সুপ্রভাত ডেস্ক »
সিরিজে প্রথমবার টস জিতে সাকিব আল হাসানের মুখে হাসি, আগের দুই ম্যাচে দুইশ করেছি, আরেকবার কেন নয়? কিন্তু প্রতিদিনই কী আর প্রত্যাশা পূরণ হয়! আগ্রাসী ঘরানায় সাফল্যের সুবাস যেমন মোহনীয়, এই পথে তেমনি বিপদের কাঁটাও বিছানো থাকে প্রচুর। এবার সেই কাঁটায় বিদ্ধ হলো বাংলাদেশের ব্যাটিং। স্বল্প পুঁজিতে বোলাররাও পারলেন না চমকপ্রদ কিছু করতে।
শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ এড়াল আয়ারল্যান্ড। তিন ম্যাচের সিরিজ বাংলাদেশ জিতল শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানে।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুক্রবার শুরু থেকেই একের পর এক উইকেট হারিয়ে পরে শামীম হোসেনের ফিফটিতে বাংলাদেশ যেতে পারে ১২৪ রান পর্যন্ত। ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে এই পুঁজি নিয়ে লড়াই করাও কঠিন। সম্ভাবনা যতটুকু ছিল, সেটিও শেষ করে দেন পল স্টার্লিং। আইরিশরা জিতে যায় ৩৬ বল বাকি রেখে। সিরিজে প্রথমবার জ্বলে ওঠে স্টার্লিং ৪১ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেন ১০ চার ও ৪ ছক্কায়।
আগের দুই ম্যাচে যে পথে সাফল্য ধরা দিয়েছে বাংলাদেশের, সেই পথই এবার ডেকে আনে পতন। সাকিব অবশ্য এই সিরিজেই আগে বলেছেন, আক্রমণাত্মক ঘরানায় এগোতে গেলে মাঝেমধ্যে হোঁচট খেতেও হবে। সেই দিনটিই এলো সিরিজ জয়ের পর। একের পর এক উইকেট হারানোর পরও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা শট খেলে গেছেন। তবে দলকে উদ্ধার করতে পারেননি কেউ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ফিফটিতে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪২ বলে ৫১ রান করে শামীম দলের রান নিয়ে যান একটু ভদ্রস্থ পর্যায়ে।
বাংলাদেশের শুরুটা ছিল আগের দুই ম্যাচের ধারাবাহিকতায়ই। ম্যাচের প্রথম বল বাউন্ডারিতে পাঠান লিটন দাস, চতুর্থ বলে বাউন্ডারি পান রনি তালুকদার। প্রথম ওভারের পরই উল্টো যাত্রা। আগের দুই ম্যাচে ৯১ ও ১২৪ রানের জুটি এবার পারেনি দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিতে। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই আউট লিটন।
মার্ক অ্যাডায়ারের বলটি ছিল মারার মতোই। লিটন সেটি তুলে দেন কাভার-পয়েন্ট সীমানায় ফিল্ডারের হাতে। পরের ওভারে হেরি টেক্টরকে স্লগ সুইপ করে সীমানায় ধরা পড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত।
ভড়কে না গিয়ে পরের ওভারে কার্টিস ক্যাম্পারের লেংথ বল পুল করে চার মারেন রনি। এক বল পরই স্লগ করে তিনি ক্যাচ দেন মিড উইকেট সীমানায়।
চার ওভারে নেই তিন উইকেট, কিন্তু তাওহিদ হৃদয়েরও নেই সাহসের কোনো অভাব। টেক্টরকে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে তার ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় বাউন্ডারিতে, আউট হননি অল্পের জন্য। পরের বলেই স্লগ সুইপে ছক্কা! পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে অ্যাডায়ারকে চার মারার পরের বলে পুল করে বিদায় নেন সাকিব। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ ৪ উইকেট হারিয়ে তোলে ৪১। খেলার ধরনে তবু বদল আসেনি। উইকেটও পড়তে তাকে। লেগ স্পিনার বেন হোয়াইটকে স্লগ করতে গিয়ে উইকেট হারান হৃদয়। এই পালায় যোগ দেন অভিষিক্ত রিশাদ হোসেনও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম রানের দেখা পান তিনি তৃতীয় বলে দারুণ শটে ছক্কা মেরে। একটু পরেই তিনি বোল্ড হয়ে যান ম্যাথু হামফ্রিজের বলে। অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার টি-টোয়েন্টিতে উইকেটের স্বাদ পান প্রথম বলেই।
ওই ওভারেই যখন বিদায় নিলেন তাসকিন আহমেদ, দশম ওভারে বাংলাদেশের রান ৭ উইকেটে ৬১। একশ রান তখনও অনেক দূর।
অষ্টম উইকেটে নাসুম আহমেদকে নিয়ে ৩৩ রানের জুটি গড়েন শামীম। দলের রান শতরানের দুয়ারে নিয়ে বিদায় নেন নাসুম। শামীম দলকে এগিয়ে নেন আরেকটু। দারুণ কয়েকটি শটও খেলেন তিনি শেষ দিকে। ক্যাম্পারকে ছক্কা মারেন চোখধাঁধানো রিভার্স স্লগে। অ্যাডায়ারকে টানা দুই বলে ছক্কা ও চার মেরে পঞ্চাশে পা রাখেন ৪০ বলে। শেষ ওভারে তার বিদায়েই শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।
সহজ রান তাড়ায় তাসকিনের ফুল লেংথ বলে আয়ারল্যান্ড তৃতীয় ওভারে হারায় ওপেনার রস অ্যাডায়ারকে। তবে আরেক প্রান্তে স্টার্লিং ঝড়ো ব্যাটিংয়ে উড়ে যায় চাপও। ৫ ওভারে আইরিশরা তুলে ফেলে ৪১ রান। একাদশে ফেরা শরিফুল ইসলাম দ্রুত ফিরিয়ে দেন লর্কান টাকারকে। তবে স্টার্লিংয়ে ঝড় তুলতে থাকে। শরিফুলের টানা চার বলেই তিন মারেন এক ছক্কা তিন চার। ৩২ বলে ফিফটি স্পর্শ করে আরও এগিয়ে যান তিনি।
দলের জয় সঙ্গে করে অবশ্য ফিরতে পারেননি তিনি। রিশাদ হোসেনকে প্রথম উইকেট উপহার দিয়ে আইরিশ অধিনায়ক ফেরেন সীমানায় ক্যাচ দিয়ে। জয় তখন কেবল আনুষ্ঠানিকতার ব্যাপার। সেটিও সারা হয়ে যায় দ্রুতই। দুই দল এখন মুখোমুখি হবে একমাত্র টেস্টে, মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে যা শুরু আগামী মঙ্গলবার।