রুকাইয়া মিজান মিমি »
রোগমুক্ত সুস্থ শরীরে সামাজিক বাধা-বিপত্তিসমূহ সুন্দরভাবে মোকাবিলা করা ও সামাজিক কর্মকা-ে সুষ্ঠুভাবে অংশগ্রহণ করাটাই স্বাস্থ্য। এ স্বাস্থ্যই আমাদের জীবনের সেরা সম্পদ। একজন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিই পারে তার জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগ করে সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছাতে। এসব গুরুত্ব বিবেচনা করেই ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গঠন করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য- ‘সর্বোচ্চ সম্ভব সকল মানুষের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা’। ৭ এপ্রিল-ই ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস’ হিসেবেও পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী দেশসমূহ নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য ও বিভিন্ন কর্মসূচিকে সামনে রেখে এ দিবসটি উদযাপন করছে।
নিরোগ, হাসি-খুশি ভরা সফল জীবন যাপনের জন্য স্বাস্থ্যের কোনো বিকল্প নেই। অথচ আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে স্বাস্থ্যকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হয় না। উদাসীনতার মধ্য দিয়ে এদেশের সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যায়। তার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত- করোনা মহামারিতে এই ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ। শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদাসীনতার অভাবে এমনটি ঘটছে। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পানি পান, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ ও মাস্ক ব্যবহার এবং ঘন ঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া, নাকেমুখে অযথা হাত না দেয়ার মত স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চললে এ ভয়াবহ কোভিড প্রতিহত করা সম্ভব।
স্বাস্থ্য প্রধানত শারীরিক ও মানসিক হয়ে থাকে। শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারলেও মানসিক স্বাস্থ্যকে আমরা সবসময় উপলব্ধি করতে পারি না। মানসিক স্বাস্থ্যকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এই মানসিক স্বাস্থ্য প্রায় সময়ই দৈনন্দিন জীবনে ব্যর্থতা, দুশ্চিন্তা, গ্লানি, হতাশা ও বিষণœতায় আচ্ছন্ন করে রাখে। এতে ব্যক্তি উৎপাদনশীল কাজে সফল হতে পারে না। তাই সুস্থ বিনোদন এবং পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সাথে বেশি বেশি সময় কাটানোর মাধ্যমে আমরা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে পারি। পাশাপাশি শারীরিক স্বাস্থ্যেও যেন রোগ বাসা বাঁধতে না পারে সেদিকেও নজর দেয়া জরুরি। সময় মাফিক জীবন পরিচালনা করা, বেশি বেশি পুষ্টিকর ও পরিমিত খাবার গ্রহণ, মৌসুমি ফল গ্রহণ, দিনে অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান, পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা ও পর্যাপ্ত ঘুমানোর মাধ্যমে আমরা সহজেই শরীরকে সুস্থ রাখতে পারি। মনে রাখতে হবে, রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।
সর্বোপরি, সকলের জন্য শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতালের সুবিধা আরও বাড়াতে হবে। যদিও এখন সরকারের কমিউনিটি সেন্টারসমূহ এ ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করেছে, তথাপি সেখানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। এছাড়া স্বাস্থ্য নিয়ে পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীর মনে এখনও কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে। তারা এখনো হাসপাতালে না গিয়ে গ্রামীণ প্রাচীন প্রথাসমূহ অনুসরণ করে। এটি খুবই পরিতাপের! তাই জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে, তাদের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে সুস্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্যবান না হলে কাড়ি-কাড়ি টাকা জীবনকে অনর্থক করে তোলে। সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারলে করোনা ভাইরাসসহ যে কোন রোগ বালাই থেকে সহজেই পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। জীবনকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারকে, শিক্ষিত সমাজকে ও তরুণ প্রজন্মকে যৌথ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী