সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক :
ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবেই জাতীয় দলে সুযোগ হয়েছিল সৌম্য সরকারের। পাশাপাশি বোলিংও করতে পারেন বলে ২০১৫ বিশ্বকাপ দলে সুযোগ হয়েছিল। অথচ এই সৌম্যকে বোলারই মনে হয় না ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের!
অধিনায়কের মুখ থেকে ওমন কথা শোনার পর সৌম্যও জানিয়েছেন আরেকটি তথ্য। বিকেএসপিতে সৌম্যর বলেই কুপোকাত হয়েছিলেন দেশসেরা ওপেনার। মজার এসব তথ্যই উঠে এসেছে তামিমের ফেসবুক লাইভ আড্ডায়।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত হচ্ছে তামিমের এই ফেসবুক লাইভ। দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে চমৎকার এই অনুষ্ঠানটি ক্রিকেটপ্রেমীরা উপভোগ করছেন। শনিবার রাতে অতিথি হয়ে লাইভে ছিলেন মুমিনুল হক, সৌম্য সরকার ও লিটন দাস। তাদের নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা জমজমাট আড্ডা দিয়েছেন তামিম।
আড্ডার শুরুতে সৌম্যকে তামিম বলেছেন, ‘নিদাহাস ট্রফির শেষ ওভারে বোলিং করেছিলি। যদিও আমি তোকে বোলার হিসেবে গুনি না, তুই কোনও জাতের বোলারও না। মাঝে মাঝে হয়তো ভালো করিস। তার পরেও নিদাহাস ট্রফির শেষ ওভারে বোলিং করতে গিয়ে তোর অনুভূতিটা কী ছিল?
তামিমের এমন প্রশ্ন শুনে মুখে হাসি চলে আসে সৌম্যর। তার পরও কান্নাভেজা সেই ওভারের বর্ণনা তিনি দিয়েছেন, সাকিব ভাই যখন আমাকে বল দিয়েছে, আমার মাথায় তখন কিছুই ছিল না। তবে আমার একটা কথা মাথায় এসেছিল, রিয়াদ ভাই প্রিমিয়ার লিগে একবার আমাকে বল করতে দিয়ে বলেছিল, ‘তোর টার্গেট ৮ রান, এর বেশি দিবি না।’ ওই ওভার করতে গিয়ে রিয়াদ ভাইয়ের কথাগুলো মনে পড়ছিল।
প্রথম তিনটি বল নির্ভার থেকে করলেও তার পরেই বদলি ফিল্ডারের কথায় মানসিক চাপে পড়ে যান সৌম্য, ‘প্রথম তিন বল পর্যন্ত আমার কাছে কোনও অনুভূতিই হয়নি। হেরে যাবো, নাকি জিতবো-মাথার মধ্যে কিছুই ছিল না। আমি শুধু বলের পরিকল্পনাটা বাস্তবায়নে মনোযোগী ছিলাম। তবে চার নম্বর বলের সময় হঠাৎ সবাই বলছিল তুই পারবি, নো টেনশন। মাঠের বাইরে থেকে আমার জন্য জল নিয়ে এসে পাশে থাকা দুইজন আমাকে বললো, ‘সৌম্য তুই পারবি, টেনশন নিস না’।
এমন কথাতেই বাড়তি চাপে পড়ে যান সৌম্য। সেই মুহূর্তের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘সম্ভবত বদলি খেলোয়াড় হিসেবে সোহান ছিল। ওর কথাতে আমার মধ্যে টেনশন ঢুকে যায়। তখন মাথায় ঢোকে কী হতে যাচ্ছে। চার নম্বর বলটাতে ওই ওভারে সবচেয়ে ভালো বোলিং করেছিলাম, কিন্তু থার্ডম্যান দিয়ে চার হয়ে গেলো। ’
চতুর্থ বলে চার খেলেও সাকিব তাকে ঠিকই প্রেরণা দিয়েছেন, চার খাওয়ার পর সাকিব ভাই দৌড়ে এলো। আমাকে বললো, ‘কিছুই হয়নি, সব ঠিক আছে, এটা কিছুই না। তুই মনে কর, আজকে এই ম্যাচটাতে তোর হিরো হওয়ার চান্স আছে, কিন্তু জিরো হওয়ার চান্স নেই। তুইতো মূল বোলার না। তুই যদি ম্যাচটা জেতাতে পারিস, তুই আজকে বাংলাদেশ দলের হিরো হবি।’ এরপর ৫ নম্বর বলে বিজয় শংকর আউট হলো। সাব্বির-মিরাজ মিলে দুইজন ক্যাচ ধরেছে। তখন আমার কাছে মনে হয়েছিল, ক্যাচটা না ধরলেই মনে হয় ভালো হতো। দুই রান হতো, বিজয় শংকর স্ট্রাইকে থাকতো।
পুরো এক ওভারের মধ্যে সৌম্য সবচেয়ে বেশি নার্ভাস হয়েছেন শেষ বলে এসে। সেই অভিজ্ঞতার কথা তুলে তিনি বলেছেন, ‘শেষ বলে দরকার ৫ রান। ওই সময় চিন্তাটা বেশি ভর করেছে। আমার কোনও দিকে মনোযোগ নেই। হঠাৎ মুশফিক ভাই বলছে ওয়াইড ইয়র্কার। আমার মাথায় তখন ওই একটাই শব্দ। চিন্তা করছিলাম, আমি যদি ওয়াইড ইয়র্কার মারি, কোনায় লাগলেও চার হবে, ভালোভাবে লাগলে কাভারের ওপর দিয়ে চার। তাওতো আমি নিরাপদ, ড্রতো হবে।’
পরের গল্পটা সবারই জানা। অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল লেন্থের ডেলিভারিতে অবিশ্বাস্য শটে ম্যাচটি বাংলাদেশের কাছ থেকে কেড়ে নেন কার্তিক। সৌম্যকে শেষটা আর বলতে দেননি তামিম। সৌম্যর এতটুকু বলা শেষ হতেই তামিম আবারও বললেন, ‘আমি তো তোকে বোলার হিসেবে গুনি না। তারপরও তুই টুকটাক করতে পারিস। চেষ্টা করেছিস, কিন্তু পারিসনি।’
এই কথার পর সৌম্য চুপ থাকেননি, দর্শকদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘তামিম ভাই আমাকে বোলার হিসেবে গুনেন না। অথচ আমি তখন বিকেএসপিতে খেলতাম, তামিমের ভাইয়ের সঙ্গে বগুড়ায় একটি ম্যাচে আমার বাউন্সার তামিম ভাইয়ের মাথায় লেগেছিল (হাসি)।’
পাল্টা প্রশ্ন করে তামিম বলেছেন, ‘পরের বলে কী হয়েছিল সেটা বল।’ সৌম্য বললেন, ‘পরের বলতো দেখার বিষয় না। আমি তো তখন ছোট।’ ‘ভালো বলেছিস’- বলেই অন্য প্রসঙ্গে চলে যান তামিম।
খবর : বাংলাট্রিবিউন’র।
খেলা