সিএমএম কোর্টের বিচারকদের একযোগে এজলাস ত্যাগ

আদেশ দেওয়া নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডা

নিজস্ব প্রতিবেদক »

একটি সিআর মামলার অভিযোগ শুনানির সময় বিচারকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান বাদী পক্ষের আইনজীবী। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) চট্টগ্রাম দ্বিতীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহর আদালতে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ তুলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সব বিচারকরা এজলাস ছেড়ে নেমে যান। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভও করছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহর আদালতে একদল আইনজীবী একটি সিআর মামলা অভিযোগ জমা দেন। নির্ধারিত সময়ে ওই মামলার শুনানি হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পিপি মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী।

শুনানিতে আইনজীবীরা মামলাটি সরাসরি এফআইআর অর্থাৎ থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ডের আদেশ দেওয়ার জন্য বিচারককে চাপ দেন। বিচারক মামলার অভিযোগ সংক্রান্ত নানা বিষয় এবং আসামিদের বিষয়ে জানতে চান। কিন্তু বাদী বিচারকের সব উত্তর যথাযথ দিতে পারেননি। কিন্তু তারপরও বাদীপক্ষের আইনজীবীরা মামলাটি এফআইআর হিসেবে রেকর্ডের আদেশ দেওয়ার জন্য চাপ দেন। একপর্যায়ে আইনজীবী এবং বিচারকের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। বিব্রত হয়ে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহ এজলাস ছেড়ে নেমে যান। বিষয়টি জানাজানি হলে অন্যান্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটরা এজলাস ছেড়ে নেমে যান।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) এএএম হুমায়ন কবীর বলেন, সিআর মামলার শুনানিতে একজন বিচারকের সঙ্গে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। যতটুকু শুনেছি বিচারক বাদীকে অভিযোগ ও আসামিদের বিষয়ে নানা প্রশ্ন করেন। কিন্তু বাদী সদুত্তর দিতে পারেননি। তারপরও আইনজীবীরা মামলাটি এফআইআর আদেশ দেওয়ার জন্য দাবি জানান। এ নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকের বাগবিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে বিচারক এজলাস ছেড়ে নেমে যান এবং পরে সব মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটরা এজলাস ছেড়ে নেমে যান।

ঘটনার বিষয়ে আইনজীবী আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, ১৭ জুলাই মুরাদপুরের ঘটনায় আহত সোয়েব ইমরানের একটি মামলার আবেদন নিয়ে আমরা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ এর আদালতে যাই।

বাদীর পিঠে এখনো গুলির ক্ষত আছে। সব জানিয়ে মামলাটি যাতে থানায় এফআইআর হিসেবে নেওয়া হয়, সেই আদেশ চেয়েছিলাম। এরপর নিয়ম অনুসারে বাদী শপথ নিয়ে আদালতকে ১২-১৪ জন আসামির নাম বলেন। কিন্তু বিচারক বাদীর কাছে সকল আসামির নাম জানতে চান।

জেলা পিপি আশরাফ বলেন, তখন আমি বলি, এত নাম বলা সময়ের ব্যাপার। ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের নাম দেওয়া হয়েছে। সব নাম তো আসামি বলতে পারবে না। এরপর আবারও আদেশ চাই।

এরপর বিচারক বলেন, আমার কাজ আমাকে করতে দেন।’ তারপর তিনি মামলার আবেদনটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে আদেশ দেন। আদেশ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞতাও জানাই। এসময় তিনি বলেন, ‘আমার কোর্টে জোর খাটানোর চেষ্টা করবেন না’। তখন আমি বলি, জোর কোথায় খাটালাম?

আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ বলেন, এরপর এজলাস থেকে নেমে তিনি সিএমএম (মুখ্য মহানগর হাকিম) মহোদয়ের কাছে গেছেন। তারপর সিএমএম আদালতের সব বিচারক নেমে গেছেন।

আশরাফ চৌধুরী  আরও বলেন, ওনার (ম্যাজিস্ট্রেট) বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। সমিতির পক্ষ থেকে আমরা ওনার আদালত বর্জন করলাম। সিএমএম মহোদয়কে দুদিন আগেও টেলিফোনে আমি জানিয়েছি, এই ম্যাজিস্ট্রেট মিসবিহেভ করেন। এই সপ্তাহর মধ্যে উনাকে এখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে। তা না হলে আমরা আদালত বর্জন করব।

বেলা পৌনে ২টায় বিক্ষোভরত আইনজীবীরা মুখ্য মহানগর হাকিম মো. রবিউল আলমের খাস কামরায় আলোচনায় বসেন।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মহানগর হাকিম অলি উল্লাহর আদালতে মামলার বাদীর আইনজীবীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডার ঘটনায় মহানগর হাকিমকে ‘আপাতত’ ছুটিতে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা। তাৎক্ষণিকভাবে তারা বিচারককে বদলির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন এবং পরে  মুখ্য মহানগর হাকিম মো. রবিউল আলম এবং মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে  বৈঠকে বসেন আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ ।

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন,  ‘মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ আমাদের সেক্রেটারির সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তাতে আইনজীবীরা সংক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমরা বলেছি, আপাতত ওনাকে ছুটিতে পাঠাতে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন দেখা যাবে। কাল থেকে (বুধবার) আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে। কোনো সমস্যা হবে না আর।’

এদিকে মহানগর দায়রা জজ ও মুখ্য মহানগর হাকিমের সঙ্গে আইনজীবী সমিতির সভার পর গতকাল বিকেলে আবার বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেন মহানগর হাকিমরা।

৫ অগাস্টের ছাত্র অভুত্থানের পর ১৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম আদালতের আগের পিপি-এপিপিদের বাদ দিয়ে নতুন ৩৪৬ জন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তখনই জেলা পিপির দায়িত্ব পান আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী।