নিজস্ব প্রতিবেদক »
‘পাঠান’ সিনেমার মাধ্যমে বহুদিন পর পুরো উদ্যমে বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। ভারতের দর্শকরা সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছেন অ্যাকশন থ্রিলার ছবি পাঠানকে। এর ব্যতয় ঘটেনি বাংলাদেশেও। জল্পনা কল্পনা কাটিয়ে গত ১২ মে বাংলাদেশের ৪১টি হলে মুক্তি পেয়েছে ‘পাঠান’ চলচ্চিত্রটি। পাঠানের মাধ্যমে রোমান্টিক হিরোখ্যাত শাহরুখ চূড়ান্ত অ্যাকশন হিরো হিসেবেও দর্শকের মনে জায়গা করে নিলেন। মূলত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক এজেন্টের চরিত্রে দেখা যায় পাঠানকে (শাহরুখ খান)। একজন সৈনিকের দেশপ্রেম এবং দেশ ও দেশের মানুষের জন্য প্রাণপন লড়ে যাওয়ার গল্পই ‘পাঠান’। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি ভারতীয় প্রজাতন্ত্র দিবসে মুক্তি পায় ছবিটি।
সিলভার স্ক্রিন সিনেপ্লেক্সে ১২ থেকে ১৮ মে পযর্ন্ত ‘পাঠান’ চলবে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ শো’র টিকিটই বিক্রি হয়ে গেছে। হল কতৃর্পক্ষও দর্শকদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়ে উদ্বেলিত। দর্শকরা বলছেন, বিদেশি সিনেমা মুক্তি পেলে দেশেও নির্মাতাদের মধ্যে ভালো ভালো কাজ করার একটি প্রতিযোগিতা পূর্ণ পরিবেশ তৈরি হবে।
এর আগে ২০১৫ সালে ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশে সালমান খানের সিনেমা ‘ওয়ান্টেড’ মুক্তি পাওয়ার পর শিল্পী ও নির্মাতাদের আন্দোলনের মুখে হিন্দি সিনেমা প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। তার ১২ বছর পর নতুন করে বাংলাদেশে হিন্দি সিনেমা প্রচারের আলোচনা চলতে থাকে। শিল্পীদের কেউ এর পক্ষে কেউবা বিপক্ষে। অবশেষে মুক্তির (২৫ জানুয়ারি, ২০২৩) ৪ মাস পর গত ১২ মে বাংলাদেশে একযোগে ৪১টি সিনেমা হলে ‘পাঠান’ দেখানো হয়। হিন্দি ছবির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি (১ হাজার ৫০ কোটি রুপি) আয় করে পাঠান। তবে বাংলাদেশের হলে মুক্তির আগে, ওভার দ্যা টপ (ওটিটি) প্লাটফর্ম অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি (২২ মার্চ, ২০২৩) পাওয়ার ফলে, বাংলাদেশের অনেক দর্শক হলে সিনেমাটি দেখছেন না। তাই হল কতৃর্পক্ষের ভাষ্য, ওটিটি প্লাটফর্মে মুক্তি না পেলে দর্শকের সংখ্যা আরো কয়েকগুণ বাড়তে পারতো।
সিলভার স্ক্রিন সিনেপ্লেক্সে ‘পাঠান’ দেখতে আসা মালিহা তাব্বাসুম নামে এক দর্শক বলেন, ‘বলিউড তাদের মুভিতে যেভাবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তাতে এটা স্পষ্ট যে তারা হলিউডকে টেক্কা দিতে চাইছে। সে জায়গা থেকে আমরা নেটে বা অন্যান্য মাধ্যমে যদি তাদের কাজ দেখি, তাহলে সিনেমা হলে কেন নয়? ইংরেজি মুভিগুলো তো দেখানো হচ্ছে। সবার কাজ দেখলে, আলোচনা-সমালোচনা হলেই, দেশের নির্মাতাদের কাছ থেকে ভালো কাজ বেরিয়ে আসবে। আমাদেরও পাল্লা দেওয়ার প্রবণতা তৈরি করতে হবে। গতানুগতিক ধারায় তো এগিয়ে যাওয়া যায় না, বিশেষ করে এরকম প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশে। তাই দেশি বিদেশি সকল কাজকেই সুযোগ দেওয়া হোক এটাই চাই।’
আহমেদ জাকারিয়া নামে আরেক দর্শক বলেন, ‘আমাদের দেশেও বিদেশের শিল্পীদের ভক্তরা রয়েছে। আমাদের বরাবরই ইচ্ছে থাকে যদি প্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রীর সিনেমাটা দেখতে পারতাম। অনেক বছর পর সেই আশা পূরণ হল। দুর্দান্ত হয়েছে সবার অভিনয়। তবে ভিলেন হিসেবে এবার জন আব্রাহামের অভিনয়ও ভালো ছিল। আমাদের দেশেও যদি এরকম কাজ হয় তাহলে দর্শকেরা সেগুলোকেও সানন্দে গ্রহণ করবে। দিনশেষে নাটক সিনেমা এসব তো আনন্দ বিনোদনের জন্যই।’
সিলভার স্ক্রিন সিনেপ্লেক্সে’র অপারেশন ম্যানেজার সালাউদ্দিন পারভেজ বলেন, ‘১২ মে থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছি। বিদেশি সিনেমা হিসেবে সবাই ভালো ভাবেই গ্রহণ করেছে। আসলে ভালো কাজ হলেই ভালো সাড়া পাওয়া যায়। দেশের কাজ হোক বা বিদেশের। যেমন ‘হাওয়া’ সিনেমা প্রায় ছয় মাসব্যাপী আমরা শো রেখেছি। এখনও অনেকে জানতে চায়, হাওয়া’র কোনো শো আছে কিনা। অর্থাৎ ভালো স্টোরি, ভালো ম্যাসেজ, ভালো কন্টেন্ট হলে দর্শক ভালোভাবেই গ্রহণ করে। শনিবার ঘূর্ণিঝড়ের সিগন্যাল থাকার পরও দর্শক এসেছেন। তবে ওটিটি প্লাটফর্মে মুক্তি না পেলে বাংলাদেশে পাঠানের দর্শকের সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বাড়তে পারতো। সরকারের পক্ষ থেকে বছরে ১০টি ভারতীয় ছবি প্রদর্শন করার অনুমতি রয়েছে। সামনে যে ছবিগুলো হিট করবে বেশি সেগুলো বাংলাদেশের দর্শকদেরও হলে দেখানোর ব্যবস্থা করা হবে।’
যশ রাজ ফিল্মসের ব্যানারে সিদ্ধার্থ আনন্দের পরিচালনায় সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান, দীপিকা পাডুকোন, জন আব্রাহাম, ডিম্পল কাপাডিয়া এবং আশুতোষ রানা। রচনায় ছিলেন শ্রীধর রাঘবন এবং আব্বাস তাইরেওয়ালা।