স্কেভেটর দিয়ে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে ২৬ পাহাড়

মামলা করছে না পরিবেশ অধিদপ্তর

নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁশখালী
বাঁশখালী-সাতকানিয়ার মাত্র ৪ বর্গ কিলোমিটারের ব্যবধানে চূড়ামণি ঢালা, সাধনপুর, পুকুরিয়া ইউনিয়নের ২৬ পাহাড় স্কেভেটরের কোপে সমতল ভূমিতে রূপ নিচ্ছে। দিনরাত নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়। মাটিগুলো টানছে প্রায় ৮৭টি লাইসেন্সবিহীন ড্যাম্পারযোগে লাইসেন্সহীন চালক। ওইসব পাহাড়ে অন্তত ১৩টি স্কেভেটর কোপাচ্ছে অবিরত মাটি। এসব কাটা পাহাড়ের মাটি ইটভাটায় ইট তৈরিতে, ধানী জমি ভরাট, বসতভিটা ভরাট কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। দিনরাত ড্যাম্পারে মাটি টানায় বাঁশখালী-সাতকানিয়া-কক্সবাজার- চট্টগ্রাম প্রধান সড়কে পিচঢালা রাস্তার ওপর মাটির প্রলেপ পড়ে গেছে। পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসনের কারো বাধা নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযানের নামে কয়েকদফা ঘুরে গেলেও কারো বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার মামলা করেনি। বন কর্মকর্তা কিংবা স্থানীয় প্রশাসন উর্ধ্বতন মহলে শুধু পাহাড় কাটার প্রতিবেদন দিয়েই চুপ করে রয়েছে।
হাইকোর্টের নির্দেশে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি ওইসব পাহাড়ে গড়ে ওঠা ১৮টি অবৈধ ইটভাটায় কয়েকদফা অভিযানে এসেও পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনী কারো বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার মামলা করেনি। শুধু ২৩ ফেব্রুয়ারি ৫টি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয়া এবং ৪টিতে জরিমানা করা হয়েছে।
অথচ ইটভাটায় আরও দুই দফা অভিযানে প্রভাবশালীদের ৮টিতে একবারও অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। তাই তারা দ্বিগুণ উৎসাহে নির্বিচারে পাহাড় কাটছে আর মাটি বিক্রয় করছে। স্থানীয় কয়েকজন ইটভাটার মালিকেরও অভিযোগ প্রশাসন বেছে বেছে ক্ষমতাহীন মালিকদের ইটভাটায় অভিযান চালাচ্ছে। যারা পাহাড় কেটে নির্বিচারে পাহাড় ধ্বংস করছে তাদের ইটভাটার ওপর এসে অন্য ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাঁশখালী-সাতকানিয়ার চূড়ামণি ঢালায়, সাধনপুর, পুকুরিয়া এলাকায় অন্তত ২৬টি পাহাড়ে দিনরাত স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে। এসব পাহাড় কাটা মাটি ইটভাটায় ইট তৈরিতে, ধানী জমি ভরাট, বসত ভিটা ভরাট কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাটিগুলো টানছে প্রায় ৮৭টি লাইসেন্সবিহীন ড্যাম্পারযোগে লাইসেন্সবিহীন চালক। ওই সব পাহাড়ে অন্তত ১৩টি স্কেভেটর এসব পাহাড় কাটছে।
চূড়ামণি ঢালার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫ জন ইটভাটার মালিক বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর হাইকোর্টের নির্দেশে আমাদের ইটভাটায় দুই দফা অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালীদের আরও ৮ ইটভাটায় কখনও অভিযান চালায় না। অথচ তারা নির্বিচারে এখনও প্রকাশ্যে পাহাড় কাটছে এবং বনের কাঠ পোড়াচ্ছে। আমাদের ইটভাটাগুলো জিগজাগ। যা চালু করার সরকারি নির্দেশনা আছে। অথচ প্রভাবশালীদের ইটভাটাগুলো হচ্ছে নিষিদ্ধ বয়লার ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের এ প্রশ্নবিদ্ধ অভিযানে আমরা হতাশ।
সাধনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ভয়াবহ পাহাড় কাটার ব্যাপারে আমি স্থানীয় প্রশাসনকে অভিযোগ করেছি। কিন্তু প্রশাসন কিছু না করলে আমাদের কিছু করার নেই ।’
সাধনপুর ইউনিয়নের বাণীগ্রাম ভূমি অফিসের তহশীলদার আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমি পাহাড় কাটার অভিযোগ পেয়ে যা দেখেছি তা প্রতিবেদন দিয়েছি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। এর চেয়ে আমার কোন ক্ষমতা নেই।’
বনকর্মকর্তা কালীপুর রেঞ্জার মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘৪ বর্গকিলোমিটারে ১৮টি ইটভাটা হলে মালিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাহাড়তো কাটবেই। ইটভাটা কিংবা পাহাড় কাটার ব্যাপারে ওপর মহলে প্রতিবেদন দিয়েছি। এর চেয়ে আমার বেশি ক্ষমতা নেই। পাহাড়খেকোদের ক্ষমতা আমার চেয়ে বেশি।’
চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, ‘পাহাড় কাটার ব্যাপারে দায়ীদের নিয়মিত মামলা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের সময় পাহাড় ধ্বংসকারী কারো বিরুদ্ধে মামলা হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ কিছু ব্যক্তির জরিমানা হয়েছে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি তদন্ত করা যায়নি তাই মামলা করা হয়নি। পরে মামলা করা হবে।’
ইটভাটা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনাকারী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিবাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ পাহাড় কাটার ব্যাপারে শিগগির অভিযান পরিচালনা করা হবে। কাউকে পাহাড় কেটে বীরদর্পে ঘোরার সুযোগ দেয়া হবে না।’