জানাজায় মানুষের ঢল
নিজস্ব প্রতিবেদক :
হাজার হাজার মুসল্লির অংশগ্রহণে হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফির জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার দুপুর ২টায় হাটহাজারী দারুল উলূম মাদ্রাসা মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেওয়া মুসল্লিদের স্রোত মাদ্রাসা মাঠ ছাড়িয়ে হাটহাজারী বাস স্ট্যান্ড, কলেজ মোড় ও মিরেরহাট পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
মরহুম আহমদ শফির বড় ছেলে রাঙ্গুনিয়া পাখিয়ারটিলা কওমি মাদ্রাসার পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ মাদানি জানাজায় ইমামতি করেন। জানাজা শেষে আহমদ শফিকে মাদ্রাসার ভেতর উত্তর মসজিদসংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাজাকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসার ছাত্রদের মধ্যে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির আশঙ্কায় হাটহাজারীসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলায় ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এছাড়া পুলিশ ও র্যাব কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে। কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। তবে জানাজায় অংশ নিতে আসা সাতকানিয়ার সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী হাটহাজারী বাস স্ট্যান্ড মোড়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। এসময় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন সংসদ সদস্য নদভীকে বাস স্ট্যান্ড মোড় থেকে ফিরিয়ে দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন সুপ্রভাতকে এ তথ্য জানান।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, আহমদ শফির ছোট ছেলে আনাস মাদানী জানাজায় অংশ নেননি। জানাজায় তার ইমামতি করার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার রাতে ঢাকায় ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় তিনি হেফাজতের কর্মীদের হামলার শিকার হন।
জানাজার আগে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ মাদানি উপস্থিত লোকজনসহ দেশবাসীর কাছে তাঁর বাবার জন্য দোয়া চান।
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব ও মাদ্রাসার শিক্ষক জুনায়েদ বাবুনাগরী বলেন, ‘হুজুর আমাদের ছেড়ে গেলেন। তবে হেফাজতের আন্দোলন আগের মতো অব্যাহত থাকবে।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আহমদ শফি মৃত্যুর আগে বড় একটা কাজ করে গিয়েছেন। তিনি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি সনদের ব্যবস্থা করে গেছেন। এই সনদ দিয়ে কওমি শিক্ষার্থীরা এখন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারবেন।
গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আহমদ শফির মরদেহ বহন করা গাড়িটি হাটহাজারী মাদ্রাসায় প্রবেশ করে। ঢাকা থেকে গাড়িটি ভোরে রওনা হয়। আগেই মাদ্রাসার ভেতর উত্তর মসজিদসংলগ্ন কবরস্থানে কবর খোঁড়া শেষ করা হয়।
শুক্রবার রাত থেকেই জানাজায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন হাটহাজারী মাদ্রাসায় আসতে শুরু করেন। লোকজনের ভিড়ে পূর্ণ হয়ে যায় মাদ্রাসার মাঠ। সকাল ১০টা থেকে হাটহাজারী-নাজিরহাট সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়।
২০১৩ সালে ১৩ দফা দাবি নিয়ে আলোচনায় আসা হেফাজতে ইসলামের আমীর ও আল জামেয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান পরিচালক শাহ আহমদ শফি শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ১০৪ বছর।
আন্দোলনকারী ছাত্রদের দাবির মুখে বৃহস্পতিবার রাতে হাটহাজারী মাদ্রাসার শূরা কমিটির বৈঠকে প্রধান পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন আহমদ শফি। এর পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ১টার দিকে আহমদ শফিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তাঁর হৃদপি- অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। শুক্রবার সকালে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মেডিক্যাল বোর্ডে বসেন। শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় দুপুরে চিকিৎসকরা আহমদ শফিকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বিকালে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যায় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।