নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :
নিহত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের সহকর্মী শিপ্রা দেবনাথের ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে ভাইরাল করার অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করতে যাওয়া মামলাটি গ্রহণ করেনি কক্সবাজার সদর থানা পুলিশ। গত মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) রাতে শিপ্রাসহ তার আইনজীবী সদর থানায় মামলা করতে গেলে রামু থানা বা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন কক্সবাজার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ খাইরুজ্জামান।
শিপ্রার আইনজীবী মাহবুবুল আলম টিপু বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৯, ২৫ এবং ২৯ ধারায় মামলা করতে এসেছিলেন শিপ্রা। আমরা ওসি (অফিসার ইনচার্জ) সাহেবের সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমাদের জানান, ঘটনাস্থল হিমছড়ির রামু থানা হওয়ায় সেখানে মামলা করতে হবে। সেই সঙ্গে ওসি সাহেব আমাদের ট্রাইব্যুনালেও মামলা করার পরামর্শ দেন। যেহেতু মামলায় সময়ক্ষেপণ হবে সেহেতু তিনি এ পরামর্শ দেন।’
আইনজীবী মাহবুবুল জানান, ‘ওসি বলেছেন, ঘটনাস্থল সদর থানা এলাকায় নয়। তাই মামলাটি এ থানায় নথিভুক্ত করা যাবে না। ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসগুলো রামু এলাকায় খোয়া গিয়ে থাকলে সেই থানায় গিয়ে মামলা করা যাবে বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি চাইলে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করতে পারেন।’
এর জবাবে শিপ্রা ওসিকে জানান, পুলিশের মামলায় জামিন পাবার পর থেকে তার বসবাস ছিল সৈকত এলাকার জলতরঙ্গ রিসোর্টে। তা সদর থানার আওতায়। এ কারণে তিনি সদর থানায় মামলা করতে এসেছেন। এরপরও ওসি মামলাটি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।
কাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে এসেছিলেন, জানতে চাইলে আইনজীবী জানান, সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার (এসপি) মোস্তাফিজুর রহমান ও পিবিআইএর এসপি মিজানুর রহমান শেলিসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনের নামে মামলা করতে চান শিপ্রা।
মামলা না নেয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি খাইরুজ্জামান বলেন, শিপ্রা দেবনাথের মালামাল খোয়া যাবার ঘটনাস্থল রামু থানার অন্তর্গত। তাই তার আইনজীবীকে পরামর্শ দিয়েছি, সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করতে।
পুলিশের মামলায় জেল থেকে ছাড়া পাবার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শিপ্রা দেবনাথের ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে পোস্টকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করবেন বলে এক ভিডিওবার্তায় ঘোষণা দিয়েছিলেন শিপ্রা দেবনাথ। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার চেয়ে শিপ্রা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
নিহত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদের সফরসঙ্গী ও রাজধানীর স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিপ্রা দেবনাথ ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘আমি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অষ্টম সেমিস্টারে অধ্যয়নরত। এবং আমি একজন ফ্রিল্যান্সার মিডিয়াকর্মী। আজ একটি নৃশংস ঘটনা দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশবাহিনী আমাদের গর্ব। অথচ ৩১ জুলাই রাতে এই বাহিনীর কুখ্যাত ওসি প্রদীপ ও তার সহচর ইন্সপেক্টর লিয়াকত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে ঠা-া মাথায় গুলি করে হত্যা করে।’
পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস নিয়ে যাবার অভিযোগ করে শিপ্রা বলেন, ‘মেজর সিনহা হত্যাকা-ের পর রাতে এসে আমাদের কটেজ থেকে পুলিশ আমাদের দুটি মনিটর, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ক্যামেরা, লেন্স, তিনটি হার্ডড্রাইভ এবং আমাদের ফোন ডিভাইস সব নিয়ে যায়। জব্দ তালিকায় যার কোনোটিরও কোনো উল্লেখ নেই। আমি জানি না, এখন কীভাবে বা কার কাছে সেসব ফেরত চাইব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পারসোনাল প্রোফাইল ও ডিভাইস থেকে সেসব বিভিন্ন ছবি চুরি করে কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের দায়িত্বশীল পুলিশ অফিসারই ফেসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন। আমার নামে খোলা হয়েছে ফেক ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আইডি। আমার ব্যক্তিজীবনকে যারা অসহনীয় করে তুলেছেন বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও তৈরির মাধ্যমে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আমি তথ্যপ্রযুক্তির ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব, কথা দিলাম।’
‘আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে এভাবে আমার ব্যক্তিগত জীবনকে নিগৃহীত করার প্রচেষ্টা বাংলাদেশের আইনে কি শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়? আমি সমস্ত পুলিশ বাহিনীকে দায়ী করছি না। এখানে অনেক সৎ অফিসারও রয়েছেন। কিন্তু এরূপ হত্যাকারী কর্মকর্তা এবং একজন নারীকে সামাজিক মাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপনকারী অসুস্থ মানসিকতাসম্পন্ন কিছু পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় না আনা হলে, এই কলঙ্কের দায়ভার জাতি সম্পূর্ণ বাহিনীর ওপর ন্যস্ত করবে।’
শিপ্রা দেবনাথ আরও বলেন, ‘একজন মানুষ হত্যাকে ধামাচাপা দেবার জন্য আমার টুঁটি চেপে ধরে আমাকে আত্মহননের দিকে ঠেলে দিলে লাখো তরুণ-তরুণী এর প্রতিশোধ নেয়া থেকে নিশ্চয়ই বিরত থাকবে না।’
এ ভিডিওবার্তা ছাড়ার একদিনের মাথায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করতে সদর থানায় যান শিপ্রা দেবনাথ। সেখানে মামলাটি গ্রহণ না করে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হলো।


















































