সরকারি প্রকল্প তৈরি, জিনিসপত্র ক্রয় ও প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা অনিয়মÑদুর্নীতির খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে আসছে। জনগণের অর্থ নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের নয়ছয় করার সাতকাহন যেমন জনগণকে হতাশ করে তেমনি প্রকল্প থেকে সঠিক উপযোগিতা পাওয়া যায় না বরং দুর্নীতিÑঅনিয়মÑঅব্যবস্থাপনার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়, প্রকল্প ব্যয় বাড়ে। এতে সামগ্রিকভাবে সরকারি প্রশাসনের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব, সরেজমিনে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ পরিদর্শন না করা, মাঠ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, অযোগ্যতা ও অনিয়মÑদুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে সরকারি প্রকল্পগুলির যথাযথ বাস্তবায়ন দুরূহ হয়ে পড়ে।
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্প ‘হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর রক্ষা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ’ প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আমাদের বুধবারের পত্রিকায়।
আমাদের ফটিকছড়ি সংবাদদাতা তার সচিত্র প্রতিবেদনে এলাকাবাসীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ফটিকছড়ি উপজেলার সমিতির হাট রোসাংগিরি হাজিপাড়া এলাকায় প্রকল্পের সিসি ব্লক ধসে পড়েছে। গত আগস্ট মাসে নাজিরহাট নতুন ব্রিজের পাশে এবং সুয়াবিল মন্দাকিনী খালের সংযোগ এলাকায় ব্লক ধসে পড়েছে হালদা নদীতে। সিসি ব্লক স্থাপনের জায়গায় ইটের কণা এবং বালির পরিমাণ খুবই কম। এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে নি¤œমানের কাজ ও নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করেছেন। নদী থেকে তোলা মাটি শক্ত হওয়ার আগে ব্লক বসানো সঠিক নয়, একথাও তারা বলেছেন।
১শ ৫৭ কোটি টাকার বেশ বড়ো এই প্রকল্পটি যাতে যথাযথভাবে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা ও মান অনুযায়ী বাস্তবায়ন হয় তার তদারকি করা প্রয়োজন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। কাজের স্থায়িত্ব এবং এর গুণগত মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিদর্শন, নিয়মিত তদারকি অপরিহার্য অথচ সেই কাজটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীগণ ঠিকমতো করছেন না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী ব্লক ধসে পড়ার কথা স্বীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তা ঠিক করে দিতে বলেছেন মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। দরপত্রের শর্ত এবং স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ আদায় করা গেলে এত স্বল্প সময়ে ব্লক ধসে পড়ার কথা নয়। ফটিকছড়ি উপজেলার সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভা-ারী কাজের মান ঠিক রাখতে ফটিকছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এই প্রকল্পটি ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলার হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর রক্ষা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রতিবছর হালদা নদীর ভাঙনে এই দুই উপজেলার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদী ঘরবাড়িÑফসলÑজমি প্রতিষ্ঠান গ্রাস করে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। হালদা নদীর শাখা খালগুলিও জনপদে ভাঙন সৃষ্টি করে। নদীর তীর রক্ষা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে তা হবে এই এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। এ ধরণের জনকল্যাণমূলক প্রকল্প যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা সচেষ্ট হবেন। প্রকল্পে ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তারা দরপত্রের শর্ত ও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করবেনÑ এটিই এলাকাবাসীর প্রত্যাশা।
মতামত সম্পাদকীয়