নিজস্ব প্রতিনিধি, ফটিকছড়ি »
উপমহাদেশের প্রখ্যাত অলীয়ে কামেল আধ্যাত্মিক সাধক, মাইজভা-ার দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হযরত শাহছুফি মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ (ক.) মাইজভা-ারির ১১৭তম বার্ষিক ওরসের প্রধান দিবস আজ মঙ্গলবার। শত বছরের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর এ মহান অলির ওফাত (তিরোধান) দিবসের স্মরণে ১০ মাঘ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও বিশ্বের বহু দেশ হতে আগত লাখ লাখ আশেকের সমাগমে মহাসমারোহে ওরস শরিফ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
গত রোববার খতমে কোরআন, খতমে গাউছিয়া, নাতে মোস্তফা পরিবেশন, শানে গাউছিয়া পরিবেশন, মিলাদ মাহফিল, জিকির, ছেমা মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়। গতকাল সোমবার গাউছুল আজম মাইজভা-ারি (ক.) এর রওজা শরিফে গোসল ও গিলাফ চড়ানো ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
আজ মঙ্গলবার বিভিন্ন মঞ্জিলে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের সাজাদ্দানশীন সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভান্ডারি, গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলে সাজাদ্দানশীন সৈয়দ ডা. দিদারুল হক মাইজভান্ডারি, গাউছিয়া রহমান মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন ছৈয়দ মুজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, গাউছিয়া মঈনিয়া মঞ্জিলের সাজাদ্দাশীন সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী, গাউছিয়া হক মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ মো. হাসান মাইজভান্ডারী, সৈয়দ মনিরুল হক মাইজভান্ডারির পক্ষে পুত্রগণ সৈয়দ আহমদ হোসাইন শাহরিয়ার মাইজভান্ডারি, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন সোহেল মাইজভান্ডারি ও গাউছিয়া আমিন মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ সামশুল আরেফীন মাইজভা-ারি ।
গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের নায়েব মোন্তাজেম শাহজাদা সৈয়দ হোসেইন রাইফ নুরুল ইসলাম রুবাব মাইজভা-ারি জানান, প্রতিবছর মাইজভা-ার দরবার শরিফের এই সর্বপ্রধান উপলক্ষকে কেন্দ্র করে প্রায় দশদিনব্যপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
গাউছুল আজম মাইজভা-ারির ওরসে আগত দেশ বিদেশের আশেক-ভক্ত, জায়েরিনদের জন্য থাকা-খাওয়া, স্যানিটেশন, প্রাথমিক চিকিৎসা, পার্কিং, নিরাপত্তা, নির্বিঘেœ চলাচলের জন্য লাইটিং এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ওরস উপলক্ষে আলোকসজ্জা করা হয়েছে হযরত আহমদ উল্লাহ (ক.) রওজাসহ অন্যান্য রওজা এবং মঞ্জিলগুলো।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আশেকানে মাইভা-ারি ভক্তরা আসছেন বলে দরবার সূত্র জানায়। ওরসে আগত আশেক, ভক্ত, মুরিদান, জায়েরিনদের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ১ জন ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন, র্যাব, পুলিশ, আনসার, স্ব স্ব মঞ্জিলের স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ওরস শরিফে ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরা ও ভিডিও চিত্র ধারণের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে।
ওরসের প্রধান দিবস উপলক্ষে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শনিবার থেকেই ভক্তরা মাইজভা-ার দরবার শরীফে আসতে শুরু করেন। ভক্ত আশেকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে মাইজভা-ার দরবার শরিফ। জিকির, মাইজভা-ারি মারফতি গান, মিলাদ মাহফিলের ধ্বনিতে মুখর পুরো এলাকা।
ওরস শরিফ উপলক্ষে মাইজভা-ার গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের উদ্যোগে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। আগতদের সেবায় দরবার শরিফের বিশাল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ব্যস্ত রয়েছেন বলে আয়োজক সূত্রে জানা গেছে।
গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় গাউছিয়া আহমদিয়া (শাহ এমদাদীয়া) মনজিলের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ এমদাদল হক মাইজভা-ারি এবং বিকাল ৩টায় দরবাওে গাউছিয়া আহমদিয়া মনজিলের সাজ্জাদানশীন ডা. সৈয়দ দিদারুল হক মাইজভা-ারি, সাজ্জাদানশীন সৈয়দ শহিদুল হক মাইজভা-ারি, মাইজভা-ার গাউছিয়া হক মনজিলের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভা-ারী, শাহজাদা সৈয়দ আহমদ হোসাইন শাহরিয়ার মাইজভা-ারি এবং সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল মাইজভা-ারি মাজার শরিফে গোসল ও গিলাফ ছড়ানোর মাধ্যমে ওরসের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু করবেন।
আজ মঙ্গলবার রাত ১২টায় এবং রাত ১টায় স্ব স্ব মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীনদের আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে ওরসের আনুষ্ঠানিকতা। এ উপলক্ষে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন ও ফটিকছড়ি থানা পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
শাহ এমদাদীয়ার নায়েবে সাজ্জাদানশীন সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভা-ারী জানান, গাউছুল আজম মাইজভা-ারির ওরশে দেশবিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লাখো ভক্তের সুবিধার্থে থাকা-খাওয়া, প্রাথমিক চিকিৎসা, ও লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভা-ারির (ক.) জীবনী ও শানমান সম্বলিত বিশেষ ক্রোড়পত্র বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়েছে।