সম্প্রতি একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, দেশে প্রতিদিন ২ হাজার ২০০ নতুন পরিবার গঠিত হচ্ছে। ফলে বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, চাচা-চাচি নিয়ে একসঙ্গে যৌথভাবে থাকা-খাওয়ার মতো পরিবার কমে যাচ্ছে। অণুপরিবার (নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি) অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী ও তাঁদের সন্তান নিয়ে ছোট পরিবারের সংখ্যাই এখন বেশি। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী দেশে খানার সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩০। পরে ২০২২ সালের জনগণনায় খানার সংখ্যা বেড়ে হয় ৪ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার ৫১। অর্থাৎ ১১ বছরে নতুন পরিবার বা খানা হয়েছে ৮৮ লাখ ৩৬ হাজার ৪২১টি। এর অর্থ দেশে প্রতিদিন ২ হাজার ২০০ নতুন পরিবার হতে দেখা যাচ্ছে।
পরিবারের সংখ্যা বাড়লেও এর আকার দিন দিন ছোট হতে দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ পরিবারের গড় সদস্যসংখ্যা কমে আসছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৩ সালের বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অনুসারে দেশের পরিবারগুলোতে গড় সদস্যসংখ্যা ৪ দশমিক ২। তবে একজন জনসংখ্যাবিদ বলেছেন, বর্তমানে সদস্যসংখ্যা ৪ বা তার চেয়ে সামান্য কম।
পরিবারের আকার যে ছোট হয়ে আসছে, তা দেখা যায় বিবিএসের পরিসংখ্যানে। ২৮ বছর আগে ১৯৯৪ সালে পরিবারে গড়ে সদস্যসংখ্যা ছিল ৫ দশমিক ৪। ২০০৪ সালের জরিপে দেখা যায়, সদস্যসংখ্যা ৫। ২০২২ সালে দেখা যাচ্ছে, পরিবারের সদস্য কমে ৪ জনে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে শিশু ও প্রবীণ জনগোষ্ঠীর ওপর। যদিও পরিবারের এই পরিবর্তন ভালো না মন্দ, তা নিয়ে সমাজে ও রাষ্ট্রে আলোচনা এখনো কম। তবে দেশে পরিবার ছোট হয়ে আসার কিছু প্রভাব নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা হতে দেখা গেছে। অণুপরিবারে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়। এ ধরনের পরিবারে শিশুদের দেখাশোনা ও প্রবীণদের যত্ন নেওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমে শিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র ও প্রবীণদের জন্য বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও শিশুদের দিবাযত্ন কেন্দ্র ও বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠছে। তবে দুটি ক্ষেত্রেই ধীরগতি লক্ষ করা যায়।
পরিবার ছোট হলে সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও অনেক। এখন মানুষের মধ্যে ‘প্রাইভেসি’ নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। সে সঙ্গে প্রচুর নারী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করায় আলাদা থাকার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণে মানুষ আত্মকেন্দ্রিকও হয়ে পড়ছে। আর যৌথ পরিবারে না থাকার কারণে শিশুদের দেখাশোনার সমস্যা হয়। অনেক সময় বাবা-মা যথেষ্ট সময় দিতে না পারার কারণে সন্তানেরা বেপথু হয়ে পড়ে। অর্থাৎ ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় হোক আমরা দিনদিন সে পরিণতির দিকেই ধাবিত হচ্ছি।
এ মুহূর্তের সংবাদ