জোয়ারের অপেক্ষায় ডিম সংগ্রহকারীরা
নিজস্ব প্রতিনিধি, হাটহাজারী »
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করেছে, তবে পরিমাণে তা খুব কম। ডিম সংগ্রহকারীরা এখন অপেক্ষা করছেন পরবর্তী জোয়ারের।
গতকাল সোমবার ভোরে দেশের কার্প জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ) মা মাছ হালদা নদীতে নমুনা ডিম ছাড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন পয়েন্টে নমুনা ডিমের চেয়ে একটু বেশি ডিম ছেড়েছে মা মাছ।
ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, তারা ২৫০ গ্রাম থেকে আধাকেজি পর্যন্ত নমুনা ডিম পেয়েছেন। বেশকিছু স্থানে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশের নমুনা ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যে হাটহাজারী উপজেলার রামদাস মুন্সিরহাট, মাছুয়াঘোনা, নাপিতের ঘাট, আমতুয়া, নয়াহাট, রাউজানের আজিমের ঘাট, খলিফারঘোনা এলাকায় ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম করে ডিম পাওয়া গেছে। কিন্তু ভোরে মা মাছ খুবই অল্প পরিমাণে ডিম ছেড়েছে। এখন শত শত ডিম সংগ্রহকারী নদীতে অপেক্ষা করছেন। পরবর্তী জোয়ারের সময় মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে আশা করছেন তারা। গতকাল বিকালে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হালদা নদীতে মা মাছ পুরোদমে ডিম দেয়নি।
প্রতি বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুনের শুরু পর্যন্ত বজ্রসহ বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল নামলে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে জোয়ার ও ভাটার সময়ে নিষিক্ত ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। সেই ডিম জাল দিয়ে নদী থেকে সংগ্রহ করেন ডিম সংগ্রহকারীরা। পরে হ্যাচারিতে সেই ডিম ফুটিয়ে রেণু উৎপাদন করা হয়।
এবার পূর্ণিমার তিথি শুরু হয়েছিল গত রোববার বেলা ১২টা ২১ মিনিটে। হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা রোববার রাত থেকেই নদীতে নৌকা ও জাল নিয়ে অবস্থান করছিলেন।
গতকাল বিকালে চট্রগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের প্রভাষক, জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম সুপ্রভাতকে বলেন, হালদা নদীতে বর্তমানে যে ডিম পাওয়া গেছে তা মুলত নমুনা ডিম, যেহেতু এখনো বজ্রপাতসহ বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল হয়নি তাই মা মাছ ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ পায়নি। তবে এখনো পর্যন্ত ডিম ছাড়ার সময় রয়েছে। তা না হলে পরবর্তী (২৮ থেকে ৩১) মে অথবা (১৩ থেকে ৩) জুন ডিম দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে হালদা নদীর পানির গুণগত মান স্বাভাবিক অর্থাৎ পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের মান আদর্শ মানের মধ্যে রয়েছে। নদীর পানিতে লবণাক্ততার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। সুতরাং হালদার পানি মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূলে। শুধু বজ্রপাত সহ বৃষ্টির অপেক্ষা।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহিদুল আলম সুপ্রভাতকে বলেন, ভোরে ও এর আগে গত শনিবার রাতে নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। এ সময় সাত থেকে আটটি নৌকায় অন্তত ১০ থেকে ১২ জন ডিম সংগ্রহকারী ২০০ গ্রাম থেকে ২৫০ গ্রাম করে নমুনা ডিম সংগ্রহ করেছেন। ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম ধরার সরঞ্জাম নিয়ে নদীতে অপেক্ষায় রয়েছেন। পাশাপাশি নদীর উপরে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে।