাচ শেষ পর্যন্ত না নিয়ে আগেই জেতা উচিত ছিল বলে জানান পিসিবির সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। রমিজ রাজা বলেন, ‘মানছি, দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং লাইনআপ অনেক দারুণ। কিন্তু তারা তো পরিস্থিতি বুঝতে ভুল করেই ফেলেছিল। তারা ব্যাটিং ঠিক করেনি। এরপর বোলিংয়ে শেষ ওভার স্পিনারকে দিয়ে করিয়েছে। কিন্তু এক দুই ফুটের দূরত্বে থেকে ম্যাচটা বাংলাদেশের হাত ফসকে গেছে। মাহমুদউল্লাহ ছক্কা মারার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু অল্পের জন্য সেটা হয়নি। ২ বলে ৬ রান প্রয়োজন ছিল, মাহমুদউল্লাহ ছক্কা মারতে চেয়েছিল কিন্তু সে আউট হয়ে গেল। এটাই আসলে পার্থক্য। ম্যাচটা আগেই জেতা উচিত ছিল।’
এদিকে ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের সঙ্গে আলোচনা করার সময় এই বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক তারকা ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার সাইমন ডুল। তিনি বলেন, ‘ভাবুন, বাংলাদেশের জায়গায় ভারত খেলছে ফাইনাল ম্যাচে। আমি বলতে চাইছি, যেভাবে এই পদ্ধতি কাজ করছে, সেখানে কিছু একটা পরিবর্তন অবশ্যই আনতে হবে। কারণ এটা খুবই বাজে একটা ভুল ছিল। একেবারেই বাজে সিদ্ধান্ত। একেবারে বন্দুকধারীর মত দ্রুতগতিতে হাত তুলেছে আম্পায়ার।’
‘আর আমাদের বলতেই হবে পুরো টুর্নামেন্টেই আমরা খুব ভালো কিছু আম্পায়ারিং দেখেছি। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা ছিল না। তারচেয়ে বড় কথা, লেগবাই থেকে চার রান হওয়া দরকার ছিল। ধরা যাক, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ বলে এটা ঘটলো। আর একটা দল এমন বাজে সিদ্ধান্তের কারণে হেরে গেল। যেভাবে এইসব চলছে, তাতে কিছু পরিবর্তন আনতেই হবে।’- আরও যোগ করেন ডুল। খবর রাইজিংবিডি.কম ও জাগোনিউজ’র