নিজস্ব প্রতিবেদক »
নগরীর হালিশহর ও খুলশী থানা এলাকা থেকে পৃথক সময়ে নিখোঁজ হওয়া দুই শিশুকে জীবিত উদ্ধার করার তথ্য দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। রোববার রাতে তাদের উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি গতকাল সোমবার নিশ্চিত করেছেন সিএমপির জনসংযোগ বিভাগ ও খুলশী থানা পুলিশ।
উদ্ধার হওয়া শিশুরা হচ্ছে হালিশহর থানাধীন মাদাইয্যাপাড়া এলাকার মো. আলমগীরের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মাইশা (৮) ও খুলশীর সেগুন বাগান এলাকার শিশু সাহাবিকুন নাহার জান্নাত।
দুই শিশু উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিএমপির জনসংযোগ কর্মকর্তা স্পিনা রানী প্রামাণিক বলেন, শিশু মাইশাকে উদ্ধারের জন্য হালিশহর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাহাদুল হাসানের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়।
উদ্ধার অভিযান পরিচালনাকারী দল ওই শিশুর স্বজন ও স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ, ঘটনাস্থলের আশেপাশে তল্লাশি, নগরীর বিভিন্ন থানায় মাইকিং ও বাস, রেল স্টেশন, শপিংমলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টারিং করেন। এছাড়া নগরীর মনসুরাবাদ, দেওয়ানহাট, টাইগারপাস, আম বাগান, পলোগ্রাউন্ডসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়।
হালিশহর থেকে নিখোঁজ হওয়া শিশু জান্নাতের উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির উদ্দিন বলেন, ‘২৮ মার্চ সন্ধ্যায় ইফতারের পর শিশু মাইশা ঘর থেকে বের হয়ে যান। পরে অনেক খোঁজাখুজির পরও না পেয়ে পরদিন ২৯ মার্চ শিশুটির বাবা হালিশহর থানায় নিখোঁজের ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর আমরা নগরীর প্রায় সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে নিরীক্ষণ করি। রোববার রাতে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হালিশহরের সিএন্ডবি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ টিপুর হেফাজত থেকে মাইশাকে উদ্ধার করেন টিম হালিশহর পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারি, ইফতারের পর পড়াশোনা না করে টেলিভিশন দেখা নিয়ে বকাবকি করলে শিশু মাইশা ঘর থেকে বের হয়ে গেলে আর বাসায় ফেরেনি। এমনকি আমরা উদ্ধারের পর তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাইলেও শিশুটি তার মায়ের কাছে যেতে চাচ্ছিলেন না। বলা যায় শিশুটির প্রতি মায়ের কড়া শাসনই তার ঘর থেকে চলে যাওয়ার মূল কারণ।’
মোহাম্মদ টিপুর কাছে কিভাবে এলো এ শিশুটি এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা টিপুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারি, ২৮ মার্চ রাত নয়টার দিকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে পিছু নেয় শিশু মাইশা। এ সময় নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করলে কিছুই জানাতে পারেনি শিশুটি। আশপাশে খোঁজ করেও কোনো স্বজন না পেয়ে নিরাপত্তার জন্য বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। ’
পরে ওই শিশুর স্বজনদের খোঁজ করেও ব্যর্থ হন তিনি।
অন্যদিকে ২৭ মার্চ রাত নয়টায় খুলশী সেগুনবাগান এলাকার ক্যান্টিন গেইট থেকে নিখোঁজ হয় নয় বছর বয়সী আরেক শিশু সাহাবিকুন নাহার জান্নাত। শিশুটির মা মারা যাওয়ায় ভাইয়ের বাসায় থাকতো। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে না পেয়ে ৩০ মার্চ খুলশী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার বড় বোন বিলকিস আক্তার।
রোববার রাতে জান্নাতকেও জীবিত উদ্ধারের তথ্য দেন খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা। তিনি বলেন, খুলশীর সেগুন বাগান এলাকা থেকে নিখোঁজ শিশু সাহাবিকুন নাহার জান্নাতকে মাস্টার লেইন এলাকার বাসিন্দা রেলওয়ে কর্মচারী রেহানা আক্তারের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পরবর্তীতে জানা যায়, শিশুটির মা মারা যাওয়ায় শিশুটির লালনপালন নিয়ে দুই বোনের মধ্যে বিরোধ ছিল। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পারি, স্বজনদের না জানিয়ে লালন-পালনের জন্য রেলওয়ে কর্মচারী রেহানা আক্তারের বাসায় দিয়ে এসেছিলেন শিশু জান্নাত আক্তারের খালাতো বোন সাজু আক্তার।