স্বাস্থ্যখাতে অপ্রতুল বরাদ্দ ও জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি

একটি রাষ্ট্রের উন্নয়নের প্রধান কারিগর হলো তার সুস্থ নাগরিক। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ বরাবরই অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। প্রতিবছর জাতীয় বাজেট ঘোষিত হলেও তাতে স্বাস্থ্যখাতের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় জিডিপির মাত্র ১ শতাংশেরও কম, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশের (জিডিপির অন্তত ৫ শতাংশ) তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। স্বাস্থ্যখাতে এই অপ্রতুল বরাদ্দ কেবল সংখ্যার লড়াই নয়, বরং এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর।

চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বাজেট
​বর্তমানে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত নানা সীমাবদ্ধতায় জর্জরিত। সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংকট, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব এবং দক্ষ জনবল ও ওষুধের স্বল্পতা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ মানসম্মত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষকে বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসার উচ্চমূল্য মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে মোট চিকিৎসা ব্যয়ের প্রায় ৭৩ শতাংশ রোগীকে নিজের পকেট থেকে খরচ করতে হয়, যা একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
কেবল বরাদ্দ বৃদ্ধিই সংকটের একমাত্র সমাধান নয়। প্রতিবছর স্বাস্থ্যখাতে যেটুকু বরাদ্দ দেওয়া হয়, তারও বড় একটি অংশ বছর শেষে অব্যবহৃত থেকে যায় অথবা দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে অপচয় হয়। স্বাস্থ্য প্রশাসনের অদক্ষতা, কেনাকাটায় স্বচ্ছতার অভাব এবং মাঠ পর্যায়ে তদারকির ঘাটতি এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে। সরকারি চিকিৎসা কাঠামোর আধুনিকায়ন এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করার জন্য যে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ প্রয়োজন, বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা যায় না।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জন এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে স্বাস্থ্যখাতে আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।
​উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে আগে নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যখাতকে স্রেফ একটি সেবা খাত হিসেবে না দেখে একে জাতীয় বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। অপ্রতুল বরাদ্দ ও অব্যবস্থাপনার চক্র থেকে বেরিয়ে এসে একটি জনবান্ধব ও শক্তিশালী স্বাস্থ্য কাঠামো গড়ে তোলাই হোক আগামীর অঙ্গীকার।