সুপ্রভাত ডেস্ক »
বিএনপি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা বাংলাদেশকে বিদেশিদের কাছে বন্ধক দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায় কি-না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সুইজারল্যান্ড সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখনও যদি বলি যে, না, ওই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেব, তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধা নাই, আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না।’ খবর বিডিনিউজের।
বিদেশে সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী সব সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ডাকেন। তাতে সফরের একটি লিখিত বিবরণ যেমন থাকে, তেমনি প্রশ্নোত্তরে উঠে আসে সাম্প্রতিক আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা। জানা যায় সরকারের অবস্থান, উঠে আসে তাদের পরিকল্পনা, বিরোধী দলের সম্পর্কে মনোভাব।
এই সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন সেন্ট মার্টির দ্বীপ প্রসঙ্গেও।
বাংলাদেশের নির্বাচন ও নানা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নানা বক্তব্য ও পদক্ষেপের পর ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সম্প্রতি জাতীয় সংসদে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চায়। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে খেলতে দেওয়া হবে না। আমার দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো জায়গায় কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাবে, কাউকে অ্যাটাক করবে বা এ ধরনের কাজ- আমরা হতে দেব না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, আমরা শান্তিপূর্ণ সহযোগিতায় বিশ্বাস করি।
‘কিছু কিছু তো আছে, আমি আগে বললাম অন্য দেশের তাবেদারি করবে দেশের মাটি ব্যবহার করে অন্য দেশে আক্রমণ করবে, আমার দেশকে নিয়ে খেলবে, এটাতো আমি অন্তত হতে দিতে পারি না। এটা তো আমি হতে দেব না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি অভিযোগ করেন, ২০০১ সালে বিএনপি ‘গ্যাস বিক্রি করার’ মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘এখন তারা দেশ বিক্রি করবে, নাকি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়?
‘আমি তো এটুকু বলতে পারি যে, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের কন্যা। আমার হাত থেকে এদেশের কোনো সম্পদ কারও কাছে বিক্রি করে আমি ক্ষমতায় আসতে চাই না। ওই গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।’
বাংলাদেশে নির্বাচন ‘বাধাগ্রস্তকারীদের’ উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে লেখা ছয় মার্কিন কংগ্রেস সদস্যের চিঠির বিষয়টি ইঙ্গিত করেও কথা বলেন শেখ হাসিনা। সেই চিঠিতে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা চাপে আছে। তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, দেশের মানুষকে সচেতন হতে হবে। ঠিক যেভাবে আমাদের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায় প্রতিবাদ করেছে। বলেছে যে, না, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভুয়া তথ্য, সেভাবে সকলকে সোচ্চার হতে হবে।’
নির্বাচন যত কাছে আসবে, তত বেশি বেশি পরিমাণে এ ধরনের ‘অপপ্রচার’ চালবে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘মানুষকে তারা বিভ্রান্ত করছে এটা ঠিক। কাজেই আমি দেশবাসীকে বলব এ সমস্ত অপপ্রচারে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না।
‘এরা বলতেই থাকবে, যত ইলেকশন সামনে আসবে আরও বেশি বলবে। কিন্তু নিজেদের মনে নিজে প্রশ্ন করতে হবে, আসলে ভালো আছেন কি-না, দেশটা ভালো চলছে কি-না, দেশটা এগোচ্ছে কি-না, দেশটার আরও উন্নতি হবে কি-না।’
সংবাদ সম্মেলনে একজন গণমাধ্যমকর্মী প্রশ্ন রাখেন রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়েও। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এলেও ‘শান্তির নীতিতে’ চলার কারণে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশ কোনো ‘ঝগড়া’ করেনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়- এই নীতিতে বিশ্বাস করি, সেভাবে আমরা মেনে চলব।’
তত্ত্বাবধায়ক ‘নষ্ট’ করেছে তারাই, আবার কি জরুরি অবস্থা চায়
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ‘নষ্ট’ করার জন্য এই সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, উচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। এখন নির্বাচন তার আলোকেই হবে।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলো গণতান্ত্রিক ধারাকে ‘নষ্ট করার জন্য’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। বিরোধী দলগুলো ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের ‘ধরপাকড়’ ও জরুরি অবস্থায় ফিরে যেতে চায় কি না, সে প্রশ্নও তিনি রেখেছেন।
সাংবাদিকদের একটি প্রশ্ন ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির দাবির বিষয়ে। এ সরকার ব্যবস্থা ছাড়া দলটি ভোটে অংশ না নেওয়ার, এমনকি ভোট হতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সময়ে আমাদের বিরোধী দল থেকে নানা রকম প্রস্তাব এখন আবার তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে খালেদা জিয়ারই উক্তি ছিল যে, ‘পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়।
‘একবার যেটা তারাই বাদ দিয়েছে, এই পদ্ধতিটা তারাই নষ্ট করেছে, তারাই কিন্তু এটা রাখেনি, সেটাকে আবার তারা ফেরত চাচ্ছে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আদালতের রায়ের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন আওয়ামী লীগ প্রধান। তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায় আছে এবং সেই মোতাবেক আমাদের সংবিধানও সংশোধন করা হয়েছে যে, একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধান আরেকজন নির্বাচিত সরকার প্রধান দ্বারাই প্রতিস্থাপিত হবেন। এর বাইরে অনির্বাচিত কেউ আসতে পারবে না।’
বিরোধী দলগুলোকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (বিএনপি) কি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চান? অর্থনৈতিক উন্নতি চান? দেশের মানুষের কল্যাণ হোক সেটা চান?
‘নাকি আবার সেই ২০০৭-এর মত তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আবার সেই ইমার্জেন্সি, আবার সেই ধরপাকড় সেইগুলি চায়? এটা তো দেশের মানুষকে বিবেচনা করতে হবে।’
তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে বিতর্ক
আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখেই ১৯৯৬ সালে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংযোজন করে বিএনপি। তখন সিদ্ধান্ত হয়, সবশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান। তিনি রাজি না হলে সব দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে একজন হবেন এই সরকারের প্রধান। আর আলোচনায় কাউকে পাওয়া না গেলে হবেন রাষ্ট্রপতি।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোটে জিতে ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ। সেই মেয়াদ শেষে ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে জিতে বিএনপি-জামায়াত জোট আসে ক্ষমতায়। তবে সেই সরকারের আমলে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা দুই বছর বাড়ানো নিয়ে তৈরি হয় রাজনৈতিক বিরোধ।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার কথা হয় অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের। তিনি এককালে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ফলে তাকে মেনে নিতে রাজি ছিল না আওয়ামী লীগ।
আন্দোলনের একপর্যায়ে কে এম হাসান জানান, তিনি ওই পদের জন্য আগ্রহী নন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের পদে কে আসবেন, এ নিয়ে বিরোধের মধ্যেই বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেন।
তখন ইয়াজউদ্দিনের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট যায় আন্দোলনে। একবার পিছিয়ে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়।
একতরফা নির্বাচনের দিকে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন ভোটের ১১ দিন আগে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। ইয়াজউদ্দিন আহমেদ জরুরি অবস্থা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের পদ ছেড়ে দেন। দায়িত্ব নেন ফখরুদ্দীন আহমেদ।
সেই সরকার প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভোট দেয়। সেই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জিতে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সংবিধানের যে সংশোধনীর মাধ্যমে এই সরকারব্যবস্থা চালু হয়েছিল, সেই ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আইনজীবী এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজন রিট আবেদন করেছিলেন। শুনানি নিয়ে ২০০৪ সালে হাই কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বৈধ বলে ঘোষণা করে।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের রায় যায় রিট আবেদনকারী পক্ষ। ২০১০ সালের ১১ মে আপিল বিভাগ হাই কোর্টের রায় পাল্টে এই সরকারব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করে।
আপিল বিভাগের সেই আদেশের ওপর ভিত্তি করে ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপের পাশাপাশি অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ বিবেচনায় সর্বোচ্চ দ-ের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়।
সংবিধানের এই সংশোধনী মেনে না নিয়ে ২০১৪ সালেরর ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে যায় বিএনপি। তবে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তারা অংশ নেয় নির্বাচিত সরকারের অধীনেই। সেই নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে এখন আবার পুরনো দাবিতে ফিরে গেছে দলটি।
‘সব জেনেও সংবিধানের ধারাবাহিকতা নষ্টের চেষ্টা’
প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, উচ্চ আদালতের রায়ের বিষয়টি জেনেও বিএনপির আন্দোলনের উদ্দেশ্যটা হল ‘অসাংবিধানিক সরকার’ আনা।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের গণতন্ত্রটা ওয়েস্ট মিনস্টার টাইপ অব ডেমোক্রেসি, ঠিক ইংল্যান্ডের মত জায়গায় যেভাবে নির্বাচনটা হয়, ঠিক সেভাবে আমাদের এখানে নির্বাচন হবে।
‘এটা যেমন উচ্চ আদালতের রায় আছে, আবার আমাদের সংবিধানেও কিন্তু সেটা আছে। তো, যতক্ষণ পর্যন্ত আরেকজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান ক্ষমতা না নেবে, সেটা পরিবর্তন হবে না। একজন নির্বাচিতর জায়গায় আরেকজন নির্বাচিতই আসতে হবে। এটাও সকলেই জানে। জানার পরেও, আমি জানি না কেন এই সাংবিধানিক জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে? উদ্দেশ্যটা কী?’
পরে নিজেই প্রশ্নের জবাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘তার মানে এই গণতান্ত্রিক ধারাটাকে নষ্ট করা। এই যে দীর্ঘ সাড়ে ১৪ বছরের বাংলাদেশটা যে সুষ্ঠুভাবে চলছে, আর্থ সামাজিক উন্নতি করছে সেটাকে নষ্ট করা। তো, দেশবাসী এটা কীভাবে সেটাই আমার প্রশ্ন।’
মূল্যস্ফীতিতেও অভাব নেই
নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং এ নিয়ে সরকারের চেষ্টা নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মানুষ দুবেলা পেট ভরে ভাত খাচ্ছে। এত ইনফ্লেশনের মধ্যেও মানুষের খাবারের অভাব তো ওভাবে হচ্ছে না।
‘হ্যাঁ, একটু চাপে আছে মানুষ, আমি জানি। সেই কষ্টটা আমি বুঝি। বুঝি বলেই আমাদের প্রচেষ্টা আছে, মানুষের দুঃখকষ্ট সহজ করার চেষ্টা করছি।’
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সাড়ে ১৪ বছর আমরা এই অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন, যত রকমের অপপ্রচার- এই সবগুলো মোকাবেলা করেই কিন্তু দেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
‘তো, সেটাই মানুষ চাইবে, না আবার সেই সন্ত্রাস যুগে প্রবেশ করবে, ভোট চুরির, ভোট ডাকাতির যুগে প্রবেশ করবে, জনগণের উপর ছেড়ে দিচ্ছি। জনগণের উপর ছেড়ে দিচ্ছি, তারা ঠিক করুক কী করবে।’
শত ফুল ফুটতে দিন
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারা আওয়ামী লীগের টিকেট পাবেন, সে বিষয়ে ধারণা দিয়েছেন দলটির সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নৌকা প্রতীকে লড়তে যারা প্রার্থী হবেন, তাদের মধ্য থেকে সবথেকে ভালো প্রার্থীকেই বেছে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচনের আগে মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘাত হচ্ছে, অনেক পেশার অবসরপ্রাপ্ত অনেকে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নের কোনো বার্তা দেবেন কিনা, প্রধানমন্ত্রীকে এই প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে বাংলাদেশে ৫০ বছরের ইতিহাসে সর্বপ্রথম স্থিতিশীল পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে বলেই কিন্তু দেশের উন্নতি হয়েছে, দেশটা একটা জায়গায় এগিয়ে গেছে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এবং মানুষের ভেতরে আস্থা-বিশ্বাস ফিরে এসেছে। দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে, মানুষের আয় বেড়েছে, সব দিক থেকে উন্নতি হয়েছে।
‘স্বাভাবিকভাবে সামনে ইলেকশন আসলে প্রার্থী হবার জন্য অনেকেরই আকাক্সক্ষা থাকবে, এতে তো কোনো সন্দেহ নেই। আর নির্বাচন যখন হবে, কাকে প্রার্থী করা হবে, কাকে প্রার্থী করা হবে না, এটা তো আমাদের দলেরও একটা লক্ষ্য থাকে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ইলেকশন হোক এটা তো সবসময় আমাদেরই দাবি। কারণ পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের পরের কথা চিন্তা করেন। প্রতিটি ইলেকশন কি হত? তখন তো ইলেকশন বলে কিছু ছিল না। মানুষের ভোটের অধিকার ছিল না। মানুষের সমস্ত ভোটের অধিকার সবইতো একটি জায়গায় বন্দি ছিল।’
অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করে ‘জনতার ক্ষমতা জনতার হাতে’ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইলেকশন নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলতে পারে। যারা কথা বলছে তাদের কথা তো আলাদা। তারা তো কখনো ওরকম জনগণের কাছে গিয়ে তৈরিও না।
‘কাজেই আওয়ামী লীগ সবসময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই আজকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। (গণতন্ত্র) ফিরিয়ে এনেছি বলেই গণতান্ত্রিক পরিবেশে ইলেকশন হবে, অনেকেই তো প্রার্থী হতে পারে। প্রার্থী যদি হয়, শত ফুল ফুটতে দিন, যে ফুলটি সব থেকে সুন্দর সেটি আমি বেছে নেব। আমার উত্তর পরিষ্কার।’
সংবিধান অনুযায়ী দেশে সময়মত নির্বাচন হবে বলেই আরেক প্রশ্নের উত্তরে জানান প্রধানমন্ত্রী।
যারা দাম বাড়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি
পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও যারা পণ্যের মূল্য বাড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার দুপুরে সুইজারল্যান্ড সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে তিনি বলে, পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা সত্ত্বেও দাম বাড়েৃ কিছু লোক মজুদদারি করে, ইচ্ছা করে দাম বাড়ায়। তখনই আমাদের কিছু বিকল্প পদক্ষেপ নিতে হয়।
পেঁয়াজের দামের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, “আমি জানি যে পেঁয়াজ আছে, পেঁয়াজ ছাড়ছে না নিয়ে বসে আছে। পেঁয়াজ পচা হলে ফেলে দেবে, তাও বেশি দাম ছাড়া বিক্রি করবে না। যখন আমি আমদানি শুরু করলাম, পাঁচ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করব ঠিক করলামৃ ১০-১২ হাজার (মেট্রিক টন) আসতে না আসতে পেঁয়াজের দাম কমে গেল। কারণ তারা দেখল, এই ব্যবসায় আর লাভ নাই। এরকম যারা রোলিং করে, মজুদদারি করে, কালোবাজারি করার চেষ্টা করে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে, ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।
পরে প্রশ্নোত্তর পর্বে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার বিষয়টি এলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা সাংবাদিকরা খুঁজে খুঁজে বের করে দেন। কোথায় কে গুঁজে রাখল আমরা খুঁজে খুঁজে বের করে নিয়ে নেব- মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেই ব্যবস্থা নেব।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, দেশে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও বেশ কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে, এর পেছনে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে, নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেনো?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু লোক তো থাকে- তারা সুযোগ সন্ধানী, সুযোগ নিতে চেষ্টা করে। আমরা করোনাভাইরাসের পর থেকে যখনই যুদ্ধ লেগেছে তখনই আমি আহ্বান করেছিলাম যে, এই এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদী না থাকে। কারণ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক হারে খাদ্য মন্দা দেখা দেবে। মানে ইউক্রেইন, রাশিয়া, বেলারুশ ওইসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি খাদ্য উৎপাদন হয়, সারা বিশ্বের খাদ্য চাহিদা তারা পূরণ করে। ‘অথচ দেখা যাচ্ছে, সেখানে হয়ত সেভাবে উৎপাদন হচ্ছে না বা পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে, খাদ্যের দাম বেড়েছেৃ আমরা কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি যখন কিনতে পারি নাই, স্যাংশনের কারণে আমরা বিল পেমেন্ট দিতে পারছি না। আমরা কিন্তু কানাডা থেকে ২০০ ডলারের গম ৬০০ ডলার দিয়ে কিনেছি, ৮০০ ডলারের জাহাজ ভাড়া প্রায় চার হাজার ডলার দিয়ে আমাদেরকে আনতে হয়েছে এসব আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, এটা ঠিক আমাদের যারা নির্দিষ্ট আয়ের লোক যখনই জিনিসের দাম বাড়ে তাদের ওপর চাপ পড়ে। সেক্ষেত্রে অন্যান্য দেশ তাদের ইনফ্লেশন কমানোর জন্য যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেৃ আমরা যদি সেরকম অনুসরণ করি। আমরা ধীরে ধীরে কিন্তু একটা একটা করে পদক্ষেপ নিচ্ছি। সেই ব্যাংকিং সেক্টর থেকে শুরু করে আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেওয়া শুরু করেছি।
পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের কষ্ট যাতে না হয়, ইতোমধ্যে আমি বললাম, আপনাদেরকে আগেই এক কোটি মানুষকে খাবার সাহায্য দেব। তাছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যাতে স্বল্প মূল্যে কিনতে পারে টিসিবির মাধ্যমে, কার্ডের মাধ্যমে আমরা সেগুলো তাদের কাছে পৌঁছানো আমরা বেশি দামে কিনছি, ভর্তুকি দিচ্ছি কিন্তু সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য আমরা এই ব্যবস্থা নিয়েছি যাতে বাজারের ওপরে চাপ না পড়ে।
এবারে যেমন ইফতার পার্টি করিনি, বলেছি সবাই মানুষকে খাবার সাহায্য দাও। যার ফলে রোজার সময়ে কিন্তু সেভাবে জিনিসের দাম বাড়তে পারেনি। প্রত্যেকটা মানুষ কিছু কিছু মানুষকে সহযোগিতা করেছে। বিশেষ করে আমি আমার দলকে তো ধন্যবাদ জানাব, প্রতিটি সহযোগী সংগঠন যেমন করেছে, আবার বিত্তশালীরাও করেছে।
উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উৎপাদনটা বাড়াতে হবে। উৎপাদন বাড়লে নির্ভরশীলতা কমে যায়। এবারে আমাদের প্রচুর ধান উৎপাদন হয়েছে, ভালো ফসল হয়েছে। আগামীতেও আসবে। আমাদের আহ্বানের পরে কোথাও কিন্তু এতটুকু জমি অনাবাদী নেই, সবাই চাষ করছে, সবাই নিজে কিছু কিছু উৎপাদন করে যাচ্ছে।
বর্ষাকালে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কাঁচা মরিচের দাম বাড়লে সবাই চিৎকার করে। আমি সবাইকে বলি এখন থেকে কাঁচা মরিচ কিনে রোদে শুকিয়ে রেখে দেন বর্ষাকালে দাম বাড়বে।
ওইটা রেখে দিনে ওটা কিছু পানি দিলে ওটা তাজা হয়ে যায়… আবার রান্না করে খাওয়া যায় সহজ বুদ্ধি। টমেটো অতিরিক্ত হয়েছে কী করব? আমি বলি শুকিয়ে রেখে দেন এটা তো বিদেশে ভীষণভাবে চলে, পেঁয়াজও তাই। সব বিভাগীয় শহরে ‘ফ্রিজার সিস্টেম’ করে অতিরিক্ত উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়ে আমি বলতে চাই- আমি আরেকটা উদ্যোগ নিচ্ছি যে, আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে উৎপাদন হবে যেগুলোকে দীর্ঘদিনের জন্য সংরক্ষণের একটা বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছি। সেটা আমরা চিলিং সিস্টেম, ফ্রিজার সিস্টেম করব প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে, যাতে আমাদের অতিরিক্ত উৎপাদিত পণ্যগুলো সংরক্ষণ করতে পারি আপৎকালীন সময়ের জন্য,’ বলেন তিনি।