পসকো-পিএইচপি
নিজস্ব প্রতিবেদক »
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের পঞ্চাশোর্ধ নারী জোসনা আরা বেগম। টিনের ছাউনি আার প্লাস্টিকে মোড়ানো ছোট্ট ছাউনিতে অসুস্থ ছেলে, ছেলের স্ত্রী আর নাতনীকে নিয়ে মানবেতর জীবন পার করছিলেন। ছোট ঘরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় দুটি চেয়ার জোড়া দিয়ে রাতযাপন করতেন তিনি।
গৃহহীন এই নারীকে ৬০০ ‘বর্গফুটের ’ স্বপ্নের বাড়ি উপহার দিয়েছে দেশের বৃহৎ শিল্পগ্রুপ পিএইচপি ফ্যামিলি ও পসকো ইন্টারন্যাশনাল। রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে জোসনাকে স্বপ্নের বাড়ি হস্তান্তর করেন পিএইচপি ফ্যামিলি ও পসকো ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ।
শুধু জোসনা আক্তার একা নয়, তার সাথে মোহাম্মদ ইউসুফ, মো কামাল, ইউসুফ, নাছিরসহ ৫ পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়েছে স্বপ্নের বাড়ি।
২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে আরও ১১টি পরিবারের মধ্যে স্বপ্নের বাড়ি হস্তান্তর করবে পিএইচপি ফ্যামিলি।
নতুন বাড়ি পেয়ে আবেগ আপ্লুত জোসনা আরা বেগম বলেন, পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করতে হতো। বৃষ্টি নামলেই পরিবারের সবাই ভিজতে হতো। আমার অসুস্থ ছেলের পক্ষে পরিবারের ভরণপোষণ চালিয়ে নতুন ঘর করার কোনো সামর্থ্য ছিল না।
পিএইচপি আমাকে নতুন ঘর দিয়েছে। এতে আমার অনেক উপকার হয়েছে। এজন্য তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
নতুন ঘর পাওয়া দিনমজুর নাসির উদ্দিন বলেন, যেখানে পরিবারের ভরণপোষণ চালানো দুরুহ ছিল, সেখানে ঘর বানানো অসম্ভব ছিল। বিনামূল্যে এমন একটি ঘর পাবো কল্পনাও করিনি। এখন সন্তানদের নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাতে পারব।
সরেজমিন দেখা গেছে, নির্মল সবুজের মাঝে টিনের বেড়া ও রঙিন ঢেউটিনের ছাউনির দুই কক্ষের ৬০০ বর্গফুটের প্রতিটি বাড়ি। রয়েছে সুপরিসর এটাচ বাথরুম, বারান্দা। প্রতিটি বাড়ি তৈরিতে খরচ হয়েছে চার লাখ ৭০ হাজার টাকা।
বাড়ি হস্তান্তর করেন পসকো ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট কি আইন লী এবং পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পসকো ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ প্রধান আহসানুল আলম। পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান পিএইচপি ফ্যামিলির ম্যানেজার (মার্কেটিং) সাইফুল আলম।
পসকো ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ প্রধান আহসানুল আলম বলেন, ‘যাদের নিজস্ব জমি আছে, কিন্তু নির্মাণের সামর্থ্য নেই, আমরা তাদের জন্য বাড়ি তৈরিতে সাহায্য করছি। গৃহনির্মাণ প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে আমরা স্থানীয় এনজিও, এনআরডিএস-এর সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। (নোয়াখালী পল্লী উন্নয়ন সোসাইটি)। পিএইচপি পরিবারের সহযোগিতায়, আমরা আমাদের লক্ষ্য চালিয়ে যেতে চাই। ‘প্রথম পর্যায়ে, এই বছরের ডিসেম্বরে পরিবারের কাছে পাঁচটি ইউনিট হস্তান্তর করা হয়েছে , বাকিগুলো ২০২৩ সালের মার্চ মাসে হস্তান্তর করা হবে। গুণমান এবং টেকসই নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি বাড়িতে বাজারের সেরা উপকরণ দিয়ে কাজ করা হয়েছে।
পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘সরকারের জন্য এককভাবে সারা দেশে আবাসনের নিশ্চয়তা দেওয়া সত্যিই একটি চ্যালেঞ্জ। এ সমস্যা সমাধানে আমাদের এই উদ্যোগটি কীভাবে বেসরকারি খাত ভূমিকা পালন করতে পারে, এটি তার একটি উদাহরণ। সবকিছুর পরেও সবাই নিজের একটি বাড়ির মালিকানার স্বপ্ন দেখে, যা আমরা কিছুটা হলেও পূরণের চেষ্টা করছি।’
পসকো ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ম্যানেজার ড্যানিয়েল বলেন, বাংলাদেশের কিছু পরিবারকে সহযোগিতা করছি আমরা। শুধু আবাসন নয়, জীবনমান উন্নয়ন করতে চাই আমরা। ২৩ বছর ধরে ব্যবসায়িক সম্পর্ক পিএইচপির সঙ্গে। পিএইচপির ইকবাল হোসেনের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
উন্নয়ন সংস্থার এনআরডিএসের নির্বাহী পরিচালক আবদুল আউয়াল বলেন, অনেক কষ্ট করে কোরিয়ান অতিথিরা এখানে এসেছেন। সেজন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। পাঁচটি ঘরের এটা পাইলট প্রকল্প। যদি তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন এলে এর আওতা বাড়ানো হবে। বক্তব্য দেন ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল বাশার। কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা মফিজ উল্লাহ। সঞ্চালনা করেন পিইচপির নাজমুল হাসান।অনুষ্ঠান শেষে গৃহস্থদের হাতে বাড়ির চাবি হস্তান্তর করা হয়।