করোনা চিকিৎসা #
চট্টগ্রামের স্বার্থে করোনা চিকিৎসার জন্য হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল চালু করা প্রয়োজন- চসিক মেয়র #
শুভ্রজিৎ বড়ুয়া :<
করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে থেকে চট্টগ্রাম আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রস্থত রাখা হয়েছিল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও বিআইটিআইডি হাসপাতাল। পাশাপাশি প্রস্থত রাখার কথা ছিল রেলওয়ে হাসপাতাল, বন্দর হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হাসপাতালগুলো। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য দপ্তরের মাধ্যমে বিভাগীয় করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবেলা কমিটি চট্টগ্রামের বেসরকারি ১২ টি হাসপাতাল প্রস্থত করে রাখার ঘোষণা দেয়।
তার পরিবর্তে বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাব মালিক সমিতি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি প্রস্থত করে দেয়। জনবল সংকটের কারণে হাসপাতাল চালু করা নিয়ে সরকারের সাথে দোটানা শুরু হয়। গত কয়েকদিন আক্রান্ত সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যস্ত জেনারেল হাসপাতাল ও বিআইটিআইডি হাসপাতালের আসন সংকট সৃষ্টি হয়। সে কারণে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকল করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি না করে বাসায় চিকিৎসা দেয়া শুরু করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীরের কাছে। তিনি বলেন, হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি সম্পূর্ণভাবে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য প্রস্থত করা আছে। এটির জনবল সংকট নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছিল। এই সংকট নিরসনে আমরা স্বরাষ্ট্র সচিব মহোদয়কে আমাদের আবেদন জানিয়েছি। তিনি তা স্বাস্থ্য সচিব মহোদয়কে পাঠিয়েছেন। আবেদনটি গত সাতদিন আগে পাঠানো হয়েছে। আগামী সোমবারে এ বিষয়ে আমাদের আরেকটি সভা আছে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও বিআইটিআইডি হাসপাতালে শয্যা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি এ সংকট দেখা দিচ্ছে ডা. বিদ্যুৎ বড়-য়ার ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালেও। এ সংকট নিরসনে অথবা নতুনভাবে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের কোথায় রাখা হবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখন সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন না হলে আক্রান্তদের হসপিটালে ভর্তি করছি না। এরপরেও হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল চালু হওয়ার ব্যাপারে সরকারিভাবে নির্দেশনা না আসার আগে যদি সংকট হয় তাহলে আমরা চট্টগ্রামের ১২ টি হাসপাতাল পর্যায়ক্রমে অধিগ্রহণ করব। সেহেতু হাসপাতাল নিয়ে কোন প্রকার সংকট সৃষ্টি হবে না।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সুপ্রভাত বাংলাদেশের প্রতিবেদক কথা বলেন বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাব মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকাত আলী খান এর সাথে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য পরিচালক মহোদয়ের এ সিদ্ধান্তগুলো কোনোভাবে সঠিক ব্যবস্থাপনা নয়। আমরা বেসরকারি হাসপাতালগুলোর পড়্গ থেকে পরিত্যক্ত হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে সম্পূর্ণভাবে প্রস্থত করে দিয়েছি।
এটি চালু করতে যে বিলম্বটা হচ্ছে তা সম্পূর্ণভাবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। আর হাসপাতাল চালু না করে পর্যায়ক্রমে যে ১২ টি হাসপাতাল অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা বাস্তবায়নের কথা বলাটা কোনোভাবে ঠিক নয়।’
পারস্পরিক বিরোধ ও স্বার্থ রক্ষা সিদ্ধানেত্ম করোনা মোকাবেলা কতটুকু সমস্যার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা প্রথম থেকে স্বাস্থ্য পরিচালককে জানিয়েছি করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতালে প্রয়োজন। উনি ডেডিকেটেড হাসপাতাল প্রস্থত না করে শুধু আইসিইউ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
এখন আপনারাই চিন্তা করেন, কোন একটা হাসপাতালে আইসিইউতে যদি করোনা আক্রান্ত রোগী থাকে তাহলে অন্য রোগের অসুস্থরা সে হাসপাতালে কি যাবে? এটি খুব সাধারণ একটি বিষয়। আমরা প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে অন্যান্য রোগীদের সেবা দিচ্ছি। করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে অন্যান্য রোগীদের সেবা বন্ধ করে দেয়া কতটুকু যৌক্তিক?
এ সংকট নিরসনে কি করা প্রয়োজন জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে যদি সম্পূর্ণভাবে ডেডিকেটেড করে আমাদের কোন হাসপাতাল নেয়া হয় তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
অর্ধেক নিবে বাকি অর্ধেক অন্যান্য রোগীদের জন্য রেখে দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
এছাড়া ডেডিকেটেডলি যেকোন প্রাইভেট হাসপাতাল নিলেও সরকারকে জনবল ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে মূল সমস্যা হলো জনবল সংকট। সরকারিভাবে জনবল তৈরি করতে হবে। অন্যথায় শুধু হাসপাতালের ব্যবস্থা করে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে না।
ট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বির কাছে জানতে চাওয়া হয় করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো শয্যা শেষ হওয়ার পরে আক্রান্তদের কিভাবে চিকিৎসা প্রদান করবেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে ইতোমধ্যে ৭৬ জন ডাক্তার পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে আমরা সকল আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি করাচ্ছি না। তাদের টেলিফোনের মাধ্যমে আমাদের চিকিৎসক টিম সেবা দিবেন। প্রয়োজন হলে হাসপাতালে তাদের নিয়ে আসা হবে। এছাড়া আমরা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হাসপাতালগুলোকে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য পরবর্তী পর্যায়ে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী আছে। তাই আমরা পরবর্তীতে সিটি করপোরেশন হাসপাতালে আক্রান্তদের ভর্তি করাবো।
এছাড়া আমাদের হাতে রেলওয়ে হাসপাতাল ও বন্দর হাসপাতাল আছে। সেগুলোর জন্য আমাদের জনগণ প্রস্থত করতে হবে। এরমধ্যে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল জনবল চলে আসবে। তাই চিকিৎসা নিয়ে কোন প্রকার সংকট হবে না। সব কথার ঊর্ধ্বে, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের সকল সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাই আমাদের মন্ত্রী মহোদয় ও ঊর্ধ্বতনদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের কাজ করতে হবে।
তবে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অধীনে বিশেষায়িত হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল চালুর বিষয়ে কেন সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে তা বোধগম্য হচ্ছে না বলে জানান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন, হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১১টি আইসিইউ ও ৯টি এইচডিও সুবিধা রয়েছে।
এছাড়া ৮০টি সাধারণ বেড রয়েছে। শুধু জনবল সুবিধা দিয়ে এটি চালু করা। এতে করোনা রোগীরা একটি পৃথক হাসপাতাল পাবে, ফলে অন্যান্য রোগীরা করেনোর ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকবে। চট্টগ্রামের স্বার্থে দ্রুত এটি চালু করা প্রয়োজন।