সুপ্রভাত ডেস্ক
মাসের শেষে হঠাৎ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এলপিজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করেছে; অনেক স্থানে সরবরাহে টানও পড়েছে।
এক সপ্তাহে খুচরায় ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম অন্তত ২০০ টাকার বেশি বেড়েছে। ঢাকার অনেক খুচরা দোকানে তা পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের অন্যান্য এলাকাতেও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো সিলিন্ডার পাঠাচ্ছে না বলে খবর হয়েছে। বেশির ভাগ কোম্পানিই সরবরাহ কমিয়েছে বলে জানাচ্ছেন এজেন্ট ও খুচরা বিক্রেতারা।
সোমবার ঢাকার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেক খুচরা দোকানে এলপিজির মজুদ নেই। যাদের আছে তারাও ১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডারের দাম চাচ্ছেন ১৬০০ টাকা। অথচ জানুয়ারির জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী, ১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ১২৩২ টাকা। এলপি গ্যাস অপারেটরগুলোর সংগঠন এলপিজি অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লোয়াব) মনে করছে, শিল্প-কারখানাসহ বহুমুখী কাজে এলপি গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে সরবরাহে টান পড়েছে। খুচরায় সরবরাহে ঘাটতির ক্ষেত্রে এটিকেই কারণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। ঘাটতির সুযোগ নিয়ে বাড়ছে দাম। ঢাকার পীরেরবাগে একটি ছোট্ট খাবারের দোকানের মালিক গোলাপ মিয়া বলেন, গ্যাসের দাম রাতারাতি ১০০ থেকে দেড়শ টাকা করে বাড়ছে। ১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডার দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন যেটা জ্বলছে এটা শনিবার রাতে ১৪৫০ টাকা করে কিনেছিলাম। গতরাতে একটা দিয়ে গেলো ১৫৫০ টাকা দাম। আগামীকাল মঙ্গলবার ১৭০০ টাকা করে কিনতে হবে বলে সরবরাহকারীরা জানিয়ে গেলেন।
‘গ্যাসের দাম তো আগে কখনও এভাবে বাড়তে দেখি নাই। মনে হয় গ্যাসের সংকট। এই সুযোগে দাম বাড়তে শুরু করেছে। এভাবে বাড়লে তো হোটেল ব্যবসা করে টিকে থাকা যাবে না।
তার কথার সত্যতা পাওয়া যায় বিভিন্ন খুচরা দোকানে খবর নিয়ে। আগারগাঁওয়ে গ্রিন হার্ডওয়্যার নামে একটি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি যে ডিলারের কাছ থেকে গ্যাস কিনে এনে বিক্রি করেন গত দুই দিন ধরে তারা গ্যাস দিচ্ছেন না। ফলে দোকানের সামনে কিছু খালি সিলিন্ডার সাজানো আছে। গ্যাস আছে কি না জানতে চাইলে গ্রিন হার্ডওয়ার থেকে বলা হয়, ‘আজকে গ্যাস নেই। রাতে আসলে বিক্রি করা যাবে। তবে দাম সম্ভবত ১২ কেজি ১৬০০ টাকা ধরতে হবে।’
আরেকজন খুচরা বিক্রিতা সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি এখন ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডার ১৬০০ টাকা করে বিক্রি করছেন। রাতে গ্যাসের ট্রাক আসবে কি না নিশ্চিত নন। যদি তাই হয় তবে আগামীকাল আর গ্যাস বিক্রির উপায় থাকবে না।
লোয়াব এর সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, বাজারে চাহিদা বেশি আর সরবরাহ কম হলে এধরনের বিষয় হতে পারে। গত কয়েকমাসে যেভাবে আমদানি হচ্ছিল চলতি মাসে সেভাবেই হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে কিছু গ্যাস শিল্পকারখানায় এলপি গ্যাসের ব্যবহার বেড়ে গেছে। ইন্ডাস্ট্রি খাতে গ্যাস যাওয়াতে সাধারণ ভোক্তারা একটু কম পাচ্ছেন। লোয়াবের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে মাসে এক লাখ ২০ হাজার টন এলপিজি ব্যবহার হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত মূল্য বাজার ও বাস্তবতা পরিপন্থি দাবি করে আজম জে. চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন অদক্ষ হওয়ার কারণে এলপি গ্যাসের দাম সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। তারা কেবল সৌদি সিপি বিবেচনায় নিয়ে দাম ঠিক করে। অথচ এখানে অনেক প্রিমিয়ামের বিষয় রয়েছে।
এবিষয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল ও সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরীকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
চলতি সপ্তাহে ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা করবে বিইআরসি।