হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের প্রায় সাত সপ্তাহ পর শুক্রবার ২৪ নভেম্বর থেকে প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। চারদিনের এই বিরতির প্রথমদিনে ১৩ ইসরায়েলি নারী ও শিশু জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা হামাসের। মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার জানিয়েছে, শর্তানুযায়ী হামাস ৫০ জন যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি দেড়শ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুকে মুক্তি দিতে হবে।
গত ২২ নভেম্বর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল, হামাস ও যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে একাধিকবার চুক্তিতে পৌঁছার খবর প্রকাশ হলেও ইসরায়েল অস্বীকার করে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০০ জন নিহত হয়। হামাসের হাতে জিম্মি হয় ২৪০ জনেরও বেশি মানুষ। এর পর ইসরায়েলের সর্বাত্মক হামলায় ১৪ হাজার ৮০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছিলেন, ইসরায়েলের হামলা জোরদার হওয়ার সাথে সাথে গাজা শিশুদের কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে। পরে তিনি বলেন, প্রতি ঘণ্টা পার হওয়ার সাথে সাথে ‘মানবিক অস্ত্রবিরতির’ প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি বাড়ছে। এক যৌথ বিবৃতিতে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বলে, গাজা এবং ইসরায়েলে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যাকাণ্ড ‘ভয়াবহ’।
সংঘাতের পর থেকেই জাতিসংঘসহ একাধিক দেশ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়। ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাবর্ষণে গাজায় নারী ও শিশুর মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যুদ্ধ বন্ধের দাবি উঠতে থাকে দেশে দেশে।
কিন্তু তেল আবিব তাতে সাড়া দেয়নি, আর মিত্র হিসেবে এ সিদ্ধান্তে ইসরায়েলের পক্ষে থাকে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে শুরু থেকে রাশিয়া গাজায় আক্রমণ বন্ধ করার পক্ষে কথা বলেছে। দেশটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন, সহিংসতা পরিত্যাগ, প্রয়োজনীয় সংযম পালন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় একটি দীর্ঘস্থায়ী ও মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানাই।’
এখন চারদিনের যুদ্ধবিরতি চলছে। আমরা মনে করি দু পক্ষই যুদ্ধবিরতির সকল শর্ত মেনে চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করবে। প্রায় পৌনে এক শ বছর ধরে দেশহীন হয়ে আছে ফিলিস্তিনিরা। তাদের কয়েক প্রজন্মের জন্ম এবং মৃত্যু ঘটেছে অস্থায়ী তাঁবুতে। এভাবে একটা জাতি পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে না। তাদের মানচিত্র তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে এবং সেখানে চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে।
চারদিনের অস্থায়ী শান্তিচুক্তির পথ ধরে মধ্যপ্রাচ্যে চিরস্থায়ী শান্তির বাতাবরণ তৈরি হোক। মৃত্যু বিভীষিকা চিরতরে দূরীভূত হোক।
এ মুহূর্তের সংবাদ