সীতাকুণ্ডে ভূগর্ভস্ত পানির সংকট মোচনে সচেষ্ট হতে হবে

সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন এলাকার একাধিক নলকূপ স্থাপনকর্মী ও নলকূপ ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কথা বলছেন তারা। নলকূপ ব্যবসায়ীরা জানান, যাদের সামর্থ্য আছে তারা সাবমার্সিবল পাম্প ও গভীর নলকূপের দিকে ঝুঁকছেন। পাঁচ থেকে ছয় বছর আগেও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের যেসব যন্ত্র বিক্রি করতেন, তার ৯০ শতাংশই ছিল অগভীর নলকূপ। মাত্র ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় স্থাপন করা যায় বলে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যেই ছিল এটি। তবে আগে যেখানে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ১০০টি অগভীর নলকূপ বিক্রি করতেন সেখানে এখন এই ধরনের পানি উত্তোলন যন্ত্র বিক্রি প্রায় শূন্যের কোটায়। অগভীর নলকূপের বিকল্প হিসেবে এখন সাবমার্সিবল পাম্প ও গভীর নলক‚পের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

সীতাকুণ্ড উপজেলার মোট জনসংখ্যা চার লাখ ৫৪ হাজার ৫১ জন। জনপ্রতি ৬৪ (নগরের পানি ব্যবহারের হিসাবে) লিটার চাহিদা ধরলে পানি প্রয়োজন ২ কোটি ৯০ লাখ ৬০ হাজার লিটার। এই চাহিদার ঠিক কতটুকু পূরণ হচ্ছে তার কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও পানির জন্য সীতাকুণ্ডের অধিকাংশ মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করেছেন উপজেলার সরকারি কর্মকর্তারা।

এ উপজেলায় ভূগর্ভস্ত পানির সংকটের জন্য স্থানীয়রা শিল্পকারখানাকে দায়ী করছেন। এখানে সব মিলিয়ে কারখানার সংখ্যা ১৯৬টি। এরমধ্যে ৭৩ শতাংশ ভারী শিল্প। ভারী শিল্পের মধ্যে ৭৫টি জাহাজভাঙা এবং ৪৩টি ইস্পাত কারখানা। এছাড়া আছে ৫ টি বস্ত্রকল, তিনটি সিমেন্ট, তিনটি গাড়ি সংযোজন ও যন্ত্রাংশ, নয়টি এলপি গ্যাস, ৪টি পেট্রোলিয়াম পরিশোধন এবং একটি করে টাইলস ও কাঁচ শিল্প কারখানা।

শিল্প উদ্যোক্তাদের তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গড়ে ইস্পাত পণ্য তৈরি হয় ২৪ হাজার ৬৫৭ দশমিক ৫৩ টন। এর ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ১৪ হাজার ৭৯৪ দশমিক ৫২ টন উৎপাদিত হয় সীতাকুণ্ডে। এরজন্যই প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি লিটার মিঠাপানির প্রয়োজন হয়।
ভারী শিল্প কারখানা মিলিয়ে প্রতিদিন আরও এক কোটি লিটারের বেশি মিঠাপানির প্রয়োজন হয় সীতাকুণ্ডে।

উৎপাদন অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় এই মিঠাপানি দূরবর্তী নদী থেকে সংগ্রহ না করে সরাসরি ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করে কারখানাগুলো। আর দীর্ঘদিন পানি উত্তোলনের কারণে নিচে নেমে গেছে পানির স্তর। অনেক কারখানা এখন প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তারাও ভূগর্ভস্থ পানির বিকল্প খোঁজছে। শিল্প কারখানায় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আপত্তি জানিয়ে আসছেন পরিবেশকর্মীরা। তাদের আপত্তি এতো দিন কানে তোলেনি শিল্প মালিকরা।

দেশে শিল্পকারখানার যেমন দরকার আছে তেমনি মানুষের প্রয়োজন মেটাবারও দরকার আছে। ভূগর্ভস্ত পানি শিল্পকারখনায় ব্যবহারের সিদ্ধান্ত কখনেই ঠিক নয়। এই পানি আমাদের পানীয় জল মেটানোর বড় আধার। সে আধার শূন্য করে ফেললে ভবিষ্যতে এই নদীমাতৃক দেশকেই খাওয়ার পানি আমদানী করতে হবে। শিল্পকারখানার জন্য অন্য পানির ব্যবস্থা হোক। পানির অপর নাম জীবন। কাজেই সে পানি ছাড়া একটি এলাকা বা অঞ্চলে জনবসতি টিকে থাকবে কী করে। আমাদের নীতিনির্ধারকদের এসব নিয়ে ভাবা উচিত।