জাহিদ হাসান হৃদয়, আনোয়ারা সংবাদদাতা »
উত্তালতা কমিয়ে স্বাভাবিক হয়েছে সাগর। ধীরে ধীরে জেলেদের জালে ধরা পড়তে শুরু করেছে ইলিশ। শুরুর দিকে উত্তালতার কারণ ব্যাঘাত ঘটে মৎস্য আহরণে। এতে কমে আসে মাছের পরিমাণ। কিন্তু গত সপ্তাহ খানেক ধরে আবারও জেলেদের জালে ইলিশ পড়তে শুরু করেছে। যার ফলে হাসিমুখে তীরে ফিরছে জেলেরা। তবে মাছের সাইজ ছোট বলে জানান উঠান ঘাট কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দীন। মাছের বিচরণস্থল পাল্টানোর কারণে এমনটি হচ্ছে বলে জানান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. রাশিদুল হক।
সরেজমিনে উপজেলার ফকিরহাট ঘাট এবং উঠান মাঝিরঘাট ঘুরে দেখা যায়, এতদিন ‘জো’ থাকলেও এবার ‘ডালা’ শুরু হয়েছে। তবুও সাগরে যাচ্ছে মাছ ধরার ট্রলার। খুব বেশি মাছ নিয়ে তীরে ফিরতে না পারলেও জেলেদের মুখে রয়েছে হাঁসি। ট্রলার থেকে মাছ নামানোর সাথে সাথে খুচরা এবং আড়তদার (মাছ ক্রেতা) গিয়ে ভিড় করছে। শুরু হচ্ছে নিলাম। নিলামে এক ঝুঁড়ি মাছ পরিমাণ এবং সাইজ ভেদে ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
উপকূলের মৎস্য আড়তগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি আড়তে সাইজ অনুযায়ী ইলিশ মাছ সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। এসব আড়ত থেকে মাছ কিনছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। পিকআপ-সিএনজি করে এসব মাছ নেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রামের আশেপাশের উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দিনে দু’বার মাছ নিয়ে উপকূলে আসে ট্রলার। সকাল ৯-১০ টায় আসে একবার আরেকবার আসে বিকেল ৫টায়। বেশিরভাগ জেলেরা আড়তদারের কাছে মাছ বিক্রি করে। কারণ অনেক বুট মালিক মাছের জন্য এসব আড়তদারের (মাছ ব্যবসায়ী) কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে ফেলে।
শাহেদ নামের এক আড়তদার বলেন, অন্যান্য বারের চেয়ে এবারের মাছের সাইজ ছোট। কিন্তু বাজারে ছোট মাছের চেয়ে বড় মাছের গ্রাহক বেশি। মণ হিসেবে ছোট সাইজের ইলশ মাছ ১৩-১৪ হাজার টাকা, মধ্যম সাইজের ২০-২২ হাজার টাকা এবং বড় সাইজের মাছ ৩২ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।
আব্দুর রহিম নামের এক জেলে জানান, এখন সাগরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। গত কয়েকদিন আগেও উত্তাল ছিল। জালে মাছ পড়ছে কিন্তু আগের চেয়ে অনেক কম। সাইজেও ছোট।
বুট মালিক তৌহিদুল হক জানান, প্রথম প্রথম সাগরের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে বুট নামিয়ে তুলে ফেলছিলাম। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক মোটামুটি মাছও পড়ছে জালে। আশা করছি, ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবো।
রুপন দত্ত নামের এক ক্রেতার জানান, ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। অন্যান্য মাছের মতো বছরজুড়ে এটা খাওয়ার সুযোগ হয় না। তাই টাটকা ইলিশ নিতে বঙ্গোপসাগর উপকূলে ছুটে আসলাম। ভেবেছিলাম বাজারের তুলনায় এখানে দাম অনেক কম হবে কিন্তু এখানেও একই দাম।
উঠান মাঝির ঘাট কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দীন জানান, এখনো জেলেদের জালে আশানুরূপ মাছ ধরা পড়ছে না। গভীর সাগরে মাছ থাকলেও উপকূলের কাছাকাছি তেমন মাছ নেই। এরইমধ্যে কিছুদিন পর মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা চলে আসবে। নিষেধাজ্ঞায় এখানকার জেলেরা মাছ ধরতে না পারলেও ভারত এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে বড় বড় ফিশিং ট্রলার এসে মাছ মেরে নিয়ে যায়। এগুলো দেখার মতো কেউ নাই।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার মো. রাশিদুল হক বলেন, এবার মাছ কিছু কম পাওয়া যাচ্ছে। তবে আশা করা যাচ্ছে শেষের দিকে মাছ পাওয়া যাবে। মাছের বিচরণস্থল পরিবর্তনের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে জানান এই মৎস্য অফিসার।
তিনি আরও বলেন, এই মৌসুমে এখোনো পর্যন্ত প্রায় ১৫০ টন মাছ আহরণ করা হয়েছে।